ইংল্যান্ডে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বলে একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ওই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মহামারিটি ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে এবং এখন প্রতি নয় দিনে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, যুক্তরাজ্য ‘জটিল পর্যায়ে’ আছে এবং ‘বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে’।
তারা বলেন, ফ্রান্স ও জার্মানি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার তার আঞ্চলিক কৌশলকে আঁকড়ে ধরেছে।
বিশ্লেষকেরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যুক্তরাজ্য সংক্রমণের চূড়ায় দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে। সেটি হবে এই বসন্তেই।
‘রিয়েক্ট -১’ শিরোনামের বিশ্লেষণটি অত্যন্ত প্রভাবশালী এ কারণে যে, এটি দেশটির করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্যভিত্তিক মূল্যায়ন।
এই বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইংল্যান্ডের প্রতিটি অঞ্চলে ও সব বয়সের মানুষের মধ্যেই করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।
উত্তরাঞ্চলে সংক্রমণের হার এখন সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণাঞ্চলেও সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
বিশ্লেষকেরা ১৬ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার জন্য নেয়া নমুনার সঙ্গে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত নেয়া নমুনার তুলনা করেন। তাতে কয়েকটি বিষয় বেরিয়ে এসেছে।
- সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতি ৭৮ জনে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
- ইয়র্কশায়ার ও হামবারে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ দুটি জায়গায় প্রতি ৩৭ জনে একজন সংক্রমিত হয়েছে। এরপরে রয়েছে ইংল্যান্ডের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল।
- ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষেরা আগের চেয়ে তিন গুণ বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষেরা দ্বিগুণ আক্রান্ত হয়েছেন।
- প্রতি নয় দিনে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে।
- মাত্র এক মাস আগে উত্তর ইংল্যান্ডে যেমনটি দেখা গিয়েছিল, একইভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডে তরুণরা সংক্রমিত হচ্ছে।
- ৯৬ হাজার মানুষ প্রতিদিন সংক্রমিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের একজন অধ্যাপক স্টিভেন রিলে বলেন, এই পরিস্থিতি খুবই হতাশাজনক। বিশ্লেষণে যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলো যথেষ্ট নয়।
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের হার সত্যিই খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমাদের ক্রিসমাসের আগেই পরিবর্তন আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সংক্রমণে রোধ করতে জনগণকে নিয়মগুলো আরও ভালোভাব অনুসরণ করতে হবে অথবা সরকারকে আরও কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে হবে।
অধ্যাপক পল ইলিয়ট নামের আরেক বিশ্লেষক বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় ঢেউয়ের একটি জটিল পর্যায়ে আছি এবং সংক্রমণের উচ্চ হারের কারণে আরও অনেক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হবে ও প্রাণহানি হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভাইরাসের বিস্তার রোধে আমাদের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিতে হবে।’
এই বিশ্লেষণ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাঙ্গিলার অধ্যাপক পল হান্টার বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘সামনে সত্যিই একটি কঠিন শীত আসতে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো অলৌকিক ঘটনা না ঘটলে আমরা এক-দু্ই সপ্তাহে সংক্রমণের চূড়া ছাড়িয়ে যাব। তবে আমি এ ব্যাপারে বাজি ধরছি না।’
এডিনবরাহ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইগর রুডান বলেন, ‘রিএ্যাক্ট -১’ বিশ্লেষণকে ‘খুব সঠিক ও নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এটি দেখিয়েছে যে এখন করোনার ‘খুব বড় দ্বিতীয় ঢেউ’ চলছে।
সূত্র: বিবিসি