বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্তের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০৯:১১

‘অনেক মানুষ আছে যারা এইচবিএসএজি পজিটিভ নিয়ে আমাদের কাছে আসে। হঠাৎ করে ধরা পড়েছে বা শরীরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় বি ভাইরাস ধরা পড়ে। দেখা যায় যে, কারও ব্লাডের কোনো রোগ হইছে, হেমাটোলজিস্ট পরীক্ষা করে দেখেন বি ভাইরাস।’

দেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নতুন কোনো বিষয় নয়। অনেকেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার এক ভিডিওতে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসাইন মোহাম্মদ শাহেদ। তথ্যগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো পাঠকদের সামনে।

১. আমাদের দেশে বি ভাইরাসটা (হেপাটাইটিস বি) খুব কমন। আমাদের দেশের ইনসিডেন্ট প্রিভেলেন্স (আক্রান্তের সংখ্যা) হচ্ছে এইট টু টেন পারসেন্ট। এতসংখ্যক মানুষের মধ্যে বি ভাইরাসটা আমাদের দেশে পজিটিভ, কিন্তু অনেক মানুষ জানে না শরীরে এইচবিএসএজি আছে, যেটা টেস্ট করা হয়নি। বি ভাইরাসটা (সম্বন্ধে জানা) আমাদের জন্য খুব ইম্পরট্যান্ট। কারণ আমরা আসলে জানি না আমাদের কাদের বি ভাইরাস আছে। না জানার জন্য বি ভাইরাস থেকে অনেক সময় লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার হয়ে যায়। যে রোগটা আগে থেকে চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যেত, ওইটা এমন একটা অবস্থায় নিয়ে আসে যখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। এ জন্য আমি বলব, বি ভাইরাস সম্বন্ধে যা বলি তা শুনবেন এবং এই অনুসারে চিকিৎসা করবেন। ইনশাল্লাহ ভালো হয়ে যাবে। এটা একটা প্রিভেন্টেবল ডিজিজ (প্রতিরোধযোগ্য রোগ)। এটার চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়।

২. অনেক মানুষ আছে যারা এইচবিএসএজি পজিটিভ নিয়ে আমাদের কাছে আসে। হঠাৎ করে ধরা পড়েছে বা শরীরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় বি ভাইরাস ধরা পড়ে। দেখা যায় যে, কারও ব্লাডের কোনো রোগ হইছে, হেমাটোলজিস্ট পরীক্ষা করে দেখেন বি ভাইরাস। তখন আমাদের কাছে পাঠান। এমনও হতে পারে কোনো ক্যানসার রোগী ক্যানসারের ডাক্তারের কাছে গেছে, তো উনি ক্যানসারের ওষুধ দেয়ার আগে বি ভাইরাস পরীক্ষা করে দেখেন যে, পজিটিভ। তখন আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন।

৩. অনেক সময় দেখা যায় যে, কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস করবে। ডায়ালাইসিস শুরু করার আগে অনেক সময় বি ভাইরাস, সি ভাইরাস টেস্ট করা হয়। পজিটিভ হলে আমাদের কাছে আসে। এ ছাড়া এমনিতেই অনেক রোগী জন্ডিস নিয়ে আমাদের কাছে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বি ভাইরাস ধরা পড়ে।

৪. অধিকাংশ মানুষের বি ভাইরাস থাকলে শরীরে কোনো সিম্পটম (লক্ষণ) থাকে না; অ্যাসিম্পটমিক (উপসর্গবিহীন)। হয়তো দেখা গেল বিদেশে যাওয়ার জন্য পরীক্ষা করেছে। বি ভাইরাস ধরা পড়েছে অথবা টিকা নিতে যাবে; ওখানে পরীক্ষা করতে গেছে টিকা দেওয়ার জন্য, বি ভাইরাস ধরা পড়েছে। এভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বি ভাইরাসটা শরীরে ধরা পড়ে।

৫. বি ভাইরাসটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেরিয়ার (বাহক) হিসেবে থাকে। শুধু এইচবিএসএজি পজিটিভ। অন্য কোনো অসুবিধা থাকে না, কিন্তু এটা অনেক সময় অ্যাকিউট হেপাটাইটিস করে, পরবর্তী পর্যায়ে ক্রনিক হেপাটাইটিস করে। এর পরবর্তী পর্যায়ে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসার করে।

৬. বি ভাইরাস নিয়ে আমাদের কাছে যখন কোনো রোগী আসে, আমরা তখন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখি বি ভাইরাসটা শরীরে অ্যাকটিভ নাকি ইনঅ্যাকটিভ অবস্থায় আছে। ভাইরাসটা শরীরে কীভাবে থাকে? একটা ইনঅ্যাকটিভ, আরেকটা অ্যাকটিভ। যদি অ্যাকটিভ অবস্থায় থাকে, তাহলে এটার চিকিৎসা করলে ইনশাল্লাহ ভালো হয়ে যাবে। আর ইনঅ্যাকটিভ অবস্থার আরেকটা নাম হচ্ছে কেরিয়াস্টিকস। যদি কেরিয়ার (বাহক) অবস্থায় থাকে, শুধু এটার ফলোআপ করতে হয় তিন মাস পরপর। ফলোআপ করে করে এটা দেখতে হয়। যদি কোনো সময় ফলোআপের মধ্যে অ্যাকটিভ পাওয়া যায়, তখন এটার চিকিৎসা দেওয়া হয়।

৭. অ্যাকটিভ আমরা কীভাবে ‍বুঝব? আমরা যখন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর মধ্যে এইচবিএসএজি যদি পজিটিভ থাকে, সাথে এইচবিইএজি, এসজিপিটি, অ্যান্টিএইচবিই, আলট্রাসনোগ্রাম, এইচবিপিটিএনের মতো পরীক্ষাগুলো করা হয়। পরীক্ষা করে এইচবিএসএজি কারও পজিটিভ থাকে, কারও নেগেটিভ থাকে। এটা যদি নেগেটিভ থাকে, এটাকে বলে মিউট্যান্ট ভ্যারাইটি। এটা খুব খারাপ একটা ভ্যারিয়েন্ট, যা থেকে লিভার রোগ খুব বেশি তাড়াতাড়ি হয়। ক্যানসার বা লিভার সিরোসিস, এগুলো খুব দ্রুত হয়ে যায়। এ জন্য এইচবিএসএজি খুব মারাত্মক। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাটা অনেক বেশি দিন দেয়া লাগে।

৮. এরপরে আমরা দেখি এসজিপিটি। নরমালও থাকতে পারে, ওয়ান টাইম বা টু টাইমস বেশি থাকতে পারে। আর অ্যান্টি এইচবিই এটা করা হয়। এটা পজিটিভ থাকলে ধরা হয় শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।

৯. এরপরে ডিএনএ করা হয়। ডিএনএ নেগেটিভ থাকতে পারে। পজিটিভ থাকলেও চিকিৎসা লাগে না যদি এর পরিমাণ একটা লেভেল পর্যন্ত থাকে। সেই লেভেল পর্যন্ত থাকলে আমরা চিকিৎসা করি। লো লেভেল থাকলে সাধারণত চিকিৎসা লাগে না।

১০. তাইলে আমরা বলছিলাম একটা অ্যাকটিভ, একটা ইনঅ্যাকটিভ। অ্যাকটিভ হলো যাদের এইচবিএসএজি পজিটিভ অথবা নেগেটিভ, যেকোনো একটা থাকতে পারে অ্যাকটিভে। এসজিপিটি রেইজ (বাড়া) থাকতে পারে ওয়ান টাইম বা টু টাইম বা এর বেশি এবং ডিএনএ পজিটিভ থাকবে। এগুলো যদি থাকে, আমরা বলি অ্যাকটিভ স্ক্রিনস। যদি অ্যাকটিভ ভাইরাস থাকে, এটা অবশ্যই চিকিৎসা করতে হয়। না হলে এ থেকে ক্রনিক হেপাটাইটিস হয়। সেখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। লিভার সিরোসিস পরে লিভার ক্যানসারে টার্ন করে। আর ইনঅ্যাকটিভ স্টেজ যদি হয়, তখন দেখা যায় যে, এইচবিএসএজি নেগেটিভ, এসজিপিটি নরমাল, ডিএনএ নেগেটিভ। এটা হলে ইনঅ্যাকটিভ স্টেজ। এটার কোনো চিকিৎসা লাগে না; ‍শুধু তিন মাস পরপর ফলোআপ করতে হয়।

ফলোআপের মধ্যে যদি এগুলো নেগেটিভ থাকে, তাহলে এটাকে বলা হয় কেরিয়াস্টিকস। কেরিয়াস্টিকের কোনো চিকিৎসা লাগে না, কিন্তু ফলোআপে রাখতে হয়। কারণ ফলোআপের মধ্যে দেখা যায়, অনেক সময় এটা অ্যাকটিভে টার্ন করে।

১১. ভাইরাসটা শরীরের ইমিউনিটির ওপর ভিত্তি করে অ্যাকটিভ ইনঅ্যাকটিভ হয়। যদি ইমিউনিটি ভালো থাকে, তাইলে এটা ইনঅ্যাকটিভ স্টেজে থাকে। আর কোনো সময় ইমিউনিটি যদি শরীরে কমে যায়, তখন ভাইরাসটা ইনঅ্যাকটিভ থেকে অ্যাকটিভে টার্ন করে।

অ্যাকটিভ মানে এটা লিভার ড্যামেজ করে। লিভার ড্যামেজ করা মানে এটা ক্রনিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস।

১২. এখন চিকিৎসা। যদি অ্যাকটিভ স্টেজে থাকে, তাহলে আমরা বিভিন্ন রকম অ্যান্টিভাইরাল এজেন্ট দিয়ে থাকি। এর মধ্যে লেমিভুডিন, যেটা আমরা আগে ইউজ করতাম। এখন করি না। এন্টাকাভির বর্তমানে ইউজ করা হয়। টেলবিভুডিন বর্তমানে ইউজ করা হয়।

বর্তমানে আমরা অ্যান্টিভাইরালগুলো বিভিন্ন মেয়াদে দিয়ে থাকি। যাদের এইচবিএসএজি ওদেরকে এক বছর চিকিৎসা দেয়া হয়। যাদের এইচবিএসএজি নেগেটিভ, তাদের তিন বছর চিকিৎসা দেয়া হয়, তবে একটা ট্রেন্ড বর্তমানে আমরা বিভিন্ন পাবলিকেশনে দেখতেছি। সেটা হলো আমরা নির্দিষ্ট সময়ে অ্যান্টিভাইরাল দেয়ার পরে ভাইরাসটা আবার ফলোআপ করতে হয়।

অ্যান্টিভাইরাল বন্ধ করার তিন মাস/ছয় মাস পরপর ডিএনএটা পরীক্ষা করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নেগেটিভই থাকে, তবে কারও কারও আবার পজিটিভও হয়। এ জন্য আবার অ্যান্টিভাইরাল শুরু করতে হয়, কিন্তু কিছু কিছু পাবলিকেশনে দেখা যাচ্ছে যে, অ্যান্টিভাইরালটা বন্ধ করলে ভাইরাসটার যেহেতু পুনরায় আবির্ভাব ঘটে, সেহেতু অ্যান্টিভাইরাল বন্ধ না করাই শ্রেয়। এটা সবসময় চালু থাকলে, ভাইরাসটা ইনঅ্যাকটিভ থাকলে লিভারটা সুরক্ষিত থাকে এবং লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

এ বিভাগের আরো খবর