বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে জন্ডিস নতুন কোনো রোগ নয়। এ রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। জন্ডিসের চিকিৎসা নিয়ে এক ভিডিওতে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসাইন মোহাম্মদ শাহেদ। তথ্যগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো পাঠকদের সামনে।
১. একটা মানুষের জন্ডিস হলে ডাক্তারের কাছে আসলে আমরা প্রথমে জন্ডিসটা কী অবস্থায় আছে বা হালকা জন্ডিস না জন্ডিসটা বেশি, প্রথমে এটা ধারণা করার চেষ্টা করি। সেটা সিরাম বিলিরুবিনের মাধ্যমে করা হয়। বিলিরুবিনের মাত্রা যদি দশের নিচে থাকে, এটাকে আমরা মধ্যম বা হালকা জন্ডিস বলি। দশের বেশি থাকলে জন্ডিসটা খুব মারাত্মক বলি আরকি। যদি হালকা জন্ডিস থাকে, তাহলে এটা বাসায় চিকিৎসা করা সম্ভব।
২. এ ধরনের রোগীদের জন্ডিসের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকি আমরা। খেতে না পারলে খাওয়ার রুচির ওষুধ দিই। ভিটামিন দিয়ে থাকি। বাথরুম ক্লিয়ারের জন্য ওষুধ দিয়ে থাকি যাতে কনস্টিপেশন (কোষ্ঠকাঠিন্য) বা এ রকম কিছু না থাকে। কারণ জন্ডিস রোগীদের কনস্টিপেশন থাকলে জন্ডিসটা ভালো হইতে একটু দেরি হয়।
খেতে না পারলে খাওয়ার ওষুধ দিই এবং রেস্টে থাকতে বলি। জন্ডিসের রোগীদের জন্য রেস্ট খুব দরকারি। আর খাওয়া-দাওয়া কী করবেন, সেটা বলে দিই। সাধারণত চর্বিযুক্ত খাবার আমরা নিষেধ করি। এমনভাবে খাবে যাতে সহজে হজম হয়। ছোট মুরগি, ছোট মাছ, ডাল, ভাত, সবজি। তৈলাক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার এগুলো খেতে মানা করি।
৩. বিলিরুবিন যখন দশের বেশি থাকে, তখন আমরা হাসপাতালে ভর্তি হতে বলি। কারণ বিলিরুবিনের মাত্রা যদি বেশি হয় তাহলে সেটা অনেক রকম জটিলতা তৈরি করতে পারে। জটিলতাগুলো ঠেকাতে আমরা হাসপাতালে ক্লোজ অবজারভেশনে (নিবিড় পর্যবেক্ষণ) রোগীদের আনতে চাই। মাত্রা যখন বেশি হয়, তখন বিভিন্ন রকম জটিলতা হতে পারে। যেমন: রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, রোগীর রক্তক্ষরণ হতে পারে, রোগীর পেটে পানি আসতে পারে, লিভার ফেইলিউর হয়ে যেতে পারে। এগুলো যাতে না হয়, সে জন্য আমরা হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে চাই। আর যদি এই ধরনের কিছু হয়ও, সেগুলোর চিকিৎসা হাসপাতালে সম্ভব।
৪. কোনো রোগীর যদি জন্ডিস থাকে, আপনারা প্রাথমিক অবস্থায় যখন বুঝবেন বা সন্দেহ লাগতেছে জন্ডিস, তখনই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে, জন্ডিসটা পরীক্ষা করলে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়বে এবং ওই অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া সম্ভব। আর যদি দেরি করে ডাক্তারের কাছে আসা হয়, তাহলে জন্ডিসটা অনেক গাঢ় হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা করা অনেক কঠিন হয়ে যায় ডাক্তারের পক্ষে বা অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি লাগে।
৫. যে জটিলতাগুলো বললাম, এগুলো হলে কঠিন চিকিৎসার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হতে হয়। সে জায়গায় রোগী অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালো হয়ে যায়, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারাও যেতে পারে। এই জটিলতা যাতে না হয়, সে জন্য আমি বলব, যখনই জন্ডিস আপনারা অনুভব করবেন বা সন্দেহ করবেন, তখন তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করবেন অথবা চিকিৎসা শুরু করার জন্য ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ বা পরামর্শ করবেন।
৬. আমি এই জন্ডিস সম্বন্ধে বলতে গিয়ে সবাইকে বলব, আপনারা যে যেখানে আছেন, এইচবিএসএজি বলে একটা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, এটা আপনারা পরীক্ষা করবেন এবং আপনাদের পরিবারে যারা আছে, সবাইকে পরীক্ষা করাবেন। যদি এটা পজিটিভ থাকে, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন এবং এটার একটা চিকিৎসা নেবেন। আর যদি নেগেটিভ থাকে, তাহলে সবাইকে এটার টিকা দিয়ে দেবেন, যাতে ভবিষ্যতে এই রোগ থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি।