করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও অবজ্ঞামূলক মন্তব্য করে এবার নিজেই সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চীনে প্রথম করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর ট্রাম্প একে চীনা ভাইরাস বলে আখ্যায়িত করেন। ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য দেশ মাস্ক পরার ওপর জোর দিলেও প্রথম থেকেই ট্রাম্প এর বিরোধিতা করে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেন। নিজে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্কিত নানা মন্তব্য করেছেন তিনি।
জানুয়ারি ২৪: করোনাভাইরাস চীন তৈরি করেছে দাবি করে টুইট করেন ট্রাম্প। পরবর্তীতে একে চীনা ভাইরাস বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
ফেব্রুয়ারি ১০: চীন থেকে করোনাভাইরাস আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন দাবি করে ট্রাম্প বলেন, আমরা হাজার হাজার করোনা রোগী পাচ্ছি না। আমরা দেখব কী হয়। তবে যদি বলেন, আমরা কি এটা বন্ধ করতে পেরেছি কি না, তা হলে বলব, হ্যাঁ।
ফেব্রুয়ারি ১০: এপ্রিলে উষ্ণ মৌসুম শুরু হলেই করোনা বিশ্ব থেকে হারিয়ে যাবে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অনেকে বলছেন তাত্ত্বিকভাবে এপ্রিলে যখন গরম পড়া শুরু করবে, তখন এটা অলৌকিকভাবে হারিয়ে যাবে।
ফেব্রুয়ারি ২৬-২৭: করোনা সাধারণ ফ্লুর মতো জানিয়ে হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, এটা ব্যাপকমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ুক আর না পড়ুক আমরা তার জন্য খুব ভালোভাবে প্রস্তুত। এটি একটি ফ্লু, সাধারণ ফ্লু।
এক দিন পরই তিনি বলেন, এটা হারিয়ে যাবে, যে কোনো দিন মিরাকলের মতো এটা হারিয়ে যাবে।
এপ্রিল ৩: মাস্ক পরার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরামর্শের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, আমি এটা পরতে চাই না। ধরুন, আমি ওভাল অফিসে (প্রেসিডেন্টের অফিস) নিজের ডেস্কে বসে আছি। মাস্ক পরা থাকলে যে কেউ আমাকে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্বৈরাচার, রাজা বা রাণী যা খুশি ভাবতে পারেন। আমি এটা ভাবতেই পারছি না, কোনোভাবেই না।
এপ্রিল ২৩: হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলনে জীবাণুনাশক মানুষের শরীরে পুশ করা যায় কি না তা জানতে চান ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি দেখেছি জীবাণুনাশক মাত্র এক মিনিটে ভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম। এটা কোনোভাবে মানুষের শরীরে পুশ করা গেলে ভালো হতো।
জুন ১৫: হোয়াইট হাউসে এক গোলটেবিল বৈঠকে পরীক্ষার সংখ্যা কমলে করোনা রোগীর সংখ্যাও কম থাকবে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যদি আমরা এখন করোনার পরীক্ষা বন্ধ করে দিই, তাহলেই রোগীর সংখ্যা কমে যাবে।
১৭ জুন: করোনা খুব দ্রুত হারিয়ে যাবে জানিয়ে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, আমরা করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের খুব কাছাকাছি আছি। তবে এটা খুব একটা দরকার নাও হতে পারে, কারণ ভাইরাস এরইমধ্যে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে।
জুলাই ১৯: যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুহার সবচেয়ে কম জানিয়ে ফক্স নিউজের সাংবাদিক ক্রিস ওয়লেসকে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুহার অনেক কম, সম্ভবত এটাই পৃথিবীর সর্বনিম্ন।
সেপ্টেম্বর ২৯: আক্রান্ত হওয়ার মাত্র দুই দিন আগে জো বাইডেনের সঙ্গে প্রথম নির্বাচনি বিতর্কে ট্রাম্প বলেন, তিনি তখনই মাস্ক পরবেন যখন প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বাইডেনকে বিদ্রুপ করে বলেন, আপনি সবসময়ই তাকে (বাইডেন) মাস্ক পরা অবস্থায় দেখবেন। তিনি ২০০ ফিট দূর থেকে কথা বললেও সবচেয়ে বড় মাস্ক পরে হাজির হবেন।
সূত্র: আল জাজিরা