বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চান আঁখির স্বামী, হাসপাতাল ও সংযুক্তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল দাবি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৫ জুন, ২০২৩ ১৫:৩৬

ইয়াকুব লিখেছেন, তিন বছর ধরে স্ত্রী মাহবুবা রহমানকে নিয়ে খুব সুখে শান্তিতে জীবন-যাপন করছিলাম। আমাদের সন্তানকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা, অনেক আয়োজন ছিল। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নিমিষেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি এখন বেঁচে থাকার সাহসটুকু হারিয়ে ফেলেছি।

রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহার রেজিস্ট্রেশন বাতিল চেয়েছেন হাসপাতালটিতে সন্তান জন্ম দিতে এসে মারা যাওয়া মাহবুবা রহমান আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) রোববার এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে এই দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে স্ত্রী ও সন্তানকে হাসপাতালে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই কোটি দাবি করেছেন তিনি।

নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইয়াকুব।

বিএমডিসিতে জমা দেয়া লিখিত দাবিতে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী ও নবজাতককে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য আমি দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। একই সঙ্গে সেন্ট্রাল হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। ডা. সংযুক্তা সাহার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। আর কোনো হত্যাকাণ্ড যাতে না ঘটে সে জন্য হাসপাতালগুলোতে আলাদা মনিটোরিং সেল গঠন করতে হবে।

অভিযোগে ইয়াকুব লিখেছেন, আমার স্ত্রী গর্ভধারণের পর ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি বিষয়ক ফেসবুক ভিডিও দেখে ডা. সংযুক্তা সাহার কাছে চিকিৎসা সেবা নেয়া এবং সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেয়। সে হিসেবে আঁখি কয়েক দফা চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, গত ৯ জুন রাত ৯টায় আঁখির প্রসব ব্যথা শুরু হলে প্রথমে ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী জমিরকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। জমির এবং সংযুক্তা সাহার আরেকজন সহকারী চিকিৎসক ডাক্তার চেম্বারে আছেন নিশ্চিত করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেন।

ইয়াকুব বলেন, সেদিন রাত ১২টা ২৫ মিনিটে আঁখিকে নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে যাই। সংযুক্তা সাহার চেম্বারে গেলে কর্মচারীরা জানান, ডাক্তার লেবার ওয়ার্ডে আছেন। তারা আমাদের লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। আমি ডা. সংযুক্তা সাহার সাথে দেখা করতে চাইলে একজন সহকারী চিকিৎসক আঁখিকে ভেতরে নিয়ে যান।

তিনি বলেন, তারা আমাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর আমাকে নিচে অ্যাডমিশন ফি দিতে বলেন। আমি নিচে গিয়ে ডা. সংযুক্তা সাহার নামে অ্যাডমিশন নেই। অ্যাডমিশন রসিদ এনে ডা. সংযুক্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বলা হয়, আপনার স্ত্রীর ডেলিভারি হচ্ছে, সংযুক্তা সাহা ম্যাডাম ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবে।

ইয়াকুব বলেন, আমার পারমিশন না নিয়ে ডা. সংযুক্তা সাহার টিমের সদস্য মুনা সাহা ও শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা আমার স্ত্রীকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করান। সন্তান প্রসব করানোর জন্য সাইড কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বারসহ অন্যান্য অর্গান কেটে ফেলেন তারা। এতে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়, যা বন্ধ করতে তারা ব্যর্থ হয়। তারা আমার অনুমতি ছাড়া অজ্ঞান অবস্থায় ওটিতে নিয়ে সিজার করে বাচ্চা বের করেন।

তিনি বলেন, ডা. সংযুক্তা সাহার খোঁজ করলে অন্য চিকিৎসকরা সকালে জানান যে তিনি নেই। ডাক্তার শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা স্বীকার করেন, তিনি সংযুক্তা সাহার নির্দেশে এ কাজ করেছেন। আমাকে রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে যেতে বলেন। এরপর পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে স্ত্রীকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করাই। তখন সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, আমার সন্তান মারা গেছে। ১৮ জুন আঁখিও মারা যান।

ইয়াকুব লিখেছেন, তিন বছর ধরে আমার স্ত্রী মাহবুবা রহমানকে নিয়ে খুব সুখে শান্তিতে জীবন-যাপন করছিলাম। আমাদের সন্তানকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা, অনেক আয়োজন ছিল। অনেক কেনাকাটা হয়েছিল। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় নিমিষেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি এখন বেঁচে থাকার সাহসটুকু হারিয়ে ফেলেছি।

অন্তঃসত্ত্বা মাহবুবা রহমান আঁখিকে গত ৯ জুন কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে এনে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আঁখির পরিবারের ভাষ্য, তাকে ভর্তি করা হয় চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে, তবে সংযুক্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি সে সময় দেশের বাইরে ছিলেন।

অন্য চিকিৎসকরা আঁখির স্বাভাবিক প্রসব করাতে ব্যর্থ হয়ে পরে অস্ত্রোপচার করেন। ওই সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়। সংকটাপন্ন হয়ে পড়েন আঁখিও। নবজাতকের এক সপ্তাহ পর আঁখির মৃত্যু হয়।

নবজাতকের বাবা ইয়াকুব আলী এ ঘটনায় মামলা করলে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেন্ট্রাল হসপিটালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সংযুক্তা সাহাও হাসপাতালে আপাতত কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না বলে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এ বিভাগের আরো খবর