রাজশাহীতে গাছতলায় কুড়িয়ে পাওয়া বরই খেয়ে অসুস্থ হয়ে তিন দিনের ব্যবধানে মারা যাওয়া দুই বোনের মৃত্যুর কারণ নিপাহ ভাইরাস নয়। নমুনা পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে যে, নিপাহ ভাইরাসে তাদের মৃত্যু হয়নি। তবে মৃত্যুর কারণ জানতে আরও সময় লাগবে।
মারা যাওয়া শিশু দুটি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের মনজুর রহমানের সন্তান। ওদের মধ্যে মুনতাহা মারিশার বয়স দুই বছর। আর মুফতাউল মাশিয়ার বয়স পাঁচ বছর।
এদিকে শিশু দুটির মৃত্যুর পর ওদের বাবা-মাকেও হাসপাতালের বিশেষ ওয়ার্ডে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
মনজুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রীর নাম পলি খাতুন। তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকেন।
এদিকে মৃত্যুর কারণ জানতে দুই শিশুর নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ঢাকায়। ওদের বাবা-মায়ের নমুনাও পাঠানো হয়।
নমূনা পরীক্ষার পর আইইডিসিআর যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, রাজশাহীতে বরই খেয়ে অসুস্থ হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু নিপাহ ভাইরাসে হয়নি। অন্য কোনো অজানা ভাইরাসের কারণে শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে। তবে, ঠিক কী কারণে মারা গেছে সেটি জানতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শংকর কে বিশ্বাস রোববার সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘মারা যাওয়া শিশু দুটির নমুনা পরীক্ষায় নিপাহ ভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অজানা এই ভাইরাস নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে আইইডিসিআর। এরপরই এই ভাইরাস সম্পর্কে জানা যাবে।
‘ভাইরাসের ধরন অনুযায়ী পরীক্ষা করতে সময় লাগে। এক্ষেত্রে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে।’
ডা. শংকর বলেন, ‘শিশু দুটির বাবা-মা আইসোলেশনে থাকবেন। ভাইরাস নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপাতত তারা হাসপাতালেই থাকবেন।’
রামেক হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার মো. মনিরুজ্জামান জানান, মারা যাওয়া শিশু দুটির বাবা-মায়ের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। কিন্তু মানসিকভাবে তারা খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছেন।’
প্রসঙ্গত, গাছতলায় পড়ে থাকা বরই কুড়িয়ে খেয়েছিল এই দুই শিশু। রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শনিবার বিকেলে মারা যায় বড় বোন মাশিয়া। এর আগে বুধবার একই লক্ষণ নিয়ে মারা যায় ছোট বোন মারিশা। পরে শিশু দুটির বাবা-মাকে হাসপাতালের নিপা আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
এদিকে দ্বিতীয় মেয়ে মারা যাওয়ার পর আইসোলেশনে নিয়ে আসায় মেয়ের জানাজাতেও যেতে পারেননি তারা। বিকেলে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। বুধবার মারিশার দাফনও সেখানেই হয়েছে।
মনজুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার কোয়ার্টারের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। বুধবার মারিশার জ্বর ও বমি হয়। পরে রাজশাহী সিএমএইচে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
‘এরপর শুক্রবার মাশিয়ারও জ্বর এলে রাজশাহীতে সিএমএইচে নিয়ে আসি। মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোট কালো দাগ উঠতে থাকে। চিকিৎসকেরা সেখান থেকে আমার মেয়েকে রামেক হাসপাতালে পাঠান। রাতে রামেক হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।’