চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় চংকিংয়ের পিপল হাসপাতাল। চীনে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের খবরের মধ্যে শুক্রবার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে যান এএফপির এক প্রতিবেদক। সেখানে রোগীর চাপে বারান্দাকে বানানো হয়েছে অস্থায়ী করোনা ওয়ার্ড।
হাসপাতালটিতে প্রতিরক্ষামূলক গিয়ারে থাকা এক কর্মী ‘মৃত, মৃত’ বলে চিল্লাতে চিল্লাতে এক নার্সের হাতে ডেথ সার্টিফিকেট বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
একটি কক্ষে প্রায় ৪০ জন বৃদ্ধ ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় ছিলেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ দিচ্ছিলেন কাশি।
হাসপাতালের এক নার্স এএফপিকে জানান, ওয়ার্ডের সবাই করোনা রোগী।
ওই কক্ষটির পাশেই নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) বিছানায় শুয়ে ছিলেন তিন রোগী।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগেও ৫০ জনের সারি দেখা যায়, যাদের মধ্যে অনেকে করোনা রোগী। সেখানে থাকা একজন জানান, তারা এক ঘণ্টার বেশি ধরে অপেক্ষা করছেন।
চংকিংয়ের আরেকটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও একই চিত্র দেখা যায়। সেখানে ৩০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস নিচ্ছিলেন, অনেকের হাতে পালস অক্সিমিটার লাগানো ছিল।
হাসপাতালটির এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও এক নার্স এএফপিকে জানান, সরকার করোনার বিধিনিষেধ শিথিলের পর প্রতিদিন বেশ কয়েকজন মারা যাচ্ছেন।
মৃত ব্যক্তিরা সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি হাসপাতালটির কর্মীরা।
এএফপির প্রতিবেদকের চোখে করোনাভাইরাসের যে চিত্র ধরা পড়েছে, তার সঙ্গে মিলছে না দেশটির সরকারের দেয়া মৃত্যুর হিসাব।
করোনাভাইরাসে মৃত্যুকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে চীন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, করোনায় মৃত্যুর তালিকায় তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যারা কোভিড পজিটিভ ছিলেন এবং শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন।
‘বেশির ভাগের মৃত্যু করোনায়’
এএফপির টিম বৃহস্পতিবার একটি সমাধি পরিদর্শন করে, যেখানে দুই ঘণ্টায় ৪০টি মরদেহ নামানো হয়। মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা জানান, তাদের বেশির ভাগের মৃত্যু হয় করোনায়।
এক নারী জানান, তার বৃদ্ধ আত্মীয় ঠান্ডাজনিত উপসর্গে ভুগছিলেন। তার করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে, কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ার পর সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় মৃত্যু হয়।
২০ বছর বয়সী আরেক নারীর শঙ্কা, তার বাবাও করোনায় মারা গেছেন, যদিও পরীক্ষা করানো হয়নি।