‘ডেঙ্গু জ্বরের গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন রোগীর জ্বর ছেড়ে যায়। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী ৪৮-৭২ ঘণ্টা ডেঙ্গু রোগীর ক্রিটিক্যাল সময়। ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ হলো- অনবরত বমি, রক্তক্ষরণ, দুর্বলতা, পেট ব্যথা, ফুসফুসে পানি জমা, শ্বাসকষ্ট। গর্ববতী মা, ক্যান্সার রোগী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করতে হবে।’
রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক মিলনায়তনে ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট ডিলেমা’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে উপাচার্য অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা শুধু যে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা করবে এমন নয়। বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের এতে সম্পৃৃক্ত হতে হবে। সাধারণ মানুষ ধারণা করেন প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলে রক্ত দেয়া লাগে। এজন্য প্লাটিলেট কমলে তারা চিকিৎসককে রক্ত দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। ১০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নামলে রক্ত দিতে হবে কি না সেটি চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন।
‘চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ কোনো অবস্থায় চিকিৎসা প্রটোকল ভাঙ্গা যাবে না। প্রটোকোল অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ফ্লইড ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে যথাযথ সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ওভার ফ্লুইড এবং ফ্লুইডের অভাব রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এমনকী রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় দেশ সেরা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এডাল্ট ৭০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩ জন রোগী মারা গেছে। আমাদের শিশু বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২০০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। যারা সবাই সুস্থ হয়েছে। আমাদের সেবার মান আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রশংসা দেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা করছেন।
‘ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ডেঙ্গুর মশা এডিস নিধনে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এনজিও কর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি পালন করা উচিত।
সেমিনারে বলা হয়, ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রত্ত পরিসঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন নেই, সঞ্চালন করলে রক্ত (হোল ব্লাড) সঞ্চালন করাই শ্রেয়, প্লাটিলেট নয়। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে, তা রেফার করা ঠিক নয়। ডেঙ্গু শক ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে ম্যানেজ করতে হয়। রক্তচাপ কমের রোগীকে রেফার করলে পথেই রোগী খারপ হতে পারে। সুতরাং ডেঙ্গু শকের রোগীকে রেফার না করে ওই হাসপাতালেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আলাদা করে ডাব, পেপে পাতা, পেপে জুস, ড্রাগন ফল বেদানা ইত্যাদি খাওয়ার আলাদা কোনো প্রয়োজন নাই। ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। সিবিসি টেস্টই যথেষ্ট।
এতে বলা হয়, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হয়। কারণ শিশুদের শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা স্পষ্ট করে বলতে পারে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও যে কোনো সময় শিশুরা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে চলে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের যথাযথ মনিটরিং করতে হবে, যাতে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা করা যায়।