বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রেটিনার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ডায়াবেটিস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ১৯:১১

ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকে নিয়মিত প্রতিবছর একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা রেটিনা বিশেষজ্ঞ দ্বারা চোখের রেটিনা পরীক্ষা প্রয়োজন। এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তের চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম, নিয়মিত ওষুধ সেবন, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা থেকে দূরে থাকা, ধূমপান ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি মেনে চলা উচিত।

বিভিন্ন কারণে ডায়াবেটিসজনিত নানা রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সুশৃঙ্খল জীবন যাপন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ নানা রোগ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ডায়াবেটিসে হার্ট, চোখ এবং কিডনির ওপর প্রভাব পড়ে সব থেকে বেশি। পৃথিবীতে যেসব কারণে মানুষ অন্ধত্ব হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি তার অন্যতম কারণ। ডায়াবেটিসের প্রভাবে অন্ধত্ববরণকে বলা হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।

ডায়াবেটিস চোখের সব অংশের তুলনায় রেটিনার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। চক্ষু চিকিৎসকরা অবশ্যই সকল রোগীদের প্রথমেই ফান্ডাস ফটোগ্রাফি পরীক্ষা করবেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই রোগীর ডায়াবেটিস জনিত রোগ বিশেষত ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, ম্যাকুলার অবক্ষয়, গ্লুকোমা এবং অকোলের রেটিনোপ্যাথি সম্পর্কে জানা যাবে।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডায়াবেটিস এবং রেটিনা বিষয়ক ‘ডায়াবেটিস অ্যান্ড রেটিনা: বিজ্রিং দ্য গ্যাপ’ সাইন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ এ সব কথা বলেন।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ভেট্রিও-রেটিনা সোসাইটি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিস জনিত রোগ প্রতিরোধে জন সচেতনার জন্য সকল চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতার জন্য প্রতিটি পচম্বারে, ব্যানারে, লিফলেট, দেয়াল পত্রিকা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ রোগীরা বিশেষজ্ঞ সেবা নিতে আসলে প্রতিটি চিকৎসকের চেম্বারে আধাঘণ্টা থেকে শুরু করে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকেন। এ সময় তারা ডায়াবেটিস সচেতনতামূলক এসব লিফলেট দেখে রোগীরা কার্যকরভাবে সচেতন হবেন।’

সেমিনারে বলা হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, বিশ্বব্যাপী কর্মজীবী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বাড়ছে। এই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি অন্ধত্বের প্রধান কারণ। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য। ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০৩ মিলিয়ন লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যা ২০৪৫ সালের মধ্যে ১৬১ মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই উদ্বেগজনক বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী সক্রিয় পদক্ষেপ এবং সচেতনতা প্রচারের জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দেয় হয়। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে, যা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির জটিলতা সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো রেটিনায় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে করে। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে এই রক্তনালিগুলো বিভিন্নভাবে প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। রক্তনালিতে ‘পেরিসাইট’ নামের একটি অংশ থাকে, যা ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে রক্তনালির পেরিসাইট ভেঙে যায় এবং রক্তনালি থেকে রক্ত ও রক্তরস বের হয়ে যায়। এই রক্তরস বের হয়ে রক্তক্ষরণ তৈরি করে, যা ‘রেটিনাল হেমোরেজ’ নামে পরিচিত। এই রক্তক্ষরণের আবার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। প্রথম পর্যায়ে এই রক্তক্ষরণ রেটিনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে এই রক্তক্ষরণ রেটিনার বাইরে চলে আসে, যা ‘প্রিরেটিনাল হেমোরেজ’ নামে পরিচিত এবং পরবর্তী ধাপে তা রেটিনার সম্মুখভাগে যে জেলি-ভিট্রিয়াস অংশে প্রবাহিত হয় এবং তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এই পর্যায়টি ‘ভিট্রিয়াস হেমোরেজ বা ইন্ট্রাজেল হেমোরেজ’ নামে পরিচিত। এই ধাপ চলমান থাকলে এক সময় রক্ত, রক্তনালি, ভঙ্গুর রেটিনা ও জেলি একত্র হয়ে ট্র্যাকশন ফোর্স তৈরি করে, যা ভঙ্গুর রেটিনাকে সম্পূর্ণ ছিঁড়ে ফেলে। এই স্টেজটি অ্যাডভান্সড স্টেজ হিসেবে ধরা হয়।

সেমিনারে আরও বলা হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হলো রেটিনা অর্থাৎ চোখের ভেতরের পর্দাসদৃশ অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, যার মাধ্যমে আলো বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত হয়ে মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়। এই সংবেদনশীল পর্দা বা রেটিনা অনেক রক্তনালি দ্বারা বেষ্টিত অবস্থায় থাকে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বাংলাদেশও ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি গ্লোবাল হেলথ রিপোর্ট অনুযায়ী ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (ডিআর), ডায়াবেটিসের একটি মাইক্রোভাসকুলার জটিলতাকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে আলোকপাত করা হয়েছে। যা অবিলম্বে সমাধান না করলে দৃষ্টিশক্তির জন্য যথেষ্ট হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকে নিয়মিত প্রতিবছর একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা রেটিনা বিশেষজ্ঞ দ্বারা চোখের রেটিনা পরীক্ষা প্রয়োজন। এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তের চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম, নিয়মিত ওষুধ সেবন, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা থেকে দূরে থাকা, ধূমপান ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি মেনে চলা উচিত।

এ বিভাগের আরো খবর