বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইবিএস বা পুরাতন আমাশয়ের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:১৮

‘আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা ক্রনিক ডিসেন্ট্রি বা পুরাতন আমাশয়, বিভিন্ন নামে এ রোগটা পরিচিত। এটা আমাদের কমিউনিটি বা আমাদের সমাজে খুবই কমন একটা রোগ।’

আমাদের দেশে অনেকেই আইবিএস বা পুরাতন আমাশয়ের সমস্যায় ভুগছেন। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আইবিএস কী, এর কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে এক ভিডিওতে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসাইন মোহাম্মদ শাহেদ। পরামর্শগুলো তার ভাষায় পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।

আইবিএস কী

আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা ক্রনিক ডিসেন্ট্রি বা পুরাতন আমাশয়, বিভিন্ন নামে এ রোগটা পরিচিত। এটা আমাদের কমিউনিটি বা আমাদের সমাজে খুবই কমন একটা রোগ। আমাদের দেশের টেন টু ফিফটিন পারসেন্ট মানুষের আইবিএস বা ক্রনিক ডিসেন্ট্রি রোগটা সংক্রমিত আছে। এটা একটা পেটের রোগ, যেখানে রোগীর বাথরুম বা পায়খানার সমস্যা হয় এবং পেটের মধ্যে বিভিন্ন রকম ব্লটিং বা পেট ফোলা বা পেটের মধ্যে শব্দ, এ রকম বিভিন্ন রকম সিম্পটম থাকে। সাথে রোগীর লাইফস্টাইল, টেনশন/দুশ্চিন্তা এগুলোও জড়িত থাকে।

আইবিএসের কারণ

এ ধরনের রোগের অ্যাকচুয়াল কারণ জানা যায় নাই, তবে বিভিন্ন বইপত্র বা পাবলিকেশনসে আছে, অতিরিক্ত টেনশন বা দুশ্চিন্তা, যাদের পেশা খুব কঠিন বা টেনশনের মধ্যে থাকতে হয় বা যাদের জীবনে বিভিন্ন রকম অ্যাকসিডেন্ট বা দুশ্চিন্তা বা ফ্যামিলি ব্রেকডাউন হয়েছে, তাদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়, স্টুডেন্টদের মধ্যে দেখা যায় বা যারা প্রফেশনালি খুব অ্যাকটিভ থাকে, ওদেরও অনেক সময় এটা বেশি দেখা দেয়।

আইবিএসের লক্ষণ বা উপসর্গ

এই ধরনের রোগীরা সাধারণত আমাদের কাছে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আসে। যেমন: পেট ফোলা, পেটে শব্দ করা, বাথরুম (পায়খানা) ক্লিয়ার হয় না, সকাল ঘুম থেকে উঠে তিন-চারবার বাথরুম হয় বা কোনো কিছু খাওয়ার পরপর বাথরুমে যাওয়া লাগে। বাথরুম অনেক সময় নরম হয়। অনেক সময় কঠিন হয়। অনেক সময় পায়খানার সাথে বিজল যায়।

এ ধরনের রোগীরা আমাদের কাছে দুই ভাবে প্রেজেন্ট হয়; একটা পাতলা পায়খানা, একটা কঠিন পায়খানা নিয়ে। তো কোনো কোনো রোগী আসে শুধু পাতলা পায়খানা নিয়ে। কোনো কোনো রোগী আছে কঠিন পায়খানা হয়।

আইবিএস রোগীর পরীক্ষা

আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। যেমন: আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়ে থাকে। তারপরে পায়খানা পরীক্ষা করা হয়। তারপরে কোলোনোস্কপি করা হয়। সাধারণত এই পরীক্ষাগুলো এই রোগ ডায়াগনসিসের জন্য লাগে না, কিন্তু এই রোগের যে সিম্পটম (লক্ষণ), এই সিম্পটমগুলো আবার অনেক রোগের সঙ্গে মিলে যায়। যেমন: পেটের মধ্যে যদি টিউবারকলোসিস (যক্ষ্মা) হয়, ইনটেস্টাইনাল টিউবারকলোসিস, তখন কিন্তু অনেক সময় পাতলা পায়খানা হয়। আবার অনেক সময় ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজের ক্ষেত্রেও পাতলা পায়খানা থাকতে পারে।

এ জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয় ভেতরে কোনো সমস্যা আছে কি না। এ জন্য স্টুল (মল) পরীক্ষা করা হয়, লিভার ফাংশন পরীক্ষা করা হয়। তারপরে কোলোনোস্কপি করা হয়।

আইবিএসে সাধারণত কোনো টেস্টে কোনো কিছু পাওয়া যায় না। শুধু অন্য ডিজিজগুলো আছে কি না পরীক্ষা করার জন্য টেস্ট করা হয়। এ পরীক্ষাগুলো করে আমরা আইবিএস ডায়াগনসিস করি।

চিকিৎসা

চিকিৎসার মধ্যে প্রথমে রোগীকে আশ্বস্ত করা হয় যে, আপনার যে পেটের সমস্যা, বাথরুমের সমস্যা, এটা আসলে ভেতরের কোনো সমস্যা না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে; সব ভালো আছে। আশ্বস্ত করতে হয় রোগীকে।

রোগীর টেনশন/দুশ্চিন্তা এগুলো মুক্ত করতে হয়। এরপরে পাতলা পায়খানা হলে পেশেন্টের খাওয়া-দাওয়া সম্বন্ধে আমরা বলি যে, আপনি কী ধরনের খাবার খেলে পেট ভালো থাকবে। পাতলা পায়খানা যেন না হয়। এ জন্য দুধজাতীয় খাবারটা আমরা বন্ধ করে দিই। গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট দিই। গ্লুটেন মানে গমজাতীয় খাবার, যেগুলো আমরা বন্ধ করে দিই। আর শাকজাতীয় খাবারগুলো বন্ধ করে দিই। এগুলো না খেলে পেটটা ঠিক থাকে।

যাদের কনস্টিপেশন (কোষ্ঠকাঠিন্য) থাকে, তাদেরকে আমরা বলি পানি বেশি করে খাবেন, শাকসবজি ‍বেশি খাবেন, ব্যায়াম করবেন। তাইলে কনস্টিপেশনটা কম থাকে।

এগুলোর বাইরে আমরা অন্য ধরনের একটা ওষুধ, প্রোবায়োটিকস ইউজ করা হয়। এটা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। আমরা ধারণা করি যে, পেটের গণ্ডগোলটা ব্যাকটেরিয়ার ইমব্যালেন্সের কারণে হয়। আমাদের পেটের মধ্যে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার দরকার। ব্যাকটেরিয়া দুই রকম আছে। একটা ভালো, একটা খারাপ।

যখন খারাপ ব্যাকটেরিয়াটা বেড়ে যায়, তখন পাতলা পায়খানা হয়। আর যখন খারাপ ব্যাকটেরিয়া কম থাকে, ভালো ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকে, তখন মানুষ সুস্থ থাকে। এ জন্য প্রোবায়োটিকস ইউজ করলে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাটা বেড়ে খারাপ ব্যাকটেরিয়াটাকে কন্ট্রোল করে রাখে। তখন পায়খানা ভালো হয়।

এ ছাড়া বিভিন্ন রকম ওষুধ আমরা ইউজ করি। যেমন: মেবেভেরিন হাইড্রোক্লোরাইড বা এ জাতীয় অনেক ওষুধ আমরা ইউজ করে থাকি। যদি গ্যাস্ট্রিকের কোনো ওষুধ লাগে, আমরা সাধারণত ফেমোটিডিনটা ইউজ করি বা রেমিপ্রাজটলটা ইউজ করি। অন্য গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সাধারণত পেটটা একটু নরম করে ফেলে। এ জন্য ওমিপ্রাজল, ইসমিপ্রাজল আইবিএসে ইউজ করা হয়।

সারকথা

তো আমি বলব, এভাবে যদি আপনারা জীবনযাপন করেন, খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোলের মাধ্যমে, নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওষুধগুলো রেগুলার খাওয়ার মাধ্যমে আর আমি যেভাবে বলছি, সেভাবে যদি চলেন, আশা করি আইবিএস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

এটা নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই। এটা ওই রকম বড় কিছু নয়। আইবিএসের একটা বিষয় হলো এটা সিরিয়াস কোনো রোগ না। এ থেকে কোনো ক্যানসার বা এখান থেকে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এটা শরীরকে একটু ভোগায় বা কষ্ট দেয়। এটা মুক্ত করার জন্য জীবনপ্রণালি একটু চেঞ্জ করলে, খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল করলে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে আশা করি এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিভাগের আরো খবর