একটা ডিম, একটু ডাল আর ভাত হলে অনেকের হয়তো আর কিছু লাগে না। অভ্যাসবশত তারা হয়তো প্রতিদিনই একইভাবে ডিম খেয়ে থাকেন। অথচ সেভাবে ডিমটি খাওয়ার ফলে শরীর যথাযথ পুষ্টি পায় কি না, তা হয়তো তারা জানেন না।
ডিমের উপকারিতা এবং সেটি কীভাবে খেতে হয়, তা একটি ভিডিওতে তুলে ধরেছেন পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকা। এ পরামর্শগুলো তার ভাষাতেই তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।
‘বিশ্বের সেরা সুপারফুড’
ডিম নিয়ে আসলে এত এত বেশি প্রশ্ন এবং অ্যাকচুয়ালি এই প্রশ্নটাই কমনলি থাকে যে, ডিমটা কোন প্রসেসে খেলে সবচাইতে ভালো হবে। ডিম কি আসলে সবার জন্য প্রযোজ্য কি না, এই প্রশ্নটাও থাকে।
আমি একটা কথা সবসময় বলে থাকি যে, ডিম হলো ওয়ার্ল্ড’স বেস্ট সুপারফুড। অর্থাৎ আর কোনো প্রোটিন যদি আমি না খাই, শুধু ডিম দিয়ে আমার প্রোটিনের চাহিদাটা কিন্তু পূরণ হয়ে যায়। কারণ পৃথিবীর যেকোনো দেশে গেলে আমরা এই একটা প্রোটিনকে নিশ্চিত করতে পারি এবং এটাকে আমরা সহজেই খেতে পারি।
ডিমের মতো একটি খাবারকে যখন আমি খাদ্যতালিকায় যোগ করব, আমি যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং প্রচুর পরিমাণে মাইক্রো এবং ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট পেয়ে যাব, তখন কিন্তু আমাকে এই খাবারটা খাদ্যতালিকায় রাখতেই হবে।
প্রোটিনের উৎস
আমাদের বডিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রয়োজন হয় এবং সেটা কিন্তু প্রোটিন থেকে আসে। ডিম এমন একটা প্রোটিনের সোর্স যেখান থেকে খুব ভালো অ্যামাইনো অ্যাসিড আমরা পাই।
ডিমে যে প্রোটিন আছে অ্যালবুমিন, এটা কিন্তু ডিম ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো খাবারে নাই। এই অ্যালবুমিনটা আমাদের বডির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের অনেকগুলো অর্গানের সাথে, অনেকগুলো রোগের জন্য এই অ্যালবুমিনটা কিন্তু ইনটেক করতে হয়। এটাকে রেফারেন্স প্রোটিন বলা হয়। অর্থাৎ আপনি অন্য প্রোটিন খেতে পারছেন না, তাহলে ডিমের মতো প্রোটিনকে আপনি খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। কারণ আপনার বডির যে সেল রিপেয়ারমেন্ট (নতুন কোষ তৈরি) থাকে, বিশেষ করে একজন ক্যানসার রোগীর প্রচুর সেল নষ্ট হয়, তখন তার ট্রিটমেন্টের একটা মেজর পার্ট, তার ডায়েটের একটা মেজর পার্ট থাকে কিন্তু এই ডিম। একজন ক্যানসার পেশেন্টকে পার ডেতে আমাদেরকে অনেক সময় পাঁচ থেকে ছয়টা করেও কিন্তু ডিম খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হয।
সামটাইমস যিনি কিডনি ডিজিজে ভোগেন, তিনি যদি ডায়ালাইসিসে চলে যান, সে সময় তাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আমাদেরকে দিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে ডিম থেকেই কিন্তু আমরা ম্যাক্সিমাম সময় রিকভার করে থাকি।
কোন প্রক্রিয়ায় খেতে হবে
এখন আসি যে, ডিমটা আসলে কোন প্রসেসে খেতে হবে। প্রত্যেকটি খাবারেরই কিন্তু প্রসেসিং অবস্থায় পুষ্টিগুণটা নষ্ট হয়ে যায়। ডিমটা যখন আমরা বয়েল ফরমে (সিদ্ধ করে) খাব, তখন কিন্তু ফুল নিউট্রশনটা পাব; ক্যালোরিটা পুরোটা পাচ্ছি এখানে আমরা, কিন্তু একটা বিষয় তখন পাই না। সেটা হলো যে, বয়েল করার কারণে প্রোটিন ঠিক আছে, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টও ঠিক আছে, কিন্তু ফ্যাট সলুয়েবল যেসব ভিটামিনগুলো আছে, ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’, ‘ই’, ‘কে’, এই চারটা জিনিস কিন্তু শুধু বয়েল করে খেলে অনেক সময় পাওয়া যাবে না, কিন্তু আমরা বয়েল ডিমের সাথে যদি অন্য একটা ফ্যাট, লাইক দুধ খেয়ে নিই, পাশাপাশি দুধ এবং ডিম খেয়ে নিই, তাহলে দুধের ফ্যাট, ডিমের ভিটামিন এ,ডি, ই, কে এই চারটাকে ধারণ করছে।
যদি আমি ডিম খেতে না পারি, তাহলে আমি কী করব? তাহলে হয়তো ব্রেডের সঙ্গে যদি একটু বাটার নেওয়া হয় বা সামটাইমস অনেক সময় আছে যে, ডিমটা খেলাম, একটু বাটার খেলাম। তাতেও কিন্তু আমাদের কাজ হবে অথবা ডিমটাকে এভাবে খাওয়া যেতে পারে, সপ্তাহে তিন দিন বয়েল করে খেলাম, চার দিন আমি পোচ করে খেলাম। অর্থাৎ জাস্ট ফ্রাইপ্যানে তেলটাকে দিয়ে বা বাটারটাকে দিয়ে ডিমটাকে ছেড়ে দেওয়া হলো। সে ক্ষেত্রে ক্যালোরিটা বেড়ে গেল। অর্থাৎ প্রত্যেকটা উপাদান পাওয়া গেল।
অধিক তাপ দেওয়া যাবে না
খেয়াল করতে হবে ডিমটি কিন্তু অধিক তাপ দেওয়া যাবে না। যখন আপনি অধিক তাপে ডিমটাকে কুক করবেন, সে ক্ষেত্রে ডিমের প্রোটিনটা কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে। অনেকগুলো মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টই কিন্তু তখন চলে যায়।
ডিমটাকে অনেক সময় আছেন অনেকে ডুবো তেলে দিয়ে দিচ্ছেন। আমি বলি যে, জাস্ট ফ্রাই প্যানে বসাবে। চুলাতে জাস্ট এক চামচ তেলটাকে ব্রাশ করবে। সাথে সাথে ডিমটাকে ছেড়ে দেবে। অর্থাৎ হিট করবে না। তেলটাকে হিট না করে ডিম ছেড়ে দিতে হবে।
অমলেটে সতর্কতা
আরেকটা ফরমে অনেকে খায়। সেটা হলো ডিমটাকে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ দিয়ে অমলেট করে খায়। এই ফরমটাকে যদি আমি নিউট্রিশনাল (পুষ্টিগত) দিক থেকে ক্যালকুলেট করি, তাহলে আমি ডিসকারেজই (নিরুৎসাহিত) করব। কারণ এতে অনেক কিছু যোগ করা হয়। টেস্টটা অনেক বাড়ে। খেতে খুব ভালো লাগে, কিন্তু অনেকক্ষণ চুলোতে থাকার কারণে, তাপের কারণে এখানে কিন্তু প্রোটিনটা নষ্ট হয়ে যায়।
ওয়াটার পোচ
যেহেতু আমি মেইনলি প্রোটিনের জন্য ডিমটা খাব, তাহলে আমাকে প্রোটিন নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বয়েল ফরমটা আমার কাছে বেস্ট মনে হয়। সেকেন্ড অপশন হলো ডিমটাকে পোচ করে খাওয়া। আরেকটা প্রসেস হলো যারা হার্টের রোগী বা যাদের বডিতে অনেক বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে, তাদের বলব ওয়াটার পোচ (সামান্য গরম পানিতে পোচ) করে খাওয়ার জন্য। সে ক্ষেত্রে কিন্তু ডিমটা শরীরের জন্য অনেক উপযোগী এবং এটা সহজে হজমযোগ্য কিন্তু আমাদের হয়।
অনেকে আছে স্ক্রাম্বল এগ (ডিমের ঝুরি ভাজা) করে। এ ক্ষেত্রে বলব যে, স্ক্রাম্বল এগ করার ক্ষেত্রে অনেকে আছে একটু ভেজিটেবল মিক্স করে নেন। এখানে আমরা একটু ঘি বা বাটার অ্যাড করে নিতে পারি।
অনেকে এটাতে একটু সুগার ইউজ করেন। এখানে বরং আপনি, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, টমেটো দিয়ে খুব দ্রুত, অর্থাৎ খুব অল্প সময়ে স্ক্রাম্বল করা যায়। স্ক্রাম্বল এগও আমাদের নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টটা ভালো রাখে। অনেকক্ষণ আমাদেরকে তাপ দিতে কিন্তু হয় না।
ডেজার্ট
আরেকটা ফরম যদি বলি, ডিমের তৈরি যে ডেজার্ট, লাইক হলো আমরা যদি পুডিংয়ের কথা বলি, দুধ এবং ডিম যোগ করে যে পুডিংটা করা হয়, সেটা ভাপে বা মাইক্রোওয়েভে করা হয়। এটাতেও কিন্তু পুষ্টিগুণটা একেবারে ঠিক থাকে।
সো এই ফরমগুলোতে যদি আমরা ডিমটাকে খাই, তাহলে প্রোপার পুষ্টি কিন্তু আমরা নিশ্চিত করতে পারব।