উপকূলে এসে প্রাণ গেল ৩৮০ তিমির
-
নিউজবাংলা ডেস্ক
-
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৭:১১
-
সমুদ্রের গভীরে লম্বা পাখনার এক ধরনের তিমির বাস। 'পাইলট তিমি' নামে ডাকা হয় এগুলোকে। দৃঢ় সামাজিক বন্ধনের কারণে এরা বিশেষভাবে পরিচিত। ঘুরে বেড়ায় দলবদ্ধ হয়ে। শান্ত স্বভাবের তিমিগুলো উপকূলের দিকে খুব একটা আসে না।
কয়েক দিন আগে এই পাইলট তিমিদের একটি দল ভুল করে চলে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার সমুদ্র উপকূলে। সেই আসাই কাল হলো তাদের।
দলবেঁধে আসা তিমিদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৩৮০টি। বাকি ৭০টিকে নিরাপদে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে পেরেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
গত সোমবার ম্যাককুয়ারি নামের বন্দরের কাছে উদ্ধারকর্মীরা আটকে পড়া তিমিদের প্রথম দলটির খোঁজ পান। বুধবার তারা উদ্ধার করা তিমিগুলোকে সাগরে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হন।
পরিবেশকর্মীদের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের আটকে পড়ার তৃতীয় বৃহত্তম ঘটনাটি ঘটে তাসমানিয়ায়।
ম্যাককুয়ারি বন্দর পাইলট তিমিদের আটকা পড়ার ‘হটস্পট’ হিসেবে পরিচিত। অগভীর ও বালুময় উপকূলের কারণে তিমিরা এখানে আটকা পড়ে।
নিউজিল্যান্ডের ম্যাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তন্যপায়ী সামুদ্রিক প্রাণী গবেষক ড. এমা বেটি জানান, ভূপ্রাকৃতিক গঠনের কারণে জায়গাটি তিমিদের জন্য মরণফাঁদ। তিমিরা এ ধরনের পরিবেশের সঙ্গে অপরিচিত। জোয়ার-ভাটাও তিমিদের আটকে পড়ার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।
বেটি বলেন, 'তিমিরা প্রতিধ্বনির সাহায্যে চলাচল করে। সমুদ্রের অগভীর ঢালে এই পদ্ধতি ঠিকমতো কাজ করে না। এ কারণে তীরের দূরত্ব বুঝতে ভুল হয় তাদের। শেষমেশ এরা তীরে এসে বালুতে আটকা পড়ে যায়।'
বেটির মতে, ম্যাককুয়ারির তিমিরা হয়তো তীরের কাছে এসে দিক হারিয়ে ফেলেছিল। এদের কেউ তীরের দিকে আসতে শুরু করলে বাকিরাও হয়তো তাকে অনুসরণ করেছিল।
তিমিগুলোকে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিলেন তাসমানিয়ার জীববিজ্ঞানী ক্রিস কার্লিয়ন। তিনি ধারণা করছেন, তারা খাবারের খোঁজে উপকূলের কাছে চলে এসেছিল। এদের মধ্যে কেউ হয়তো বিপদ সংকেত পাঠায়। পরে অন্যরাও এসে বালুতে আটকা পড়ে।
উদ্ধার করতে এসে বেশির ভাগ তিমিকেই মৃত অবস্থায় দেখতে পান উদ্ধারকর্মীরা। পরে উদ্ধার অভিযানের বদলে কর্মীদের মৃত তিমিগুলোকে সমাহিত করার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
সাথীদের টানে ফিরে আসা
উদ্ধারকর্মীরা জানান, প্রথম দিনে কিছু জীবিত তিমিকে সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়। এদের মধ্যে দুটি তিমি আবারও তীরের দিকে ফিরে আসে। আটকে পড়া সাথীদের প্রতি টান থেকেই তারা এমনটি করতে পারে বলে উদ্ধারকর্মীদের ধারণা।
ওই সময় বেশ কিছু ডাকও শুনতে পান উদ্ধারকর্মীরা। এগুলো বাচ্চাদের জন্য মা তিমিদের ডাক বা বিপদ সংকেত বলে মনে করছেন তারা।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, এই তিমিগুলো আসলে বড় মাপের ডলফিন। এরা নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলতে পারে।
সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের মধ্যে পাইলট তিমিরা সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। তারা স্কুইড ও মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। ডুব দিতে পারে সমুদ্রের এক হাজার মিটার গভীর পর্যন্ত। শ্বাস ধরে রাখতে পারে প্রায় আধা ঘণ্টা।
একেকটি দলে ২০-৩০টি করে তিমি থাকে। কখনো প্রায় এক হাজার তিমি মিলে বড় দলও গঠন করে। উদ্দেশ্য হলো, খাদ্য সংগ্রহ ও অন্য প্রজাতির তিমির সঙ্গে প্রজনন এড়ানো। কিছু তিমি থাকে যারা কখনো দল বদলায় না।
সাধারণত স্ত্রী তিমিরাই দলের নেতৃত্ব দেয়। তারা ৪০ বছরের বেশি সময় বাঁচে। পুরুষ তিমিগুলো বাঁচে ৩০ বছরের মতো।
পাইলট তিমিরা প্রতিধ্বনির সাহায্যে যোগাযোগ করে। এর মাধ্যমে তারা খাদ্যের উৎস, বিপদের আশঙ্কা বা কেউ বিপদে পড়লে তাকে সতর্ক করে দিতে পারে।
দলবদ্ধ হয়ে থাকার কারণে তাদের অসুবিধার মুখেও পড়তে হয়। বিশেষত যখন তারা কোনো সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি চলে আসে, তখন প্রতিধ্বনির সাহায্যে যোগাযোগ পদ্ধতি ঠিকমতো কাজ করে না।
পৃথিবীতে এই প্রজাতির কতটি তিমি আছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।