বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রসুনের উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২ মার্চ, ২০২৩ ০৯:১৬

‘আমরা যদি দেখি অতীতে যে কয়টি বিখ্যাত সভ্যতা ছিল, প্রাচীন ব্যাবিলন, মিসর, গ্রিস, রোম, চীন, ভারত; এই সকল বিখ্যাত প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত রসুন খেতেন। কেন তারা খেতেন, তারা জানতেন না। তারা রসুন খেতেন এবং সুস্থ থাকতেন, কিন্তু এখনকার কালের বিজ্ঞানীরা রসুনকে অ্যানালাইসিস (বিশ্লেষণ) করে তারা বলছেন যে, নিঃসন্দেহে রসুন একটি হারবাল ওয়ান্ডার ড্রাগ।’

বিশ্বজুড়ে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত একটি উপকরণ রসুন। ওষুধ হিসেবেও সুপ্রাচীনকাল থেকেই এটি ব্যবহার হয়ে আসছে।

রসুনের অনেক গুণের কথা বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের একজন কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কো-অর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান।

এক ভিডিওতে রসুনের নানাবিধ উপকারিতা এবং এটি কীভাবে খেতে হয়, তা তুলে ধরেছেন এ চিকিৎসক। বিষয়গুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।

‘ওয়ান্ডার ড্রাগ’

এখন আমরা একটি অতি পরিচিত খাবার নিয়ে আলোচনা করব, যা প্রত্যেক দিন আপনার রান্নাঘরে থাকে। রান্নার স্বাদ বৃদ্ধির জন্য, রান্নাকে আকর্ষণীয় করার জন্য প্রতিদিন এটি ব্যবহার করা হয়। সেটি হচ্ছে রসুন। অথচ এই রসুনটিই হতে পারে একটি ‘ওয়ান্ডার ড্রাগ’ যদি আপনি যথাযথভাবে তা গ্রহণ করতে পারেন।

আধুনিক অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার জনক হিপোক্রেটস। প্রাচীন গ্র্রিসের তিনি বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন। তার একটি বিখ্যাত উক্তি ‘লেট ফুড বি দাই মেডিসিন অ্যান্ড মেডিসিন বি দাই ফুড’। মানে আপনার খাদ্য এমনভাবে হওয়া উচিত, যা ওষুধ হবে; ওষুধের মতো কাজ করবে এই খাবার এবং যা আপনাকে সুস্থ রাখবে।

আমাদের খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার নির্বাচন করা উচিত, প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার থাকা উচিত, যা আমাকে সুস্থ, কর্মময়, দীর্ঘ জীবনের দিকে নিয়ে যাবে। তেমনই একটি ওষুধ হচ্ছে রসুন, যেটিকে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি হারবাল ওয়ান্ডার ড্রাগ।

রসুন কেন ‘বিস্ময়কর ওষুধ’

আমরা যদি দেখি অতীতে যে কয়টি বিখ্যাত সভ্যতা ছিল, প্রাচীন ব্যাবিলন, মিসর, গ্রিস, রোম, চীন, ভারত; এই সকল বিখ্যাত প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত রসুন খেতেন। কেন তারা খেতেন, তারা জানতেন না। তারা রসুন খেতেন এবং সুস্থ থাকতেন, কিন্তু এখনকার কালের বিজ্ঞানীরা রসুনকে অ্যানালাইসিস (বিশ্লেষণ) করে তারা বলছেন যে, নিঃসন্দেহে রসুন একটি হারবাল ওয়ান্ডার ড্রাগ।

কী আছে রসুনে

কী রয়েছে রসুনে। রসুনে রয়েছে অসাধারণ ঔষধি গুণাগুণ এবং এর ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে সালফার কম্পাউন্ডের মধ্যে এবং এটি কখন তৈরি হয়? যখন আপনি কাঁচা রসুন কাটবেন, থেঁতলাবেন অথবা চিবাবেন। এমনি সময় কিন্তু এটা থাকে না, কিন্তু যেই আপনি এটা চিবিয়ে চিবিয়ে খাবেন; এই সালফার কম্পাউন্ড তৈরি হতে থাকবে এবং এই সালফার কম্পাউন্ডই হচ্ছে আপনাকে কাঁচা রসুনের গুণ উপহার দেবে। অর্থাৎ এই কাঁচা রসুনের গুণাগুণ রয়েছে সালফার কম্পাউন্ডের মধ্যে এবং গুরুত্বপূর্ণ সালফার কম্পাউন্ড যা রসুনের মধ্যে পাওয়া যায়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যালিসিন, ডাইঅ্যালাইল ডিসালফাইড এবং এস-অ্যালাইল সিস্টিন।

‘অত্যন্ত পুষ্টিকর’

রসুন অত্যন্ত পুষ্টিকর একটা খাবার। রসুনে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১ এবং ভিটামিন বি৬। রসুনে রয়েছে বেশ কয়েকটি মিনারেল। যেমন: ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন।

কীভাবে খাবেন রসুন

নিয়মিত কাঁচা রসুন যখন খাবেন, এটি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করবে। সুস্থতা এমনি এমনি হয় না; এমনি এমনি আসে না। আমরা বলি সুস্থতা অর্জন করতে হয় এবং একজন মানুষ যদি সত্যি সত্যি সুস্থ থাকতে চান, তবে তাকে অবশ্যই তার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে হবে।

গবেষকরা বলছেন, কেউ যদি একটানা ১২ সপ্তাহ কাঁচা রসুন খান, তবে তার সর্দি-ঠান্ডা এবং ফ্লু প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। আমরা দেখেছি করোনাকালে করোনার কোনো ওষুধ নাই এবং করোনাকালে সুস্থ থাকার জন্য বহু মানুষ নিয়মিত কাঁচা রসুন খেয়েছেন এবং তারা করোনা থেকে মুক্ত ছিলেন। এমনকি করোনা হয়ে যাওয়ার পরও করোনা তাদের কিচ্ছু করতে পারে নাই। কারণ তাদের ইমিউন সিস্টেম অনেক অনেক শক্তিশালী ছিল।

ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়

কাঁচা রসুন যখন আপনি নিয়মিত খাবেন, আপনার রক্তের যে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল, টোটাল কোলেস্টেরল এবং এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকবে। এলডিএল কোলেস্টেরলই হৃদরোগ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। ফলে সহজেই আপনি এ রোগগুলো প্রতিরোধ করতে পারবেন।

রক্তকে তরল রাখে

কাঁচা রসুন আপনার রক্তকে তরল রাখতে সাহায্য করে। হৃদরোগীরা কী খান? প্রতিদিন নিয়ম করে একট অ্যাসপিরিন খান। অ্যাসপিরিন কী করে? তার রক্তকে তরল রাখতে সাহায্য করে।

আপনি যদি কাঁচা রসুন খান তাহলে তো রক্ত তরল থাকছে। অ্যাসপিরিন খাওয়ার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ কাঁচা রসুন প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল অ্যাসপিরিন হিসেবে কাজ করতে পারে এবং কাঁচা রসুন ন্যাচারাল অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করতে পারে।

মডার্ন অ্যান্টিবায়োটিকের ইতিহাস কত বছরের? ৯৪/৯৫ বছর। পেনিসিলিন ১৯২৮ সালে আবিষ্কৃত (উদ্ভাবন) হয়েছিল। ৯৪ বছর হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের ইতিহাস। তার আগে মানুষ কি অসুস্থ হয়েছে আর মরে গেছে? নো। তারা এমন কিছু ওষুধ খেতেন, এমন কিছু ন্যাচারাল ওষুধ খেতেন, যা তাদেরকে সুস্থ রাখত। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কাঁচা রসুন।

কাঁচা রসুন যখন আপনি নিয়মিত খাবেন, এটা ন্যাচারাল অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করবে। ফলে যেকোনো জায়গা কেটে গেলে সহজেই এটা শুকিয়ে যায়। কেননা তার রক্তের ভেতরে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ঘুরপাক খাচ্ছে কাঁচা রসুন।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট

কাঁচা রসুনে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে নানাভাবে ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করে। দেহের ভেতরে নানা রকম বর্জ্য পদার্থ তৈরি হচ্ছে সেলের (কোষ) ভেতরে এবং বাহির থেকে অনেক ক্ষতিকর পদার্থ আমাদের শরীরকে ক্ষতি করতে চেষ্টা করে। বাইরের এবং ভেতরের এসব ক্ষতিকর পদার্থকে প্রতিহত করতে পারে কাঁচা রসুনের ভেতর অবস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

ডিটক্স

কাঁচা রসুন একটি পাওয়ারফুল ডিটক্স। আমরা এমন এক সভ্যতায় বসবাস করছি, যেখানে কিছু অস্বাভাবিক খাবার এবং কেমিক্যাল সমৃদ্ধ খাবার আমাদেরকে অসুস্থ করে তুলছে। এ জন্যই এখন সারা বিশ্বব্যাপী ডিটক্স পদ্ধতি খুবই জনপ্রিয়। তিন দিনের, পাঁচ দিনের, সাত দিনের, ১৫ দিনের ডিটক্স করা হচ্ছে, যেন শরীরের ভেতরে যত ময়লা-আবর্জনা আছে, সব বের হয়ে যেতে পারে।

আপনি যখন কাঁচা রসুন খাবেন, এই কাঁচা রসুন শরীরের ভেতরের হেভি মেটালসকে বের করে দিতে সাহায্য করবে। সে জন্য কাঁচা রসুন পাওয়ারফুল ডিটক্স হিসেবে কাজ করে।

হাড়ক্ষয় প্রতিরোধ

কাঁচা রসুন মহিলাদের হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। মহিলাদের একটি বয়সের পর থেকে অ্যাস্ট্রোজেন হরমোন, যেটাকে ফিমেল হরমোন বলা হয়, এই অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে। আর অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ যখন কমতে থাকে, তখন সেই মহিলার হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হাড়ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য কাঁচা রসুন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কাঁচা রসুন খেলে অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের নিঃসরণ কিছুটা হলেও বাড়ে। ফলে হাড়ক্ষয় তুলনামূলক অনেক কম হয়।

দীর্ঘায়ু হওয়া

কাঁচা রসুন যখন আপনি খাবেন, আপনি দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হবেন; দীর্ঘ আয়ুর অধিকারী হবেন। ধীরে ধীরে আপনি সুস্থ, কর্মময় দীর্ঘ জীবনের দিকে যাত্রা করবেন। তাই কী করবেন? আমরা কী চাই? আমরা প্রত্যেকেই সুস্থ থাকতে চাই। আমরা প্রত্যেকেই সুস্থ, কর্মময়, দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হতে চাই।

এ লক্ষ্যে নিয়ম করে প্রতিদিন সকালবেলা হোক বা অন্য যেকোনো সময় ১ থেকে ২ কোয়া বা ২ কোষ কাঁচা রসুন খান এবং অবশ্যই অবশ্যই চিবিয়ে। আমরা এটুকু বলতে পারি আপনি সুস্থ, কর্মময়, দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হবেন।

পুরো ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করতে পারেন এই লিংকে

এ বিভাগের আরো খবর