গ্রেফতার, ভয়ভীতি দেখিয়েও সরকারবিরোধী আন্দোলন কোনোভাবেই দমাতে পারছে না থাইল্যান্ড সরকার।
স্থানীয় সময় শনিবার ও রোববার তরুণদের নেতৃত্বে হাজার হাজার গণতন্ত্রপন্থি মানুষ রাজধানী ব্যাংককসহ প্রায় ২০টি প্রদেশে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
নির্বাচন, নতুন সংবিধান ও রাজতন্ত্র সংস্কারের দাবিতে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে টানা আন্দোলন করছেন তারা।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ২৩ বছর বয়সী পেরাকার্ন তাংসামৃতকুল বলেন, ‘আমি সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলাম না। তবে আজ আমাদের কেন বিক্ষোভ করা উচিত, তা জানি। আমাদের সবারই মুখ খোলা উচিত।’
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচার নেতৃত্বে দেশটির সেনা-সমর্থিত সরকার চলমান আন্দোলন দমাতে নানা ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু পরিবর্তনের ডাক প্রতিদিনই শক্তিশালী হচ্ছে।
কয়েক দশক ধরে শহুরে অভিজাত ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত থাইল্যান্ডের সমাজ। জনগণের মধ্যে ক্ষোভের বড় কারণ সম্পদের ব্যাপক বৈষম্য। এ কারণেই চলমান বিক্ষোভ অন্য যেকোনো সময়ের গতানুগতিক বিক্ষোভকে ছাড়িয়ে গেছে।
ব্যাংককে বিজয় স্মৃতিস্তম্ভে রোববার অনুষ্ঠিত সমাবেশে অংশ নেয়া ৩০ বছর বয়সী এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, তরুণ প্রজন্মের সাহস তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। দেশে বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত, এই বিশ্বাসে তিনি ও বিক্ষোভকারীরা ঐক্যবদ্ধ।
থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় নেতারা বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু রাজতন্ত্র অনুমোদিত সামরিক অভ্যুত্থান বা বিচারিক কৌশলে পরে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।
রাজতন্ত্র রক্ষা করাই ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের প্রধান নিয়ামক ছিল। এর পরই দেশটি থেকে গণতন্ত্র বিদায় নেয়। সে সময় ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত নতুন নির্বাচনের দাবিকে প্রত্যাখান করেন।
দেশটির সেনাপ্রণীত সংবিধানে বলা আছে, সিনেট সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হবে।
গত কয়েক বছরে সেনাবাহিনী ও রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলেছেন, তাদের গুম, হত্যা বা কারাদণ্ডের শিকার হতে হয়েছে।
শনিবার বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কেমিক্যালযুক্ত জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরে ৩৮৬ জন চিকিৎসক প্রতিবাদ জানিয়ে এক চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা পর ডা. জারোসদাও রিমফানিতচায়াকিত নামের এক সার্জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
মংকুতওয়াতানা হাসপাতালের পরিচালক মেজর জেনারেল রিয়েনথং নান্না বলেন, ‘শত্রু আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের হাসপাতালে ভর্তি না করার নির্দেশনা আছে।’
বৃহস্পতিবার পাঁচ বা ততধিক মানুষের জমায়েত ও ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর’ সংবাদ প্রকাশ বা অনলাইন ম্যাসেজ নিষিদ্ধ করে ডিক্রি জারি করে থাইল্যান্ড সরকার।
এরপরও প্রতিদিনই নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে রাস্তায় নামছেন আন্দোলনকারী। চলছে ব্যাপক ধর-পাকড়।
থাই ল’ইয়ারর্স ফর হিউম্যান রাইটস নামের একটি সংস্থা জানায়, গত পাঁচ দিনে ৮০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস