বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে রোগের কারণে যত মানুষ মারা যায় তার ২ দশমিক ৮২ শতাংশেরই নেপথ্য কারণ লিভার-সংশ্লিষ্ট নানা রোগ। আশঙ্কার তথ্য হলো, দেশের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটিলিভারে আক্রান্ত।
স্বাধীনতার পর দেশের স্বাস্থ্য সেবায় প্রভূত উন্নতি সত্ত্বেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উন্নত স্বাস্থ্য সেবা থেকে আজও অনেকাংশে বঞ্চিত রয়ে যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় গ্রাম ও শহরের লিভার-সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা সেবার বিভাজন দূরীকরণে অনলাইন সেবা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে কার্নিভাল কেয়ার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এ রহিম ও কার্নিভাল কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. ফারশিদ ভূইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্নিভাল কেয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে স্পেশালাইজড লিভার সেন্টার। লিভার রোগের যেকোনো চিকিৎসার পরামর্শ পাওয়া যাবে কার্নিভাল কেয়ারের ওয়েবসাইট অথবা হটলাইন নম্বরে যোগাযোগের মাধ্যমে।
বক্তারা বলেন, লিভার সিরোসিস রোগের অন্যতম প্রধান কারণ ফ্যাটিলিভার। দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ ফ্যাটিলিভারে আক্রান্ত। হেপাটাইটিসবি-তে আক্রান্ত দেশের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ। বিভিন্ন জেলায় রয়েছে হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অসংখ্য রোগী। এসব রোগীর অধিকাংশই যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।
লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্নিভাল কেয়ারের মাধ্যমে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবের নেতৃতে একদল সুদক্ষ লিভার বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন জটিল লিভার রোগের অত্যাধুনিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেবেন।
বিশেষজ্ঞ বক্তারা বলেন, লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (আরএফএ), ট্রান্স আরটারিয়াল কেমো অ্যামবোলাইজেশন (টেইস), লিভার সিরোসিসের চিকিৎসায় আধুনিক স্টেম সেল থেরাপি, লিভার ডায়ালাইসিস, প্লাজমা এক্সচেঞ্জসহ সব লিভার রোগের অত্যাধুনিক চিকিৎসা রয়েছে।
কার্নিভাল কেয়ারের ওয়েবসাইট ভিজিট/হটলাইনে ফোন করে রোগী তার শারীরিক সব সমস্যা একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে বলবেন। তিনি পরবর্তীতে সেই রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে অনলাইনে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেবেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কার্নিভাল কেয়ারের টেকনোলজিস্ট রোগীর বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন। পরবর্তীতে রোগী রিপোর্ট নিয়ে অনলাইনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারবেন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা অথবা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করবে কার্নিভাল কেয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. মামুন আল-মাহতাব বলেন, ‘বাস্তবতার নিরিখে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেকেই চিকিৎসা কিংবা পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে পৌঁছতে পারেন না। এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে অনেক রোগী আমাদের কাছে আসেন যারা পরবর্তী ফলোআপ চিকিৎসা নিতে জটিলতার সম্মুখীন হন। এই প্লাটফর্ম সেসব সমস্যার সমাধান করবে আশা করছি।’
দেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসায় নতুন মাত্রা যোগ করতে স্বাস্থ্যসেবা খাতে কার্নিভাল কেয়ার প্লাটফর্মে বিনিয়োগ করেছে ডটলাইনস গ্রুপ। এই গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহবুবুল মতিন মনে করেন, করোনাকালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার সক্ষমতা ধরে রেখেছে টেলিমেডিসিনের মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষ স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি রোগ নির্ণয়ের নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রযুক্তি খাতের এই উদ্যোক্তা।
কার্নিভাল কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. ফারশিদ ভূইয়া বলেন, ‘সঠিক পরামর্শ ও দিকনির্দেশনার মাধ্যমে লিভার রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করাই কার্নিভাল কেয়ারের লক্ষ্য।