ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার সতর্ক বার্তার পরও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংগঠনটি বলেছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
শনিবার টিআইবি’র এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করা হয়।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে, এমন সতর্কবার্তা ছিল। তারপরও রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক। যেটুকু উদ্যোগ দেখা গেছে, তা পরিস্থিতি বিবেচনায় যে অপ্রতুল কিংবা লোক দেখানো প্রচারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তা না বললেই চলে। রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার যে সম্ভাবনা ছিল, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি বাস্তবে কতটুকু ছিল, তা প্রশ্নবিদ্ধ।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট ঘোষণা দিয়ে সমন্বিতভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘শুধু রাজধানীই নয়, সারা দেশেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে মশক নিধনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষমতার ঘাটতি জরুরিভিত্তিতে চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর টিআইবি থেকে ‘ঢাকা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত ১৫ দফা সুপারিশ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের কাছে পুনরায় পাঠিয়ে জরুরিভিত্তিতে সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা টিআইবির ১৫ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- জাতীয় পর্যায়ে এডিস মশাসহ অন্যান্য মশা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে মশা নিধনে নিজস্ব পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, বছরব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করা, সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালনায় একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজের অধীনে নিয়ে আসা, আইইডিসিআরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতায় প্রতিবছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই (মে-আগস্ট) সব হটস্পট চিহ্নিত করা, সব যোগাযোগমাধ্যমে (প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) এডিস মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে সচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তার কার্যকর প্রচার বাড়ানো; প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক মাইকিং, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচার চালানো, এডিস মশার জরিপ কার্যক্রম ঢাকার বাইরে সম্প্রসারিত করা।
সুপারিশমালায় আরও রয়েছে- র্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করে চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবন ও প্রকল্পগুলোতে নিয়মিত নজরদারি এবং উৎস নির্মূলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া, মাঠপর্যায়ের জনবল আউটসোর্সিং করা, পর্যাপ্ত ও সুষম বাজেট বরাদ্দ দেয়া, জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা, বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটি গঠন করা, কীটনাশক ক্রয় প্রক্রিয়ায় জাতীয় ক্রয় আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করা, মশা নিধন কার্যক্রমসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার বিষয়গুলো তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কীটনাশক পরিবর্তন, একেক এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার নিশ্চিত করা।