বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন যাচ্ছে মেডিক্যালে, ঝুঁকিতে রোগীরা

  •    
  • ৩১ মার্চ, ২০২৩ ১৯:২০

খুলনায় প্রতি ঘনমিটার (১ ঘনমিটার সমান ১ হাজার লিটার) মেডিক্যাল অক্সিজেনের মূল্য হলো ৫২-৫৫ টাকা। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের মূল্য হলো তার অর্ধেক, প্রতি ঘনমিটার ২০-২৫ টাকা। মেডিক্যালের চেয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের দাম কম হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য এই অক্সিজেন বিক্রি করা হচ্ছে।

সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য খুলনার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে অপরিশোধিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। মেডিক্যাল অক্সিজেনের থেকে দাম কম হওয়ায় অধিক লাভের আশায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনে বুঝেই রোগীদের এই অক্সিজেন দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম বিশুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনে গ্রহণের ফলে রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। এমনকি ঘটতে পারে মৃত্যুও।

খুলনা মহানগরীর কেডিএ অ্যাভিনিউ রোডের রাশিদা মেমোরিয়াল হাসপাতালে গত সোমবার গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি সিলিন্ডারে করে অক্সিজেন নিয়ে এসেছেন। এটি কোনো কোম্পানির অক্সিজেন তার কোন তথ্য সিলিন্ডারের গায়ে লেখা ছিল না।

জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন নামের ওই ব্যক্তি বলেন, আমি নিজে অক্সিজেন বিক্রি করি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে মৌখিক চুক্তি করে। তাদের ফাঁকা সিলিন্ডারগুলো আমি রিফিল করে নিয়ে আসি।

তিনি জানান, খুলনা নগরীর কয়লা ঘাট এলাকায় অবস্থিত ‘রকি অক্সিজেন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এই অক্সিজেন রিফিল করা হয়। শহরের এমন দশটি হাসপাতালে এই অক্সিজেন তারা সরবরাহ করেন।

রাশিদা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পাশেই রয়েছে কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল। সেখানে গিয়েও দেখা যায়, সিলিন্ডারের গায়ে কোনো কোম্পানি ট্যাগ নেই।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, কোথা থেকে হাসপাতালে বা ক্লিনিকগুলোতে অক্সিজেন আসে তা মালিকপক্ষ জানে না। কিছু ব্যক্তি আছেন যারা হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করেন, তাদের সঙ্গে মৌখিক চুক্তি করলে নিয়মিত সিলিন্ডারগুলো রিফিল করে দিয়ে যান। তারা মেডিক্যাল অক্সিজেন দিলেন নাকি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন দিলেন তা কেউ খোঁজ নেন না। শহরের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে এভাবেই চলছে।

খুলনায় প্রতি ঘনমিটার (১ ঘনমিটার সমান ১ হাজার লিটার) মেডিক্যাল অক্সিজেনের মূল্য হলো ৫২-৫৫ টাকা। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের মূল্য হলো তার অর্ধেক, প্রতি ঘনমিটার ২০-২৫ টাকা। মেডিক্যালের চেয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের দাম কম হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য এই অক্সিজেন বিক্রি করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনাতে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে তিন প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। যেগুলো হলো- খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি, লিন্ডে বাংলাদেশ ও স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড। খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি নামের প্রতিষ্ঠানটি খুলনাতেই মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন করে। অন্যদিকে লিন্ডে ও স্পেকট্রার খুলনাতে ডিপো রয়েছে।

এছাড়া বাকি তিনটি কোম্পানির কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। যেগুলো হলো- মহানগরীর জয় বাংলার মোড়ে অবস্থিত এসবি অক্সিজেন, কয়লা ঘাট এলাকায় অবস্থিত রকি অক্সিজেন ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে গ্যাস এবং গিয়ার বাংলাদেশ।

খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে সব থেকে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে রকি অক্সিজেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন রয়েছে। তবে ওষুধ প্রশাসন ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছে একেবারেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে। তিন শ গজ দুরেই রকি ডক ইয়ার্ড। সেখানে প্রতিনিয়ত কাজ চলে জাহাজ নির্মাণের। অক্সিজেন কোম্পানির ঠিক বিপরীত পাশে এক শ’ গজ দূরেই একটি খাবার হোটেল। সেখানে তিন বেলা রান্নার কাজ চলে। দশ হাত দূরে রয়েছে একটি স’মিল। সেখানে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে দিনরাত কাঠ চেরাই চলছে। এর কোনো একটি উৎস থেকে আগুনের অংশ যদি অক্সিজেন কোম্পানিতে লাগে তবে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

এ তুলনায় এসবি অক্সিজেন প্ল্যান্ট অনেকটাই নিরাপদ। এটির আশপাশে কোনো ঘনবসতি নেই । তবে কোনো অনুমতি ছাড়াই সিলিন্ডার রিফিল করছে প্রতিষ্ঠানটি

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রকি অক্সিজেনের মালিক মো. খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমার সব প্রতিষ্ঠানের অনুমতি রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, ওষুধ প্রশাসন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার লাইসেন্স রয়েছে। যেখানে কোম্পানি করেছি সেখানে কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ’

বিস্ফোরক পরিদপ্তর খুলনার পরিদর্শক ড. মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিকেল ও ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের কিছু কিছু উপাদানের মাত্রা একেবারেই ভিন্ন। ফলে দুটির উৎপাদন ও পরিশোধন পদ্ধতি ভিন্ন। মেডিক্যাল অক্সিজেন পরিশোধনে বিশুদ্ধতার মাত্রা থাকে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশের ওপরে। এতে দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও পানির মিশ্রণ থাকে। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন পরিশোধনে বিশুদ্ধতার মাত্রা থাকে ৯০ শতাংশের নিচে । এই অক্সিজেনের সাথে বায়ুমন্ডলের অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণের মাত্রা থাকে বেশি। যা দিয়ে ভারি লোহা ও ধাতব পদার্থ গলিয়ে ফেলা ও কাটা হয়। এটা মানুষের শরীরে জন্য ক্ষতিকর। এসবি বা রকি অক্সিজেনের কোনো লাইসেন্স বা অনুমোদন নেই।’

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. তাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিক্যাল অক্সিজেনের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও পানির মিশ্রণের মাত্রা একেবারে কম বিধায় তা শরীরের জন্য সহনীয়। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনে বিশুদ্ধতার মাত্রা অনেক কম থাকে। অক্সিজেনের সঙ্গে মিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের গ্যাস শরীরের রক্ত, ফুসফুস ও ব্রেইনসহ বিভিন্ন কোষকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।’

এ বিভাগের আরো খবর