সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কর উপকণ্ঠে বাস করেন ২০ বছর বয়সী আহমেদ। একটা হার্ডওয়্যার দোকানের বিক্রেতা তিনি।
করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ার পর পরীক্ষা করা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা ভাবতেই পারেন নি আহমেদ। প্রথম কারণ হচ্ছে করোনা পরীক্ষা করার সামর্থ্য তার নেই। আর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়াকে বিপজ্জনক মনে করেছেন তিনি।
আহমেদ বলেন, ‘কোয়ারেন্টিনে থাকতে ভয় পাচ্ছিলাম। এ ছাড়া হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা পাবো কি না সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল।’
আহমেদ হাসপাতালে না গিয়ে নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা পরামর্শ নেন।
শুধু আহমেদই নন, তার পরিচিত কেউই করোনা পরীক্ষা করাননি। কারণ সিরিয়ায় সরকার পরিচালিত মেডিকেল সেন্টারে করোনা পরীক্ষা করাতে ২০ হাজার ৭৯০ টাকা লাগে যা তাদের মাসিক বেতনের থেকে অনেক বেশি।
সরকারি ভাষ্যমতে, সিরিয়ায় এ পর্যন্ত চার হাজার ৩৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২০৫ জনের। কিন্তু চিকিৎসক, বাসিন্দা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি পরিসংখ্যানে সঠিক তথ্য উঠে আসে না।
লন্ডনভিত্তিক এনজিও চ্যাথাম হাউজের জ্যেষ্ঠ কনসাল্টিং ফেলো ও সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাকি মেহচি বলেন, ‘করোনা সংক্রান্ত সরকারি পরিসংখ্যান ও প্রকৃত পরিসংখ্যানের মধ্যে অনেক পার্থক্য। সম্পদ ও সক্ষমতার অভাবে এটা হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক অস্থিরতা কমাতেও এমনটা করা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দামেস্কর এক হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালে যাওয়ার চেয়ে মানুষ মরে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করছেন।’
তিনি জানান, অনেকে তার কাছে চিকিৎসা পরামর্শ চান। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী না থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারছেন না তিনি। ভালো মানের একটি মাস্কের দাম ৮৪৫ টাকা। মাস্কের জন্য এত টাকা খরচ করা তার পক্ষে সম্ভব না।
প্রায় ১৬ হাজার মাসিক বেতনের ওই চিকিৎসক বলেন, ‘ভাবতে পারেন, একজন ডাক্তারের মাস্ক কেনার সামর্থ্য নেই?’
নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়। এতে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়েছে। হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য উপকরণ, কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনার দশা করুণ।
যুদ্ধের কারণে অনেক চিকিৎসক-নার্স দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সিরিয়া সরকার।
সূত্র: আল জাজিরা