এসএমএ বা স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি একটি দুরারোগ্য বিরল রোগ। পেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মোটর নিউরোন, তা নষ্ট হওয়াই জিনঘটিত এই বিরল রোগের কারণ। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী, টাইপ ওয়ান থেকে টাইপ ফোর পর্যন্ত হয় এসএমএ।
এর ওষুধ বাজারে এলেও তা সাধারণের কেনা সাধ্যাতীত। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। তবে সচেতনতার অভাবে এই রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ টেস্ট এবং চিকিৎসায় আওতায় আসছে না। ফলে চিকিৎসার অভাবেই দেশে অসংখ্য শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
রাজধানীতে বৃহস্পতিবার কিউর এসএমএ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আয়োজিত র্যালি এবং মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি বিরল ব্যাধি দিবস বা রেয়ার ডিজিস ডে উপলক্ষে এই সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সংগঠনটি জানায়, এসএমএ রোগটি বাবা-মায়ের জিনগত সমস্যার কারণে হয়। যদি কোনো দম্পতি এসএমএ ক্যারিয়ার হয় বা এসএমএ রোগ হওয়ার জন্য দায়ী জিন বহনকারী হয়, তাদের বাচ্চার ২৫ শতাংশ আশঙ্কা থাকে এসএমএ রোগ হওয়ার; ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে সুস্থ বাচ্চা হওয়ার, আর ৫০ শতাংশ আশঙ্কা থাকে, সুস্থ বাচ্চা হলেও এসএমএ ক্যারিয়ার হওয়ার।
দেশে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত রোগী ১৬৫ জন। দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফার্মাসিউটিক্যালের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে সংগঠনটি এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে।
এই রোগের ইনজেকশনের দাম প্রায় ২২ কোটি টাকা। এছাড়া দেশে একমাত্র অনুমোদিত ওষুধ রোশ ফার্মার ওষুধ রিজডিপ্লাম। এর প্রতিটি ফাইলের দাম প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অনেক পিতামাতার পক্ষে এসব ওষুধ কেনা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।
২৯ ফেব্রুয়ারি বিরল ব্যাধি দিবসে বাংলাদেশে এসএমএ আক্রান্ত রোগীদের কল্যাণে কাজ করা রোগী এবং অভিভাবকদের একমাত্র সংগঠন ‘কিউর এসএমএ বাংলাদেশ’ এই সচেতনতামূলক র্যালির আয়োজন করে। র্যালিটি দোয়েল চত্বর থেকে শুরু হয়ে আবদুল গণি রোড হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
কিউর এসএমএ বাংলাদেশ এর দাবি:
১. দেশে এসএমএ রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
২. দেশের সব সরকারি হাসপাতালে এসএমএ ডেডিকেটেড কর্নার বা এসএমএ কর্নার স্থাপন করা।
৩. দেশে এসএমএ রোগের প্রকৃত চিত্র জানার জন্য জাতীয়ভাবে জরিপের ব্যবস্থা করা।
৪. বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকারিভাবে এসএমএ রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করা।
৫. এসএমএ রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচি গ্রহণ।
৬. এসএমএ রোগের জন্য অনুমোদিত ওষুধকে ‘অত্যাবশ্যকীয় তালিকাভুক্ত’ করা।
৭. আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজন সাইকোলজিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা করা।