নাক ডাকার প্রবণতা থাকলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এতে আইকিউ তো কমেই, সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও ঝাপসা হতে শুরু করে।
ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার সমস্যায় অনেকে ভোগেন। আশপাশের মানুষের ঘুম নষ্ট হওয়ার অভিযোগও শুনতে হয় এমন মানুষকে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘নাক ডাকার প্রবণতা থাকলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ফলে আইকিউ তো কমেই, সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও ঝাপসা হতে শুরু করে। তাই হালকাভাবে না নিয়ে এর সমাধানের চেষ্টা করাটা জরুরি।’
কারণ
আমিনুল ইসলাম শেখ জানান, বেশ কিছু কারণে মানুষ নাক ডাকতে পারে।
১. শরীরের বাড়তি ওজন, গর্ভাবস্থা ও কিছুটা বংশগত কারণ।
২. অ্যালার্জি, নাক বন্ধ হওয়া অথবা নাকের ভিন্ন গঠন। এসব কারণে নাকের ভেতরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে না ও নাক ডাকার সৃষ্টি হয়।
৩. মদ্যপান, ধূমপান ও বিশেষ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
৪. বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে চামড়া ঝুলে যায়, পুরু হয় ও গলার কিছু পেশি ফুলে যায়। এ কারণে বয়স্করা নাক ডাকেন তুলনামূলক বেশি।
মুক্তির উপায়
নাক ডাকা পেতে মুক্তি পেতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডা. আমিনুল ইসলাম শেখ।
অতিরিক্ত ওজন কমানো
শরীরের অতিরিক্ত ওজন নাক ডাকার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাড়তি ওজন নাকের ভেতরে বাতাস চলাচলের জায়গা সংকীর্ণ করে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের সময় শব্দের সৃষ্টি করে। তাই ওজন কমালে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত হওয়া সম্ভব।
শোয়ার অবস্থান সঠিক করা
শোয়ার অবস্থানের কারণেও কেউ নাক ডেকে থাকতে পারে।
সোজা ও চিৎ হয়ে শোয়ার কারণে জিহ্বা ও নরম তালু পেছনের দিকে হেলে যায়। এ কারণে মুখের ভেতরে বাতাস চলাচলের জায়গাটা আটকে যায় ও শব্দের সৃষ্টি হয়। ডান কাতে শোয়া এ ক্ষেত্রে খুবই ভালো একটি সমাধান। বাম কাতে শোয়ার জন্য বুকের ওপর বেশি চাপ পড়তে পারে।
অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বা ছেড়ে দেয়া
অ্যালকোহল গ্রহণ শুধু নাক ডাকা নয়, শরীরের বিভিন্ন সমস্যার জন্য দায়ী। এটি বিভিন্ন পেশিকে অনেক বেশি শিথিল করে দেয়। ফলে শিথিল মাংস পেশিগুলো মুখের ভেতরে জায়গা আটকে দেয়। তাই যারা মদ্যপান ছাড়তে পারছেন না, তারা নাক ডাকার হাত থেকে রেহাই পেতে এখনই সচেষ্ট হোন।
পর্যাপ্ত ঘুম
আপনার যদি দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম (৭ থেকে ৯ ঘণ্টা) না হয়ে থাকে, তাহলে নাক ডাকা বেড়ে যেতে পারে কিংবা হঠাৎ করে শুরুও হতে পারে। অতিরিক্ত ক্লান্তি শরীরের পেশিগুলোকে অলস করে দেয়, যা নাক ডাকার আরেকটি কারণ।
নাক পরিষ্কার করা
নাক বন্ধ থাকার জন্যও নাক ডাকার সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্যই অনেকে যারা কখনোই নাক ডাকেন না, তারাও নাক ডাকছেন বলে ঘরের লোকজন জানান। ঠান্ডাজনিত কারণে আপনার নাক বন্ধ হয়ে থাকলে শোয়ার আগে গরম পানির ভাপ নিয়ে যথাসম্ভব নাক পরিষ্কার করে ফেলুন।
ধূমপান ছেড়ে দেয়া
সিগারেটের ধোঁয়া নাকের ভেতর ও গলার মেমব্রেন টিস্যুর ক্ষতি করে। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
বালিশে ভারসাম্য
ঘুমানোর সময় একটি বাড়তি বালিশ নিয়ে মাথাটা একটু উঁচু জায়গায় রেখে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। মাথা উঁচু থাকলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শুধু মাথা ও বুকের দিকটাতেও যেন সামঞ্জস্য বজায় রাখে।
মেডিটেশন
মেডিটেশন বা ধ্যান শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম সমাধান। ধ্যানের মাধ্যমে আপনার অজানা অনেক সমস্যার সমাধানও হতে পারে। হয়তো এর মাধ্যমে আপনি নাক ডাকা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপাদান
এ ছাড়া প্রাকৃতিক কিছু উপাদান যেমন এলাচ, হলুদ, মধু, ঘি এবং অলিভ অয়েল এগুলো খেলেও নাক ডাকাসহ শরীরের নানা সমস্যার সমাধান মিলতে পারে, তবে এগুলো কী পরিমাণে খাবেন বা আদৌ খাবেন কি না, সে বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেয়া সর্বোত্তম।
নাক ডাকা খুব দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।