‘করোনা বিশ্বকেই পাল্টে দিয়েছে। কিডনি রোগীদের করোনা হলে ফল খুব খারাপ হয়। ডায়ালাইসিসের রোগীদের করোনা হলে ৫০ শতাংশই মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যারা সুস্থ হয়ে ওঠেন তাদেরও নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হচ্ছে। করোনায় আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগছেন।’
সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিলন হলে ‘কিডনি ডিজিজ রিসার্চ গ্রুপ’ আয়োজিত সিম্পোজিয়ামে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিএসএমএমইউ-তে করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে ‘মাল্টিটিউড অফ ইস্যুস ইন রেনাল, কার্ডিয়াক অ্যান্ড মেটাবলিক ইনফ্লুয়েন্স’ ও ‘লং টার্ম হেলথ কনসিকোয়েন্সেস অ্যাজ এ পোস্ট কোভিড-১৯ সিকোয়াল ইন হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক এই সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়।
সিম্পোজিয়ামে বলা হয়, ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের রোগীদের করোনা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি ৫০ ভাগ।
আবার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের ক্ষেত্রে করোনা টিকার কার্যকারিতা অনেক কম। করোনার টিকা ডায়ালাইসিস রোগীদের কার্যকারিতা শতকরা ৮৭ ভাগ। করোনার এই টিকা আবার নেফ্রাইটিস রোগের পুনরাগমন ঘটাতে পারে।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনায় আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগছেন। এ অবস্থা থেকে চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।
‘করোনায় বাংলাদেশে পেশাজীবীদের মধ্যে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়াও কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসকদের ৪০ ভাগ চিকিৎসক এবং ৩৪ ভাগ নার্স লং কোভিডে ভুগছেন। করোনায় যাদের ডায়াবেটিস ছিল না তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে। করোনায় অনেকের মায়োপ্যাথি হয়েছে।’
বিএসএমএমইউ-এর অর্থায়নে ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৮০৪ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর একটি প্রাথমিক গবেষণা করা হয়।
বিষয়টির উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চিকিৎসককে গবেষণার কাজ করতে হবে। একবার গবেষণার কাজ করলেই হবে না। ধারাবাহিকভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, ‘কোভিড শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বের অনেক দেশেই কোভিড রয়েছে। কোভিডের সংক্রমণের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’
সিম্পোজিয়ামে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু সালেহ আহমেদ, বারডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারিয়া আফসানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কানসালট্যান্ট মীর ইসারাকুজ্জামান একটি করে গবেষণা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে গবেষণা ফল প্রকাশ করেন অধ্যাপক মাসুদ ইকবাল।