দীর্ঘদিন ধরে সর্বসাধারণের ব্যবহৃত জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস) বা রাস্তাঘাট আটকে অবস্থান বিক্ষোভ করা যাবে না। প্রতিবাদ–বিক্ষোভের জন্য নির্ধারিত স্থানেই তা চালাতে হবে। দিল্লির শাহিনবাগ প্রতিবাদ নিয়ে এক শুনানিতে এ আদেশ দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, রাস্তা অবরোধ করা হলে তা মুক্ত করার দায়িত্ব প্রশাসনের। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, এই বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপের আগে প্রশানের তরফে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক সঞ্জয় কিষান কাউলের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বেঞ্চ এ দিন আলোচিত শাহিনবাগ বিক্ষোভ সম্পর্কিত পিটিশনের শুনানিতে বলেছে, ‘পাবলিক প্লেস অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা যাবে না। মতপার্থক্য ও গণতন্ত্র হাত ধরাধরি করে এগোবে, কিন্তু প্রতিবাদ-বিক্ষোভ নির্দিষ্ট জায়গাতেই হওয়া উচিত। পাবলিক প্লেস অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিন বিচারকের বেঞ্চের অন্য দুই বিচারক হলেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস এবং বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারি।
গত বছর ১২ ডিসেম্বর সংসদে পাস হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)। এরপরই দেশজুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলন বিক্ষোভ জোরালো হয়। সেই আন্দোলনের ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠে দিল্লির শাহিনবাগ। এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মূলত নারীরা।
১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে শাহিনবাগে অবস্থান করেন সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীরা।আন্দোলন চলাকালে গত জানুয়ারি মাসে এই বিক্ষোভস্থল থেকে ৫০ মিটার দূরে এক যুবক শূন্যে গুলি ছোড়ে। প্রতিবাদীদের লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। তবু থামেনি প্রতিবাদ।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইনজীবী অমিত সাহনি শাহিনবাগের রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। এর ওপর শুনানির পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অনির্দিষ্টকাল রাস্তাঘাট আটকে রেখে প্রতিবাদ দেখানো যাবে না। বিক্ষোভ ও মানুষের আধিকারের মধ্যে সামঞ্জস্য হওয়া প্রয়োজন। অবরুদ্ধ রাস্তা ব্যবহারের সম্পূর্ণ অধিকার মানুষের রয়েছে।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে বলেছিলেন, প্রতিবাদ প্রদর্শন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু তাতেও যুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
ভারতে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় গত ২৩ মার্চ দিল্লি পুলিশ শাহিনবাগ থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে দিল্লির সঙ্গে নয়ডার সংযোগ সড়ক অবরোধ করে প্রায় ৩০০ মহিলাকে সামনে রেখে সিএএ প্রতিবাদীরা শাহিনবাগে বিক্ষোভ দেখান।
শাহিনবাগ থেকে বিক্ষোভকারীদের সরানোর জন্য দুই প্রবীণ আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে, সাধনা রামাচন্দ্রন এবং প্রাক্তন চিফ ইনফরমেশন কমিশনার ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।