মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হলে কিংবা মস্তিষ্কে রক্তের কোনো ধমনি বিস্ফোরিত হলে স্ট্রোক বা ব্রেন অ্যাটাক হয়। বিশ্বজুড়ে অসুস্থতাজনিত মৃত্যুর অন্যতম কারণ এ স্ট্রোক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ডেটা অনুযায়ী, ২০২০ সালে কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত প্রতি ছয়জনের একজনের মৃত্যু হয় স্ট্রোকে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
স্ট্রোকের প্রধানতম কারণ হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ। এ নিয়ে এক ভিডিওতে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো পাঠকদের সামনে।
আমরা জানি স্ট্রোক বেসিক্যালি যদি বলি, মোটাদাগে, একটা হচ্ছে ইস্কেমিক স্ট্রোক, আরেকটা হচ্ছে হেমোরেজিক স্ট্রোক। হেমোরেজের একটা হচ্ছে সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। ব্রেনের পর্দার ভেতরে ব্লিডিং হলে যেটা হয়। আরেকটা হচ্ছে ব্রেনের ভেতরে; ইন্ট্রাসেল।
হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) আসলে আমরা যতগুলো কারণ জানি স্ট্রোকের, হাইপারটেশনকে এক নম্বর কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। আই থিংক ইট ইজ প্রোবাবলি অ্যারাউন্ড ফিফটি টু সিক্সটি পারসেন্ট কজ অফ ডেথ (সম্ভবত প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর জন্য এটা দায়ী)। বাকি যে কারণগুলো আছে, আমরা সেটা জানি। ডায়াবেটিস, স্মোকিং (ধূমপান), ওবেসিটি (স্থূলতা), হাইপারকোলেস্টেরলেমিয়া। সবার ওপরে দেখেন, হাইপারটেনশন সবার আগে। বিকজ ইট ইজ মোর দেন ফিফট পারসেন্ট, সিক্সটি পারসেন্ট।
সো হাইপারটেনশন যদি কন্ট্রোল থাকে, তাহলে আপনি আসলে স্ট্রোক থেকে অনেকখানি দূরে চলে গেলেন। আমরা জানি এইটি টু নাইন্টি পারসেন্ট (৮০ থেকে ৯০ শতাংশ) স্ট্রোক আসলে প্রিভেন্ট (প্রতিরোধ) করা যায়। আপনি যদি হাইপারটেনশন কন্ট্রোল করতে পারেন, তাহলে কিন্তু আপনি সিক্সটি, সেভেন্টি পারসেন্ট স্ট্রোকই প্রিভেন্ট করতে পারেন।
হাইপারটেনশন কী বা এটা প্রিভেনশনের উপায় কী, তা আপনারা জানেন। হাইপারটেনশনের ওষুধের বেসিক বিষয় যদি বলি, এটা হচ্ছে ফার্মাকোলজিক্যাল আর নন ফার্মাকোলজিক্যাল। ফার্মাকোলজিক্যাল মানে আপন কিছু ওষুধ খাবেন। নন ফার্মাকোলজিক্যাল পার্টটাই আসলে বেশি। আমরা এটাতেই গুরুত্ব দিতে চাই। আপনার লাইফস্টাইল, আপনার মেন্টালিটি, আপনার পারসোনালিটি, আপনি স্ট্রেসফুল লাইফ লিড করছেন কি না, আপনি পর্যাপ্ত ঘুমান কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনি রেগুলার এক্সারসাইজ করেন কি না, সেটা অবশ্যই করতে হবে।
কারণ যেটা বলা হয়, ফ্রি ফ্লো অফ ব্লাড নাম্বার ওয়ান রেমিডি অফ স্ট্রোক (স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হলো রক্তের অবাধ প্রবাহ)। ফ্রি ফ্লোটা এনশিউর করার মূল শর্ত হলো এক্সারসাইজ (ব্যায়াম)। রক্তনালির ভেতর দিয়ে পর্যাপ্ত ব্লাড ফ্রিলি ফ্লো হবে; স্ট্রোক হবে না।
দুইটা বিষয় দেখতে হবে। একটা হচ্ছে রক্তনালি নরমাল আছে কি না; রক্তকণিকাগুলো বা রক্তের যে ফ্লুইড এনভায়রনমেন্টটা ঠিক আছে কি না। এ দুইটার জন্য মেইন ফ্যাক্টর হচ্ছে হাইপারটেনশনটা কন্ট্রোল।
আগেই বলেছি আপনি স্ট্রেসলেস লাইফ (দুশ্চিন্তাহীন জীবন) লিড করেন। আপনি ঘুমান, আপনি এক্সারসাইজ করেন। আপনি খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল করেন। প্রয়োজন হলে ওষুধ খান। আপনি এই কাজগুলো করেন। দেখেন প্রেশার কন্ট্রোল থাকল। মানে আপনার হার্ট ভালো থাকল। অ্যাট দ্য সেইম টাইম, আপনি স্ট্রোকের সম্ভাবনা থেকে অনেক দূরে চলে গেলেন।
এই একটা জ্ঞান যদি আমরা ফলো করি, আমরা আসলে এই ডিভাস্ট্যাটিং (সর্বনাশা) একটা ডিজিজ থেকে দূরে থাকব। কারণ আমরা জানি বিশ্বে নাম্বার ওয়ান বিকলাঙ্গ বা পঙ্গুত্বের কারণ হচ্ছে স্ট্রোক। দ্বিতীয় বা তৃতীয় মৃত্যুর কারণ হচ্ছে এই স্ট্রোক। আপনি প্রেশার কন্ট্রোল করুন; স্ট্রোক থেকে দূরে থাকুন।