বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ ও বাঁচার উপায়

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২৩ ১৫:০৫

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে প্রথমেই কথা জড়িয়ে যায়। হাত-পা একদিকে অবশ হয়ে যায়। হাঁটতে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ পড়ে যেতে পারেন বা কাজ করতে গিয়ে টেবিলে পড়ে যেতে পারেন।

বিশ্বজুড়ে অসুস্থতাজনিত মৃত্যুর অন্যতম কারণ স্ট্রোক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ডেটা অনুযায়ী, ২০২০ সালে কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত প্রতি ছয়জনের একজনের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।

স্ট্রোক কী

স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এতে মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু হয়। তাই পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি কার্যক্ষমতা হারায়।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেসের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিরাজী শাফিকুল ইসলাম জানান, স্ট্রোকের রোগীকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নেয়া জরুরি। এ সময়ের মধ্যে চিকিৎসা দেয়া না গেলে রোগীর ক্ষতি বেশি হয়, কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম থাকায় রোগী আসে দেরিতে।

সিআরপির ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাধারণত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে। প্রথমটি মস্তিষ্কের রক্ত সংরোধজনিত এবং দ্বিতীয়টি রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক। দুই কারণেই মস্তিষ্কের কিছু অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।’

লক্ষণ

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে প্রথমেই কথা জড়িয়ে যায়। হাত-পা একদিকে অবশ হয়ে যায়। হাঁটতে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ পড়ে যেতে পারেন বা কাজ করতে গিয়ে টেবিলে পড়ে যেতে পারেন।

হঠাৎ করে রোগী অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে বা কাজে অমনোযোগীও হয়ে যেতে পারে। আবার এমন হতে পারে হাঁটতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন।

চিকিৎসকেরা এই লক্ষণগুলোকে সংক্ষেপে BE FAST বলে থাকেন।

এখানে B মানে Balance, অর্থাৎ ভারসাম্য রাখতে না পারা। E মানে Eye, অর্থাৎ হঠাৎ চোখে দেখতে না পাওয়া। F মানে Face, অর্থাৎ মুখ যদি একদিকে বেঁকে যায়।

A মানে Arm, অর্থাৎ হাত অবশ হয়ে যাওয়া। S মানে Speed, অর্থাৎ গতি কমে যাওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া। T মানে Time, অর্থাৎ যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া।

অধ্যাপক শিরাজী জানান, স্ট্রোক দুই ধরনের হয়। ১. রক্তনালি ব্লক হয়ে যায়; ২. মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ।

তিনি বলেন, ‘লক্ষণগুলো দেখা দিলে যদি সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়া যায়, তাহলে তাকে একটি ইনজেকশন দিতে হয়। এর নাম অ্যাল্টিপ্লেস।’

যদি কোনো রোগীর মস্তিষ্কের রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ ব্লক হয়ে যায় তাহলে এই ইনজেকশনে বন্ধ রক্তনালি খুলে যাবে। এতে স্ট্রোকে প্যারালাইজড হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সাড়ে চার ঘণ্টা পার হলে কী করবেন

অধ্যাপক শিরাজী বলেন, ‘সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসা হতে পারে। এটি অনেক দেশেই চালু রয়েছে। ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, আমেরিকায় সাড়ে চার ঘণ্টা পার হলেও স্ট্রোকের ট্রিটমেন্ট দেয়া যায়। এখন বাংলাদেশেও আমরা সেটি চালু করে করেছি।

‘এ ক্ষেত্রে এই রোগীকে এনজিওগ্রাম করে ব্রেনের ভেতর থেকে ওই জমাট রক্ত বের করে আনা হয়। এই বের করে আনার পদ্ধতিকে বলে মেকানিক্যাল থ্রম্বেকটমি। এটি লক্ষণ দেখা দেয়ার ৯ ঘণ্টার মধ্যে করা হয়। এই চিকিৎসা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস হসপিটালে রয়েছে। ইউনাইটেড হসপিটালেও আমরা চালু করতে যাচ্ছি।’

স্ট্রোকের কারণ

অধ্যাপক শিরাজী জানান, উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরল, চর্বি বেশি জমলে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে বা মদ্যপান করলে, ধূমপান, তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন করলে, পরিবারের কারও রোগের ইতিহাস থাকলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সাধারণত ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষদের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ কারণে মা, খালা, বাবা, চাচাদের মধ্যে কারও স্ট্রোক হয়ে থাকলে বয়স ৪০-এর বেশি হলে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে বয়স ৪০ বছরের কম হলেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

শিশু বা গর্ভবতী মায়েরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। যেসব শিশু আক্রান্ত হয়, তাদের সাধারণত জন্মগত ত্রুটি থাকে অর্থাৎ তাদের মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি চিকন হয়ে যায় এবং একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়।

স্ট্রোকের আরেকটি কারণ হৃদরোগ বলে জানান চিকিৎসকরা।

জন্মনিরোধক পিল ও ইনজেকশন স্ট্রোকের আরেকটি কারণ হতে পারে। যারা এই পিল ও ইনজেকশন নেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাদের রক্ত ঘন থাকে এবং কম বয়সে স্ট্রোক হতে পারে।

জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নারীরা কোন পিল খাবেন, কীভাবে নিরাপদে খাবেন বা খাবেন কি না, সেটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে। নিরাপদ হচ্ছে ‘কপার ট্রি’ ব্যবহার করা। এটি একটি ডিভাইস যা জরায়ুর মধ্যে রেখে দেয়া হয়। এটি ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। তা ছাড়া ছেলেদের কনডম ব্যবহার করতে হবে।

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলে পানিস্বল্পতা এবং অস্ত্রোপচারের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। সাধারণত সিজার হওয়ার ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। তাই সিজারের পর পানি খেতে হবে বেশি।

স্ট্রোকের ঝুঁকি রোধে করণীয়

চিকিৎসকেরা জানান, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়। যেমন: উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জানা ও নিয়ন্ত্রণ করা। ধূমপান না করা এবং মদ্যপান না করা বা বিরত থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম করা।

এ ছাড়া শাকসবজি বেশি খাওয়া, মাখন বা ঘি কম খাওয়া, খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ কমানো, রক্তে কোলেস্টরেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, শরীরের ওজন ঠিক রাখা ও দুশ্চিন্তা না করার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

এ বিভাগের আরো খবর