রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে রক্তশূন্যতা ধরা হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে একে বলা হয় অ্যানিমিয়া। হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করা। হিমোগ্লোবিন রক্তের লোহিত কণিকায় থাকে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৪ থেকে ১৭ গ্রাম। নারীদের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম। এ মাত্রা কমে নারী ও পুরুষ উভয়ের রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
রক্তশূন্যতা কেন হয়, বিশেষত নারীরা কেন এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন, সে বিষয়ে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও হেমাটোলজিস্ট মনিরুল ইসলাম।
রক্তশূন্যতা কেন হয়
বিভিন্ন কারণেই রক্তশূন্যতা হতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো আয়রন। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে। একে বলে ‘আয়রন ডেফিসিয়েন্সি এনিমিয়া’। এ ছাড়া ভিটামিন-বি ও ফলিক অ্যাসিডের অভাব, দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ কিছু রোগ, যেমন: কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া, যক্ষা, ব্লাড ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে।
আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতার হারই সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। নারীদের মধ্যে এর হার বেশি।
বাংলাদেশে নারীদের গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতার হার সবচেয়ে বেশি। এই রক্তশূন্যতার কারণে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হতে পারে।
আয়রনের ঘাটতির কারণ
সাধারণত অপুষ্টির কারণে আয়রনের ঘাটতি হয়। খাদ্যে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকলে এ অভাব দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় নারীদের বাড়তি আয়রনের প্রয়োজন, কিন্তু দেখা যায় আমাদের দেশে গর্ভবতী মায়েরা অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের সুযোগ পান না।
আরও একটি কারণে নারীরা আয়রনের ঘাটতিতে ভোগেন। সেটি হলো ঋতুস্রাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। আবার দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষরণ হলেও আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। পেপটিক আলসার, পাইলসের মতো জটিলতার কারণেও আয়রনের ঘাটতি হয়ে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
- চোখ-মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
- দুর্বল লাগা
- মাথা ঘোরা
- বুক ধড়ফড় করা
- মাথাব্যথা
- বমি বমি ভাব
- চোখে ঝাপসা দেখা, মুখে ঘা
- রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্র হলে শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ লাগা। এমনকি হার্ট ফেইলিউরও হতে পারে।
সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষা করলেই রক্তশূন্যতা আছে কি না বোঝা যায়।
প্রতিকার
অ্যানিমিয়া প্রতিকারের মুলমন্ত্র খাবারে নিহিত। আপনি যদি রক্তশূন্যতায় ভোগেন, তাহলে সবার আগে নজর দেবেন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। আর চেষ্টা করতে হবে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতিকার না খুঁজে আগেই প্রতিরোধ করার। কারণ একবার কোনো রোগ হয়ে গেলে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কষ্টকর। আর গর্ভবতী মায়েদের সঠিক নিয়মে খাওয়া-দাওয়া আরও বেশি জরুরি। তা না হলে তিনি ও তার অনাগত সন্তান উভয়ের ওপরই প্রভাব পড়বে।
রক্তশূন্যতায় কী কারণে আয়রনের ঘাটতি হলো তা আগে জানতে হবে।
সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। এ ছাড়া আয়রনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন: কচুশাক, ডাঁটাশাক, পালং শাক, শিম ও শিমের বিচি, কাঁচা কলা, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, গরু-খাসির মাংসে প্রচুর আয়রন থাকে।
বাংলাদেশের নারীদের বিশেষ করে গর্ভকালীন একটা বড় সমস্যা রক্তশূন্যতা। একটু সচেতন হলেই এর সমাধান সম্ভব।