বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওজন কমানোর উপায়, যা জানা জরুরি

  • প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ   
  • ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১১:৫৪

আমরা যখনই ওজন কমাতে মনস্থির করি, উদ্ভট কিছু উপদেশ আমাদের বিভিন্নজনে দিতে থাকে। ফেসবুকের আর্টিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আসে চটকদার সব বিজ্ঞাপন। যেমন: স্লিপিং টি/কফি, মেসেজ ক্রিম, মেসেজ মেশিন ইত্যাদি। নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত হাজারো চিন্তা আমাদের বিভ্রান্ত করতে থাকে।

দিনের পর দিন খাওয়া কমিয়ে, মাঝে মাঝে ব্যায়াম করে কিংবা উপবাস থেকে একটু-আধটু ওজন কমার পর কঠিন সংযম ছেড়ে দিলে আবার মুটিয়ে যেতে থাকে শরীর। এরপর নতুন করে সংযম শেষে ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। ওজন কমানোর এই ইঁদুর-বিড়াল খেলায় যারা চূড়ান্ত কোনো ফল পাচ্ছেন না, তাদের জন্য কিছু করণীয় ঠিক করে দিয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ইশরাত জাহান স্বর্ণা।

নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য এ চিকিৎসকের ভাষায় তুলে ধরা হলো স্থূলতা কমানোর কিছু উপায়।

আমরা যখনই ওজন কমাতে মনস্থির করি, উদ্ভট কিছু উপদেশ আমাদের বিভিন্নজনে দিতে থাকে। ফেসবুকের আর্টিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আসে চটকদার সব বিজ্ঞাপন। যেমন: স্লিপিং টি/কফি, মেসেজ ক্রিম, মেসেজ মেশিন ইত্যাদি। নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত হাজারো চিন্তা আমাদের বিভ্রান্ত করতে থাকে।

এদিকে আগে থেকেই প্রচলিত কিছু মিথ তো আছেই। যেমন: খালি পেটে লেবু মধু পানি, অ্যাপল সাইডার ভিনেগার অথবা ভাত বাদ দিয়ে কিটো ডায়েট।

ফেসবুকে গ্রুপে বিফোর-আফটার ছবি দেখে আমরা আরও হতাশ হই। কেউ লিখে মাত্র তিন মাসে এক্সারসাইজ ছাড়াই নরমাল ডায়েটে ১২ কেজি কমিয়ে ফেললাম। এসব দেখে আমরা কেউ ভাত খাওয়া ছেড়ে দিই, কেউ শুধু ফল খেতে থাকি, কেউ শসা বা মুড়ি খাই। অথচ আমাদের জীবনে সেই বিফোর-আফটার আর আসে না।

শারীরিক যেসব অসুস্থতার কারণে ওজন বাড়ে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমি একদম শেষে লিখব। শুরুতে অল্প করে বলছি। যদি কারও নিজের ওজন বৃদ্ধির কারণ নিয়ে প্রশ্ন থাকে, তিনি নিম্নোক্ত কয়েকটা ইনভেস্টিগেশন করিয়ে ফিটনেস জার্নি শুরু করতে পারেন।

১. ইউএসজি অফ হোল অ্যাবডোমেন

২. টিএসএইচ

৩. ওজিটিটি

ধরে নিচ্ছি আপনার সব রিপোর্ট নরমাল এসেছে। শুরুতেই আপনার মনে কী ধরনের প্রশ্ন আসে?

আমাকে কি ভাত খাওয়া একদম ছেড়ে দিতে হবে? আমি কি পছন্দের খাবারগুলো একেবারেই খেতে পারব না? শুনেছি ওজন কমাতে অনেক দামি দামি জিনিস কিনতে হয়। এক মাসে কি পাঁচ কেজি ওজন কমাতে পারব? ওজন কমে আসলে কি সব কিছু আবার খেতে পারব? এ রকম আরও অনেক প্রশ্ন আসে।

ওজন কত দিনে কমবে এটা নিয়ে কোনো টার্গেট করা জরুরি নয়; বরং আপনি প্রতি সপ্তাহে আপনার উন্নতি, অবনতি নজরদারিতে রাখুন লিখে লিখে।

সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১ পাউন্ডের কিছু বেশি ওজন কমানো স্বাস্থ্যকর। এটা নিয়েও বেশ কিছু মতপার্থক্য আছে। ধরুন, আপনি যদি আপনার একটা হাত কেটে ফেলেন, তাহলে কিন্তু চট করে বেশ অনেকটুকু ওজন কমবে, কিন্তু আপনি কি তা চান?

তাহলে একটু চিন্তা করুন ওজন কমলে আসলে কী কী কমার কারণে ওজন কমে। মাসল, বোনস, ওয়াটার, ফ্যাট এসব কিছুই কিন্তু কমলে ওজন কম দেখাবে। এখন খেয়াল করুন আপনি আসলে কী কমাতে চান? আমরা শুধুই চর্বি কমাতে চাই, মাসল, বোনস, প্রয়োজনীয় ওয়াটার সংরক্ষণ করতে চাই, উপরন্তু স্বাস্থ্যকর পেশিও গঠন করতে চাই।

সে কারণে যদি কেউ স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমায়, তার শরীরের ফ্যাট পার্সেন্টেজ কমবে। পাশাপাশি সুন্দর পেশি গঠন হতে থাকবে। এ জন্যই ওজন মেশিনে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন আসতে অনেক সময় লাগে। তাহলে কোন বিষয়টা দেখে আপনি নিজেকে উৎসাহিত করবেন? সেটা হলো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মাপ। যেমন: কোমর, হিপ, ব্রেস্ট লাইন, চেস্ট, আর্ম, ফোরআর্ম, থাই এ রকম।

ফিটনেস কমানোর জার্নিতে আপনি যখন দেখবেন আপনার গায়ে পোশাক ঠিকমতো লাগছে, তখন নিজেকে ধন্যবাদ দেবেন।

নাশতা কী খাব? নাশতা কি খুব জরুরি?

আমরা যে খাবারের স্বাদ উপভোগ করি, এটা আল্লাহতায়ালার অন্যতম নিয়ামত। যখন ওজন কমাতে গিয়ে আমরা ক্যালরি ডেফিসিটের (কমানো) চেষ্টা করি, তখন এই স্বাদের সঙ্গে মারাত্মক দ্বন্দ্ব বেধে যায়।

আপনার ডায়েট প্ল্যান কখনোই এমন হওয়া উচিত নয় যে, তিন দিন পালন করেই আপনি মন ভালো করতে উচ্চ ক্যলারির কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নিলেন; বরং আপনার শিখে নেয়া উচিত কেমন করে খেলে আপনি সঠিক ওজন ধরে রেখে প্রতিদিনের খাবার স্বাদে খেতে পারেন। এমনকি মাঝে মাঝে মুখরোচক অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলেও তা আপনার শরীর সয়ে নিতে পারে।

যার শরীরে পেশির পরিমাণ চর্বির চেয়ে বেশি, সে কিছুটা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারে। কারণ চর্বি তেমন কোনো ক্যালরি খরচ করে না, যেটা পেশি করতে পারে। আবার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পেশি ক্ষয় হওয়াটা একদম প্রাকৃতিক একটা বিষয়। এখানেই সঠিক ডায়েটের সঙ্গে এক্সারসাইজের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত শরীরচর্চা পেশি তৈরি করে এবং তা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, সে নিয়ম মেনে ডায়েট করার পরও ওজন কমছে না বা বেড়ে যাচ্ছে। সে যদি একটা ডায়েরিতে লেখে পুরো সপ্তাহে প্রতিদিন সে কী খেল, তাহলেই কিন্তু গলদটা কোথায় একদম পরিষ্কার হয়ে যায়।

বিষয়টা আরেকটু ভেঙে বলি। ডায়েট যদি সঠিক না হয়, ক্ষুধা লাগবেই। আর সে ক্ষুধা সামাল দিতে সে বিভিন্ন নাশতার আশ্রয় নেয়। আবার ডায়েট প্ল্যানেও হয়তো কিছু নাস্তা দেয়া ছিল।

আপনি যখনি ওজন কমাতে চাইবেন, পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে শরীরের ক্যালরি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে ক্যালরি ডেফিসিটটে থাকতে হবে। সারা দিন যা খাবেন, প্রতিটা দানা ক্যালরির হিসেবে ঢুকবে।

যেসব নাশতা কোনোভাবেই করা যাবে না

নুডুলস/পাস্তা

এগুলো একদম রিফাইন্ড কার্ব যা সম্পূর্ণ পুষ্টিবিহীন জাঙ্ক ক্যালরি। অনেকেই সবজি, চিকেন দিয়ে সুন্দর করে রান্না করেন। সবজি বা চিকেনের পুষ্টি অবশ্যই পাবেন, কিন্তু রিফাইন্ড কার্ব যে যে কারণে ক্ষতিকর, তার সব ক্ষতিই হবে। পাশাপাশি এগুলো রান্নায় অনেক বেশি তেল লাগে, যেটা আপনার চার্টের ফ্যাট ম্যাক্রোর সঙ্গে সহজে এডজাস্ট হওয়ার কথা নয়।

লেক্সাস বিস্কুট

কোনো বিস্কুটই ফিটনেস জার্নিতে খাওয়া উচিত নয়। বিস্কুট তৈরিতে সাধারণত ময়দা ব্যবহৃত হয়। আর স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহারের তো প্রশ্নই আসে না।

পিঠা/পায়েস/কেক/পুডিং

এগুলোতে প্রচুর চিনি ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এগুলো মূলত শর্করা জাতীয় খাদ্য। এটা ভোলা যাবে না।

যেসব নাশতা করা যাবে পরিমিত পরিমাণে

ফলের মধ্যে পেয়ারা, বাউকুল, সবুজ আপেল, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, কমলা, আনারস, পেঁপে, আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, খেঁজুর অবশ্যই পুষ্টিকর, তবে ওজন কমাতে সাংঘর্ষিক। এরা পুষ্টির সঙ্গে প্রচুর সুক্রোজ ও ফ্রুক্টোজ দেয়, যা কিনা দিন শেষে ক্যালরির হিসাবের দিক থেকে আপনাকে বিপদে ফেলে দেবে।

আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী ফল বেছে নিবেন, তবে অবশ্যই পরিমাণে কখনোই ২০০ গ্রামের বেশি নয়। যে বেলায় নাশতা হিসেবে ফল নেবেন, সে বেলায় অবশ্যই অন্য কোনো খাবার নয়।

জুস হিসেবে খেলে মহামূল্যবান, সহজে হজম করা যায় এমন ফাইবার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করলেন। স্মুদি খেতে পারেন, তবে তা অবশ্যই ক্যালরি হিসেবে মিলিয়ে নিতে হবে।

বাদাম (চিনা বাদাম দামে সাশ্রয়ী বেশি, ফ্রেশ পাওয়া যায়, তৈরি করার ঝামেলা নেই)। কাঠবাদাম হলে ৫ থেকে ১০টা। চিনাবাদাম হলে ২০টা বা ১০ গ্রামের বেশি নয়।

গরুর দুধ যেকোনো আর্টিফিশিয়াল প্রোটিন থেকে উন্নত খাবার। যদি কোনো ইন্টলারেন্স (খেলে অস্বস্তিবোধ) না থাকে নিয়মিত খেতে পারেন। এটা অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে। এক চামচ ইসবগুল বা চিয়া সিড মিলিয়েও খেতে পারেন। এগুলোর বাড়তি ক্যালরি নেই; বরং আপনার পেট ভরা রাখতে সাহায্য করবে। ১৫০ থেকে ২০০ মিলিলিটারের বেশি খাবেন না।

ওটমিল পরিজ যদি খেতে চান, সেটা কিন্তু তখন আর নাশতা না হয়ে একটা মিলই হয়ে যায়। ব্রেকফাস্টে খেতে পারেন মাঝে মাঝে, কিন্তু ওটসের পরিমাণ আপনার পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে এবং ইনস্ট্যান্ট ওটস না কিনে রোলড ওটস কিনতে হবে।

মনে রাখতে হবে দুধে প্রোটিন, গুড ফ্যাট থাকলেও আপনি একে শর্করা জাতীয় খাবার হিসেবে মাথায় রাখতে হবে।

টক দইয়ের সঙ্গে অল্প করে ফল বা বাদাম মিলাতে পারেন বা ইসবগুলের সঙ্গে একদম এক চামচের আট ভাগের এক ভাগ মধু খেতে পারেন।

শসাকুচি দিয়ে রায়তা করেও খেতে পারেন।

শসা, বাদাম, টমেটো, জিরা গুঁড়ো দিয়ে সালাদ করতে পারেন, কিন্তু মাপ ঠিক রাখবেন। টক দইয়ের পরিমাণ ১০০ মিলিলিটারের বেশি হওয়া ঠিক নয়।

সেদ্ধ ডিম শতভাগ বায়োএভেইলেবল ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন। আপনার সারা দিনের প্রোটিনের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। কুসুমের ফ্যাট হেলদি ফ্যাট। সেটি খেতে পারবেন।

কটেজ পনির কিউব আকারে কিনতে পাওয়া যায়। এটা অল্প বাটারে একটু সাউটিড করে নিতে পারেন। দুই থেকে তিন কিউব খেতে পারেন। পেট ভরা রাখে।

ডার্ক চকলেট একটা ম্যাজিক। কারণ এটি মিষ্টি ক্রেভিং, দুধ চা ক্রেভিং কমায়। নাশতার জন্য মনের যে অংশটা বারবার আমাদের খোঁচায়, সে তৃপ্ত হয় এই ডার্ক চকলেটে। আমুলের যেটা পাওয়া যায় সেটা ৫৫ শতাংশ ডার্ক এবং চিনিযুক্ত।

ডায়েট ডায়েরি ভালোবাসাও আছে বর্তমান লো ক্যালরি ফুডের লিস্টে। নিয়মিত এক্সারসাইজ আর সঠিক ডায়েট করে টার্গেট ওয়েটে আসেন। আর টার্গেট ওয়েটে থাকলেও নিয়মিত এক্সারসাইজ করেন।

এক্সারসাইজ আমাদের টিডিইই বাড়ায়, পেশি গঠন করে। তাহলে মাসে, দুই মাসে একটু অনিয়ম করে খেলেও বিপদ বাড়বে না।

এ বিভাগের আরো খবর