বিকল্প ওষুধ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে মেথি। ভারতীয় উপমহাদেশে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত একটি উপকরণ এটি। সম্পূরক খাবার হিসেবেও অনেকে মেথি খেয়ে থাকেন।
মেথি অনেক ধরনের স্বাস্থ্যগত উপকারে আসতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইন।
এতে বলা হয়, হাজার বছর ধরে ত্বকসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে বিকল্প ওষুধ হিসেবে মেথি ব্যবহার হয়ে আসছে। বাসাবাড়িতে এটি মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। এর বাইরে সাবান ও শ্যাম্পুর মতো পণ্যে মেথি মেশানো হয়।
মেথির উপকারিতা
মেথির বেশ কিছু উপকারিতা তুলে ধরেছে হেলথলাইন।
বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়ক
শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির সবচেয়ে বড় উৎস মায়ের বুকের দুধ, তবে অনেক মাকে স্তন্যদানের জন্য প্রয়োজনীয় দুধ পেতে বেগ পেতে হয়।
বুকে যথেষ্ট পরিমাণ দুধ আসতে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে থাকেন। এর বাইরে নিরাপদ ও প্রাকৃতিক বিকল্প হতে পারে মেথি খাওয়া।
প্রথমবারের মতো মা হওয়া ৭৮ নারীর ওপর ১৪ দিনের এক গবেষণায় দেখা যায়, মেথি দানা মিশিয়ে হারবাল চা পানে বুকের দুধ বাড়ে, যা শিশুর ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।
পুরুষের টেস্টোস্টেরনের ওপর প্রভাব
অনেক পুরুষ সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরন বাড়াতে মেথি খেয়ে থাকেন। কিছু গবেষণা অনুযায়ী, এ হরমোন বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে মেথি। এতে যৌনআকাঙ্ক্ষা বাড়ে।
এক গবেষণায় দেখা যায়, দিনে দুইবার ৩০০ মিলিগ্রাম করে মেথি আট সপ্তাহ ধরে খাওয়ার পাশাপাশি শক্তিবর্ধক ব্যায়াম করলে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। এ বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার।
ডায়াবেটিস ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে মেথি। এক গবেষণায় দেখা যায়, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে যারা দিনে দুইবার ৫ গ্রাম করে মেথির গুড়া খেয়ে থাকেন, তাদের রক্তে শর্করার হার বৃদ্ধি রোধ হয়। একই সঙ্গে পেটের মেদও কমে। মেথিতে উচ্চ পরিমাণে থাকা আঁশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন এমন লোকজনের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হতে পারে।
অন্যান্য উপকারিতা
বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা মোকাবিলায় মেথি ব্যবহার করা হয়। যদিও এ ধরনের ব্যবহার নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার মতো পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। প্রাথমিক গবেষণা বলছে, মেথি বেশ কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ
কিছু গবেষণায় দেখা যায়, মেথি খেলে চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ ও ক্ষুধা কমে। ১৪ দিনের এক গবেষণায় দেখা যায়, মেথি খাওয়ায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ ১৭ শতাংশ কমেছে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, মেথি রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
বুক জ্বালাপোড়া রোধ
দুই সপ্তাহের একটি পাইলট গবেষণায় দেখা যায়, প্রায়ই বুক জ্বালাপোড়া করা লোকজনের মধ্যে যারা মেথি খেয়েছেন, তাদের এ ধরনের লক্ষণ কমেছে। খাদ্যটির কার্যকারিতার সঙ্গে অ্যান্টাসিডের কার্যকারিতার মিল আছে।
প্রদাহ রোধ
ইঁদুরের দেহে প্রদাহ রোধে মেথি ভূমিকা রেখেছে, তবে এটি মানবদেহের ক্ষেত্রে কতটা কার্ককর, তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।