বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তরুণের দেহেও বাসা বাঁধছে ডায়াবেটিস

  •    
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:৪৪

তরুণ বা যুবকরা যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, সেটি লক্ষণে বোঝা যায় না প্রায় ক্ষেত্রেই। সাধারণত অন্য রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেটি। ডেঙ্গু বা করোনার চিকিৎসা বা বিদেশ যাত্রার আগে মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ছে রোগটি।

আধুনিক জীবনের নানা সুযোগ সুবিধা কায়িক পরিশ্রম কমিয়ে জীবনকে সহজসাধ্য করলেও তা তৈরি করছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। চিকিৎসকরা বলছেন, শুয়ে বসে থাকা, ফাস্ট ফুডে আসক্তি, খেলাধুলা না করাসহ নানা কারণে শিশু, কিশোর ও তরুণদের মধ্যেও ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে।

বয়স্কদের রোগ হিসেবে ধারণা থাকায় তরুণ বয়সে পরীক্ষা নিরীক্ষাও সেভাবে করা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পড়ছে রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে কম বয়সীরাও। এতে তরুণ রোগী পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যাটি তার চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডায়াবেটিস নিজেও যেমন শারীরিক নানা জটিলতার কারণ, সেই সঙ্গে এটির কারণে অন্য রোগও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে অন্য রোগ সারতেও দেরি হয়, যে কারণে রোগটি শনাক্ত করা জরুরি।

তাই রোগটি নিয়ে সচেতনতার তাগিদ দিয়ে বিশ্বজুড়েই একটি দিবস পালন করা হয়। ‘ডায়াবেটিস শিক্ষা, ভবিষ্যতের সুরক্ষা‘ প্রতিপাদ্য নিয়ে সোমবার নানা আয়োজন রাখা হয়েছে বাংলাদেশেও।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে সচেতনতার তাগিদ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, যুবক বয়সে এখন অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে সেভাবে দেখা যায়নি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রজিৎ প্ৰসাদ বলছেন, তারা যত রোগী যাচ্ছেন তাদের মধ্যে ১২ শতাংশের বেশি যুবক এবং তা বাড়ছে।

কারণ কী-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর কারণ যুবকরা এখন খেলাধুলা বা কায়িক শ্রম কম করে, তারা ফাস্টফুডে আসক্ত, সেই সঙ্গে মোবাইল, ইন্টারনেটে সময় কাটাচ্ছে বেশি।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহও একই কথা জানিয়েছেন। তিনিও জানান, এখন তরুণ ও যুবক বয়সে অনেক রোগী পাচ্ছেন তারা।

কারণ জানতে চাইলে তিনিও বলেন, ‘তরুণরা খেলাধুলা, শারীরিক পরিশ্রম করেন না, অলস জীবন যাপন, খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম, টেনশন-এগুলোর জন্যই রোগটি হতে পারে।’

তিনি আরও জানান, তরুণ বা যুবকরা যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, সেটি লক্ষণে বোঝা যায় না প্রায় ক্ষেত্রেই। সাধারণত অন্য রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেটি। ডেঙ্গু বা করোনার চিকিৎসা বা বিদেশ যাত্রার আগে মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ছে রোগটি।

একজন তরুণ কী লক্ষণে বুঝবেন তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত?

দেশবরেণ্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, ‘লক্ষণ বলতে তেমন কিছু নাই। অনেক সময় কিছুই বোঝা যায় না। এমনও হয় খুব খায়, কিন্তু ওজন কমে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে, অনেক সময় অনেক পিপাসা লাগে, ক্লান্তি অনুভব হয়।’

ঝুঁকির বাইরে নয় শিশুও

রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে সাড়ে ছয় বছর বয়সী একটি শিশুকে শারীরিক দুর্বলতা ও ঠান্ডার সমস্যা নিয়ে ভর্তির পর পরীক্ষায় প্রকাশ পেল সেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, এটা জন্ম থেকেই হয়েছে।

শিশুটির বাবা বলছেন, তার বাচ্চা আরও ছোট থেকেই একটু বেশি প্রস্রাব করত। কিন্তু সেটি যে ডায়াবেটিসের কারণে, তা বুঝতে পারেননি। হাসপাতালে আনার পর অবাক হয়েছেন তারা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রজিৎ প্ৰসাদ বলছেন, ‘আমরা মনে করি, ডায়াবেটিস বয়ষ্কদের হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ডায়াবেটিসের কয়েকটা ধরন আছে। এটি নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে বয়ষ্ক সবার হতে পারে। নবজাতকের যে ডায়াবেটিস হয়, তাকে বলা হয় নিউন্যাটাল ডায়াবেটিস। এটি সাধারণত জন্মের পর থেকে ছয় মাসের মধ্যে হয়ে থাকে। ছয় মাসের পর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত যে ধরন তাকে আমরা বলি টাইপ ওয়ান। এর পরের বয়স থেকে যেটা সেটা হলো টাইপ টু।’

শিশুদের মধ্যে ৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এর বাইরেও বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে যেটা গর্ভাবস্থায় হয়। এটি সাধারণত প্রেগন্যান্সির ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহে হয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি চলে যায় আবার কখনও কখনও তা সন্তান প্রসবের পর থেকেও যায়।

কীভাবে বোঝা যাবে সন্তান এই রোগে আক্রান্ত কি না

অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ বললেন, ‘ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা, অতিরিক্ত দুর্বলতা, মাথাব্যথা, খেলাধুলায় আগ্রহ থাকে না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যওয়া ইত্যাদি লক্ষ্মণ দেখা দেয় তারে মধ্যে।’

তিনি বলেন, ‘শিশুদের ক্ষেত্রে আগে নির্ণয় করতে হবে কোন টাইপ ডায়াবেটিস। টাইপ ওয়ান হলেও ইনসুলিন। যদি টাইপ-টু হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি বা খেলাধুলা করতে হবে।’

শিশুরা কেন এই রোগে আক্রান্ত হয়- এই প্রশ্নে তিনি বললেন, তাদের ক্ষেত্রে ছয় মাসের পর টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত হওয়ার কারণ অগ্ন্যাশয়ের বিটাসেল (যেখান থেকে ইনসুলিন তৈরি হয়) ধ্বংস হওয়া। এটা অটো ইমিউনিটির কারণে হয়। তাই প্রথম দুই বছর শিশুকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে।‘

ডায়াবেটিসের কারণ কী

চিকিৎসকদের মত প্রধানত বংশগত কারণে রোগটি হয়ে থাকে। মা বা বাবার যে কোনো একজনের ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানের ঝুঁকি থাকে ১০ শতাংশ। আর দুজনেরই থাকলে ঝুঁকি থাকে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে স্থূলতা। অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যারা স্লিম তাদের তুলনায় মোটা মানুষদের ঝুঁকি দশ গুণ বেশি।

স্ট্রেস বা মানসিক চাপও রোগটির একটি বড় কারণ। অতিরিক্ত মানসিক চাপে স্ট্রেস হরমোন তৈরি হয়। এই হরমোনগুলো বেশি তৈরি হলেও তা ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।

প্রয়োজনের চেয়ে কম ঘুমকেও বিপজ্জনক বলছেন চিকিৎসকরা। অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘অনেকেই অতিরিক্ত রাত জাগেন এবং সঠিক নিয়মে ঘুমান না। এতে তার ডায়াবেটিস হতে পারে।’

সুগার ফল হতে পারে বিপজ্জনক

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী অন্তত ৪২ কোটি ২০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এদের বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে বাস করে এবং প্রতি বছর ২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯ জনের মৃত্যু হয় সরাসরি ডায়াবেটিসের জন্য।

ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে অন্তত ১২ শতাংশ মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষের ডায়াবেটিস আছে।

ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৮ জন মানুষ ডায়াবেটিসে মারা যায়। এর প্রধান কারণ হার্ট অ্যাটাক। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের অন্য রোগীদের তুলনায় দুই থেকে চার গুণ বেশি আশঙ্কা থাকে হার্ট অ্যাটাকের।’

তাছাড়া হাইপোগ্লাইসেমিয়াতেও মানুষ মারা যায়। এটি সাধারণভাবে সুগার ফল বলে পরিচিত।

তিনি অরও বলেন, ‘অনেকেরই হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় যাকে আমরা বলি সুগার ফল করেছে। এ সময় অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা, ঘাম হওয়া, শরীর কাঁপতে থাকা, দুর্বল বোধ করা, মাথা ব্যথা হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা- এ রকম নানা লক্ষ্মণ দেখা দেয়।’

কেউ যদি ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন বেশি পরিমাণে গ্রহণ করেন অথবা সঠিক পরিমাণে খাবার না খান বা একেবারেই বাদ দেন, তাহলে তার সুগার ফল হতে পারে।

এটি প্রতিরোধের উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দিনে ছয় বেলা অল্প করে বার বার খেতে হবে। সঠিক নিয়মে হাঁটাহাঁটি করতে হবে। ওষুধ এবং ইনসুলিনের মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে এডজাস্ট করতে হবে।’

আবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সুগার অনেক বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস বিষক্রিয়া হয়ে অনেকে মারা যায়। ফলে আক্রান্তদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের মাত্রা পরীক্ষার পরামর্শও দেন চিকিৎসকরা।

প্রতিরোধে উপায়

চিকিৎসকদের মত হলো, ৮৫ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। বংশে রোগটির প্রকোপ থাকলেও কিছু নিয়ম এটি প্রতিরোধ করতে পারে।

এ ক্ষেত্রে:

১। প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট হাঁটতে হবে।

২। সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

৩। ২৪ ঘণ্টায় ছয় ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর