বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাসপাতালই যখন ডেঙ্গুর বাহক এডিসের বাসা

  • মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর   
  • ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ২৩:২৬

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চারদিকে ময়লা আর জমে থাকা পানিতে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে মশা, সঙ্গে ছড়াচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ। এ অবস্থায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী, তাদের সেবায় নিয়োজিত স্বজন এবং দর্শনার্থীরাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

রাজধানী ঢাকা ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। দেশের হাসপাতালগুলোতে দিনে দিনে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। অথচ সেই হাসপাতালই হয়ে উঠেছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র।

তেমনই এক চিকিৎসা কেন্দ্র ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এখানে এডিস মশা উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

দেশের অন্য অনেক জেলার মতো ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে ফরিদপুর ও আশপাশের জেলাগুলোর রোগীর ভিড় বাড়ছে এই হাসপাতালে। চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য রোগীকে জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডেঙ্গু সারানোর দায়িত্বে থাকা হাসপাতালটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল উল্টো চিত্র। হাসপাতালটি নিজেই যেন এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র।

হাসপাতালের চারদিকে যেখানে-সেখানে ময়লার স্তূপ। এসব ময়লায় জন্ম নিচ্ছে মশা, সঙ্গে ছড়াচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ। হাসপাতালটির আশপাশে সার্বক্ষণিক ডেঙ্গুর বংশবিস্তারের নির্বিঘ্ন স্থান তৈরি হয়ে থাকছে। তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

এ অবস্থায় রোগীর সেবায় নিয়োজিত স্বজন এবং দর্শনার্থীরাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। শঙ্কার বাইরে নয় হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসব-নার্সসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার পুরো বিষয়টিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তেমন ভ্রূক্ষেপ নেই বলে জানালেন একাধিক রোগী ও তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনরা। হাসপাতালটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা দায়সারা কাজ করেন। আবার কখনও কখনও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

রোগীরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটিতে গেলেও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ ও নোংরা পরিবেশের কাএণ উল্টো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন তারা। এমনটিই জানিয়েছেন এই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া একাধিক রোগীর স্বজনেরা।

একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতাল ও এর আশপাশ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এ সংক্রান্ত কিছু বলতে গেলে লোকবল সংকটের অজুহাত দেখান হাসপাতালের কর্মচারীরা। অনেক সময় তারা রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকে আবার টু-পাইস কামানোর ধান্ধায় নিজের কাজ ফেলে রোগীর ট্রলি টানছেন। বিনিময়ে অনেকটা জবরদস্তিই রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। এ নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতাও দেখা গেছে।

হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া এবং রোগীদের ছাড়পত্র দেয়ার সময় ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের টাকা দিতে হয়- এমন অভিযোগও রয়েছে

এদিকে হাসপাতালটি ঘিরে দালাল চক্র বরাবরই সক্রিয়। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে দালালদের তৎপরতা। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের সামনে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় দালালরা ভিড় জমিয়ে অবস্থান করে।

বিশেষত গ্রামাঞ্চল থেকে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনকে টার্গেট করে দালাল চক্র। দ্রুত ও ভাল চিকিৎসার লোভ দেখিয়ে এবং সহযোগিতার কথা বলে নানামুখী হয়রানি এবং অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা আরেক বিড়ম্বনার কারণ। তারা সময়ে-অসময়ে চিকিৎসকদের চেম্বার ঘিরে ভিড় জমিয়ে রাখেন। এতে করে হাসপাতালে রোগীদের সেবা কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ার অভিযোগ অনেকের করার অভিযোগ করেন তারা।

আবার চিকিৎসক দেখিয়ে ব্যবস্থাপত্র হাতে বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রয় প্রতিনিধিরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। সবারই চেষ্টা- চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে কোন কোম্পানির কী কী ওষুধ লিখেছেন তা দেখে মোবাইল ফোনে ছবি তোলা। এতে করে আরেক ধরনের ভোগান্তির শিকার হন রোগীরা।

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. এনামুল হক অবশ্য এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতাল নিয়মিতই পরিষ্কার করা হয়। অপরিষ্কার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে রোগীরা ওষুধের প্যাকেট, খাবারের অবশিষ্ট অংশ ও নানা ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলে রাখে। এ কারণে মাঝেমধ্যে আমাদের কিছুটা সমস্যা পোহাতে হয়। তবে রোগী ও তাদের স্বজনদের একটু সচেতনতা এ সমস্যার সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’

জলাবদ্ধতা ও আবর্জনার স্তূপ জমে থাকায় তা এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে ওঠার অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেয়ার সময় রোগীর কাছ থেকে টাকা নেয়াসহ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর