তাবলিগ জামাত ইস্যুতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় সরকার। সংবাদমাধ্যমগুলো এটিতে সাম্প্রদায়িক রং চড়াচ্ছে, এমন অভিযোগে করা মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের দাখিল করা হলফনামাকে ‘প্রতারণাপূর্ণ ও নির্লজ্জ’ আখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের বেঞ্চে বৃহস্পতিবার জমিয়তে উলেমা-এ-হিন্দের দায়ের করা পিটিশনের ভিত্তিতে শুনানি ছিল।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজে তাবলিগ জামাতের জমায়েতকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে, যাতে একে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়া যায়। তাতে কেন্দ্রের দাখিল করা হলফনামা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।
ভারতে করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক পর্বে ১ মার্চ থেকে তাবলিগ জামাতের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল ২১ দিনের। দক্ষিণ দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিনে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেশ-বিদেশ থেকে এসেছিলেন ৮ হাজারের বেশি তাবলিগ জামাত সদস্য। ১৩ মার্চ দিল্লির রাজ্য সরকার করোনা সংক্রমণ রোধে সভা-সমাবেশ-ধর্মীয় জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২৯ মার্চ দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজ থেকে ২ হাজার ৩৬১ জনকে বার করে দিয়েছিল পুলিশ। তখন দেশে করোনা সংক্রমণ সবে ছড়াতে শুরু করেছে।
সে সময় দিল্লির সেই ঘটনাকে ঘিরে দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। গত ৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফেই জানিয়ে দেওয়া হয়, দেশের ৩০ শতাংশ করোনা সংক্রমণের সঙ্গে তাবলিগ জামাতের যোগসূত্র রয়েছে। অবশ্য ৫ এপ্রিল সারা দেশে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৭৪ জন। মৃত্যু হয়েছিল মোট ৭৭ জনের।
জমিয়তে উলেমা ই হিন্দ-সহ কয়েকটি সংগঠনের অভিযোগ, করোনা সংক্রমণের সঙ্গে ওই ঘটনাকে ঘিরে ‘সাম্প্রদায়িক ঘৃণা’ ছড়াতে শুরু করে সংবাদমাধ্যমের একাংশ। গত ৬ এপ্রিল জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দ সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে তাবলিগ জামাত ইস্যুতে। এরপর ৭ আগস্ট কেন্দ্র হলফনামা জমা করে শীর্ষ আদালতে। এদিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতাকে ভর্ৎসনা করে বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের এক জুনিয়র অফিসার হলফনামা তৈরি করেছেন। তাতে অপ্রয়োজনীয় এবং অবাস্তব তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে। বিরক্ত হয়ে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় সচিব স্তরের কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে হলফনামা জমা দিতে বলেছে। বলা হয়েছে, তাতে যেন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে কেন্দ্রের পদক্ষেপের বিস্তারিত বর্ণনা থাকে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এইভাবে আদালতের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যায় না। জুনিয়ার অফিসারকে দিয়ে হলফনামা তৈরি করা হয়েছে। এটা প্রতারণামূলক এবং এতে বাজে গণমাধ্যম প্রতিবেদন নিয়ে মামলাকারীর অভিযোগের উল্লেখই নেই।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের অমত থাকতেই পারে। কিন্তু কীভাবে বলতে পারেন, ভুল তথ্য পেশ করেনি সংবাদমাধ্যম? মন্ত্রণালয়ের সচিব যেন ঠিকঠাক হলফনামা পেশ করেন।‘
জামাতের তরফে আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে জানিয়েছেন, কেন্দ্র তার হলফনামায় জানিয়েছে, মামলাকারী মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করেছেন। এতে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের আরও দুই বিচারক বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং বিচারপতি ভি রামাসুব্রহ্মণ্যম জানিয়েছেন, তারাও যেমন স্বাধীনভাবে হলফনামা তৈরি করতে পারে, তেমনি মামলকারীরাও স্বাধীনভাবে তর্ক করতে পারে।
গত ৬ এপ্রিল জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দ সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে তাবলিগ জামাত ইস্যুতে। এরপর ৭ আগস্ট কেন্দ্র হলফনামা জমা করে শীর্ষ আদালতে।