আসন্ন ঈদুল আজহায় মানুষের চলাচল বাড়ার কারণে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন একজন বিশেষজ্ঞ। তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করলেও যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমছে না এবং প্রতিদিন মৃত্যুও হচ্ছে। আসন্ন ঈদে ডেঙ্গু বাড়বে এবং এটা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায়। সে সময় মানুষের মুভমেন্ট বাড়বে। কেউ এডিস মশার বাহক হলে তার থেকে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে। যেহেতু ঈদের ছুটিতে প্রচুর মানুষ বাড়িতে যায়, অনেকে জ্বর হলেও না বুঝে টেস্ট না করে চলে যায়। এভাবে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি কারণ হলো, আমরা বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষা করে দেখেছি, এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। সেসব জেলায় মানুষ ঈদ করতে গেলে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই ঈদে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে, এটা নিশ্চিত।’
যা বলছে সিটি করপোরেশন
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গু নিরসনে কাজের পরিধি আগের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছি।’
ঈদে ডেঙ্গু বাড়তে পারে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মানুষের মুভমেন্ট বাড়ার কারণে ঝুঁকি থাকলেও আমরা চিহ্নিত হটস্পটগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নিয়মিত পদক্ষেপ, যেমন: ফগিং, ওষুধ দেয়া ছাড়াও মোবাইল কোর্ট, অভিযান—এগুলো চলমান।
‘এর বাইরে আমাদের স্কাউট, গার্লস গাইড এবং অনেকগুলো টিমকে সম্পৃক্ত করেছি, যেটা গত বছর ছিল না। বিভিন্ন টিম প্রতিটি জেলায় কাজ করছে। সেখানে এডিস মশার বংশবিস্তারের জায়গা পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে মানুষকে সচেতন করছে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সিটিজেন এনগেজমেন্টের প্রসার বাড়াচ্ছি এবং সিরিয়াসলি চেষ্টা করছি। বাড়িতে বাড়িতে ছাদবাগানে ড্রোন সার্ভে করে ওষুধ আমদানি করে প্রয়োগ করছি। যেমন: যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিটিআই নামক একটি ওষুধ এনে আমরা প্রয়োগ করছি। এ রকম অনেক পদক্ষেপই এবার নেয়া হয়েছে, যা নতুন।
‘আমাদের এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে, কাউন্সিলররা কাজ করছে; মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।’
সেলিম রেজা বলেন, ‘এডিস মশার আক্রমণ, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু, এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এর নিন্দাও জানাই, তবে আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
‘এভাবে যদি সবার জায়গা থেকে সচেষ্টভাবে কাজ করা হয়, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করি।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আশাবাদী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্যান-ম্যাল এবং ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ইকরামুল হক বলেন, ‘এডিস মশা বংশবিস্তারের পরিবেশ খুব প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে এ বছর যে তাপমাত্রা কয়েক দফায় বেড়েছে, সেটা এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী।
‘বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে শীর্ষ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ বছর মার্চ-এপ্রিলে। বলা হচ্ছে দেশের গড় যে তাপমাত্রা, তার চেয়ে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস যদি বাড়ে, তাহলে ডেঙ্গু চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এই আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়; বিশ্বের সব উষ্ণ দেশেও এই প্রভাব পড়বে। সঠিক পদক্ষেপ না নিলে এবং মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে ডেঙ্গু বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তবে যেভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন এবং স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমরা আশাবাদী।’
প্রতিরোধ কীভাবে
এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমরা গত বছরও হটস্পট ম্যানেজমেন্ট চালু করার কথা বলেছি। হটস্পট ম্যানেজমেন্ট বলতে যেসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে, সেখান থেকে রোগীর বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের বাড়ির আশপাশে ৫০০ গজের মধ্যে ফগিং করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলা। এটা শুধু ঢাকায় না, যেসব জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে, সবগুলোতেই চালু করতে হবে।’