ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরাসে দলিত নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে।
মঙ্গলবার হাথরাসের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে করা মামলার শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতির নজরদারিতে হাথরাসকাণ্ডের তদন্ত কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোকে (সিবিআই) হস্তান্তরে জনস্বার্থে একটি মামলা করেন সাবেক বিচারপতি চন্দ্রভান সিং।
অন্যদিকে উত্তর প্রদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও এফআইআর দায়েরের আবেদন জানিয়ে অন্য একটি মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত আরেক বিচারপতি। মঙ্গলবার দুই মামলারই শুনানি হয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে।
সর্বোচ্চ আদালত বুধবারের মধ্যে দলিত তরুণীর ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সাক্ষীদের সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে উত্তর প্রদেশ সরকারের জবাব চেয়েছে।
শুনানির আগে উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকার আদালতে হলফনামা জমা করে জানায়, হাথরাস জেলা প্রশাসন ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে নানা সূত্রে খবর পাচ্ছিল, দিল্লিতে সফদরগঞ্জ হাসপাতালের সামনে যে ধরনা শুরু হয়েছে, তা থেকে অশান্তি ছড়াতে পারে। পুরো ব্যাপারটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অথবা জাতিদাঙ্গার রূপ নিতে পারে।
প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট খবর ছিল, পরদিন সকালে ওই নারীর গ্রামে কয়েক লাখ মানুষ জড়ো হবে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জাতপাতের মানুষ থাকবে; মিডিয়াও থাকবে। এই জমায়েত থেকে বড় ধরনের সহিংসতা শুরু হতে পারে। করোনা সংক্রমণ যাতে না বাড়ে, সে জন্যও সতর্ক হওয়া দরকার ছিল।
হলফনামায় আরও বলা হয়, ‘এমন অস্বাভাবিক ও আপৎকালীন সময়ে জেলা প্রশাসন স্থির করে, তরুণীর বাবা-মাকে বুঝিয়ে রাতেই মৃতদেহের সৎকার করা হবে। যাবতীয় ধর্মীয় বিধি মেনেই মৃতের পারলৌকিক ক্রিয়া করা হয়েছে। পরদিন সকালে যাতে বড় আকারের জমায়েত হতে না পারে, সে জন্য রাতে মৃতদেহ দাহ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের হাথরাস জেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ১৯ বছর বয়সী এক দলিত নারী। উচ্চ বর্ণের চার জন তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। ধর্ষণের ঘটনার দুই সপ্তাহ পর দিল্লির একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই নারীর।
এ ঘটনায় উত্তর প্রদেশ পুলিশ ২১টি মামলা করেছে। এর মধ্যে ছয়টি মামলা হয় হাথরাস জেলায়।
রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগে এই এফআইআরগুলো করে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন জনসভার মাধ্যমে উসকানি দেয়া হয় বলে অভিযোগ পুলিশের।
অন্যদিকে দিল্লির এক সাংবাদিকসহ চারজনকে এই ঘটনায় আটক করে উত্তর প্রদেশ পুলিশ। হাথরাসে ঢোকার মুখে মথুরা টোল প্লাজার কাছে তাদের আটক করা হয়।
রাজ্য প্রশাসনের অভিযোগ, ওই চারজন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া নামের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
এমন বাস্তবতায় হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে হাথরাসের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ৪৭ জন বিশিষ্ট নারী আইনজীবী। তারা দাবি সংবলিত একটি চিঠি ভারতের প্রধান বিচারপতিকে পাঠিয়েছেন।