বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়েছে ৭ গুণ, আক্রান্ত আরও বেশি

  •    
  • ৯ জুলাই, ২০২৩ ২২:১৬

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অনেক কারণ রয়েছে। বৃষ্টি ও বর্ষাকালকে ডেঙ্গুর সময়কাল বলা হলেও এখন তা বদলে গেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা আচরণ পরিবর্তন করেছে। মশা নিধন কার্যক্রমেও অনেক ঘাটতি আছে।’

মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার হিসাবে ২০২২ সালের প্রথম ৭ মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়েছে ৭ গুণের বেশি। আক্রান্তের হার আরও বেশি, ১১ গুণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ৫৭১। এই সময়কালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০ জন। অথচ চলতি বছরের ৯ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৫৪ জন। আর মারা গেছেন ৭৩ জন।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তে হওয়ার এই প্রবণতা দিন দিন আরও বাড়ছে। প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু থেকে সব বয়সী রোগীই রয়েছে।

গত বছর পুরো জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৯ জন। এ বছর জুলাইয়ের প্রথম ৯ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্র্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা উঠে আসছে আলোচনায়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার সতর্ক বার্তার পরও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ হতাশাজনক।

সংগঠনটি বলেছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যা বলছে

রাজধানীতে এডিস মশার বিস্তারের কথা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও স্বীকার করে নিচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘আমরা মোবাইল কোর্ট নিয়ে যখন মানুষের বাসায় যাই তখন তাদের ফ্রিজের ট্রের পানি, বেডরুম, ছাদবাগান, বেসমেন্ট এসব জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাচ্ছি। মানুষ সচেতন না হলে সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে এডিসের লার্ভা নিধন করা।’

গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ এতোটা বেশি কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি বলব এবারই এডিস সঠিক সময়ে এসেছে৷ গত বছর অনেক দেরিতে এসেছিল। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এডিসের আচরণে পরিবর্তন এসেছে। এতে প্রকোপ বেড়েছে।

‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মানুষের সচেতনতা না বাড়লে এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এডিস মশা যেন বংশবিস্তারের জায়গা না পায় সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘আমরা জনগণের সঙ্গে সংযোগ বাড়াচ্ছি। যেসব বাড়িতে ছাদবাগান আছে সেখানে ড্রোন সার্ভে করে দেশের বাইরে থেকে আনা ওষুধ প্রয়োগ করছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। মাইকিং করেও জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যা বলছে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্যান-ম্যাল ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ইকরামুল হক বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি যে এডিস মশার বংশ বিস্তারে পরিবেশের ভূমিকা মুখ্য। এ বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধি এডিস মশার বংশবিস্তারকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে।

‘বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে শীর্ষ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে। গবেষণা বলছে, দেশের গড় যে তাপমাত্রা তার চেয়ে এক ডিগ্রি বাড়লে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়তে পারে।’

‘এডিস মশা ও ডেঙ্গু নির্মূল সম্ভব নয়’

এডিস মশা নির্মূল সম্ভব কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘বিশ্বের যে দেশে এডিস মশা একবার প্রবেশ করেছে সে দেশে এডিসের বংশবিস্তার আর কখনোই শূন্যে নামেনি। এশিয়ার অনেক দেশেই এডিস তাণ্ডব চালাচ্ছে। এটা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব না।

‘আমাদের প্রত্যেকের জায়গা থেকে সচেতনতা বাড়ালে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপও কমে আসবে।’

ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অনেক কারণ রয়েছে। এরকম বিষয়গুলো একটি কারণে ঘটে না। বৃষ্টি এবং বর্ষাকালকে ডেঙ্গুর সময়কাল বলা হলেও এখন সেই কারণ বদলেছে। আমাদের এখানে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। এডিস মশা তার আচরণ পরিবর্তন করেছে পরিবেশের প্রভাবে।

‘আমাদের মশা নিধন কার্যক্রমেও অনেক ঘাটতি আছে। পানির সাপ্লাই সিস্টেমে সমস্যা আছে, নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। মোট কথা মানুষের সচেতনতা নেই। তবে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ব জুড়েই নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

প্রতিরোধ

কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। সেখানে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি থাকতে হবে। আমরা এর আগেও হটস্পট ম্যানেজমেন্ট বাড়ানোর কথা বলেছি।

‘হটস্পট ম্যানেজমেন্ট বলতে যেসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে সেখান থেকে রোগীর বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের বাড়ির আশপাশে ৫০০ গজের মধ্যে ফগিং করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলা বুঝায়। এটা দেশের সব জেলা-উপজেলাতেই করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এডিস মশা নিধন কার্যক্রম প্রতিটি বাড়িতেই চালাতে হবে। বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছাতে না পারলে সফল হওয়া সম্ভব না।

‘প্রধান পদক্ষেপ হলো প্রতিটি বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মী বা এন্টোমোলজি টেকনিশিয়ান পাঠানো। বাড়ির মালিকদের সম্পৃক্ত করে এডিস মশা চেনাতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শেখাতে হবে।

‘স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারপাশ এবং ভেতরে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে। এই কমিউনিকেশন সঠিকভাবে করতে পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সফল হবে। শুধু কীটনাশক দিয়ে এডিস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর