ঢাকা দক্ষিণ সিটির করপোরেশেন (ডিএসসি) মশা নিধনে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বনানীর হোটেল শেরাটনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালে এখনও অনেক ডেঙ্গু রোগী আছে। আমাদের ওপর বিরাট প্রেসার। রোগী কমানোর জন্য আমাদের ব্যবস্থাপনা করতে হবে। রোগী কমলেই মৃত্যু কমবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন রোগীর জন্য সরকারের গড়ে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় করেছে সরকার।’
এ সময় দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রাখেন- ‘মশা নিধনে আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?’
‘যেসব স্থানে মশার উপক্রম বেশি সেগুলো ম্যাপিং করছে কি না সিটি করপোরেশন। ওষুধ কতটা কার্যকরী, ওষুধের মিক্সিং ঠিকমতো হয় কি না।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবীর আলোচনা সভায় বলেন, ‘আমরা জানুয়ারি থেকেই মশক নিধনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এডিস মশা নির্মূল করতে এটির উৎস নিধন করতে হবে, তার জন্য জনগণের সম্পৃক্ততা জরুরি। কারণ আমরা বাসাবাড়িতে এডিসের লার্ভা পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওষুধ আমরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ল্যাব আইইডিসি,আর ও প্যান প্রটেকশন উইং-এ ওষুধ টেস্ট করিয়ে সেটা প্রয়োগ করি।’
উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধু বাসাবাড়িতে নয়; নির্মাণাধীন ভবন, ড্রেনেও মশা পাওয়া যাচ্ছে। ক্যান্টনমেন্ট, বসুন্ধরা, ডিওএইচএস- প্রতিটি জায়গায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গণমাধ্যমে ডেঙ্গু সংক্রান্ত অনেক ধরনের ভুয়া নিউজ হচ্ছে দাবি করে এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার বিষয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে পদক্ষেপের বিষয় জানতে চায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের সফলতার একটি বিষয় শেয়ার করে বলতে চাই, তারা পরিবেশজনিত রোগ হিসেবে ঘোষণা করে কমিউনিটি ম্যানেজমেন্টন্টে জোর দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে তারা প্রজনন ধ্বংস করার ব্যাপারে জোর দিয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কিছু অ্যাপস ব্যবহার করছে। পুরুষ এডিসকে তারা ধ্বংস করছে।
‘আমরা তাদের এই বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারি। পাশাপাশি আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক শিশু মৃত্যুবরণ করেছে। আমরা একজনেরও মৃত্যু কামনা করি না। স্কুলে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বর্দন জং রানা বলেন, ‘ডেঙ্গু এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ শুরু করেছে। প্রত্যকেটি সেক্টর থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি দেশের সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। এডিস নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি এনগেজমেন্ট খুবই জরুরি।
‘ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এটা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কাজ করছে। আমরা আশা করছি এটার ভালো একটি ফলাফল পাবো।’
সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খুরশিদ আলম রিহ্যাবের কাছে প্রশ্ন রাখেন, মশা নিধনে এবং লার্ভা পাওয়া গেলে আপনাদের পদক্ষেপ কী আছে?
রিহ্যাবের পরিচালক মাসুদা সিদ্দিকা রোজী বলেন, ‘আমাদের এখানে দুদিনের বেশি পানি জমে থাকার সুযোগ নেই। যেখানেই পানি জমে সেটা আমরা সঙ্গেই সঙ্গে সরিয়ে ফেলি। আশপাশের প্রতিটি জায়গা পরিষ্কার করি। এডিসের লার্ভা পাওয়া গেলে আমরা জরিমানা করি।