বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারে মৃত্যুর রেকর্ড

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২২ ২০:৫৬

কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘অন্য বছরের মতো এবার খুব দ্রুত ডেঙ্গু চলে যাবে না। তবে প্রেডিকশন বলছে, ১৫ দিন পর থেকে কমতে শুরু করবে। পুরোপুরি যাবে না, কিছুটা দুর্বল হবে।’

ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারে নাকাল নগরবাসী। একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সর্বশেষ ৫ জনের মৃত্যু মিলিয়ে ডেঙ্গুতে বছরে প্রাণহানি পৌঁছেছে ১৯২ জনে, যা নতুন রেকর্ড। কীটতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার দাপট ১৫ দিনের মধ্যে কমলেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে সময় লাগবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৮৯ জনের। সে সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।

তিন বছর আগের তুলনায় এখন রোগীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ। তারপরও মৃত্যু বেড়ে রেকর্ড ছাড়িয়েছে। অতীতে নভেম্বর মাসে ডেঙ্গুর বিস্তার ও মৃত্যুর ঘটনা ছিল বিরল। ঠিক যে সময়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা, সে সময়েই তা বাড়ছে দ্বিগুণ গতিতে। যার ফলে উদ্বেগ সর্বত্র।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৮৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে মারা গেছেন ৫ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯২ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৭৫ জন ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১৩ জন রোগী।

বর্তমানে সারা দেশে ৩ হাজার ২৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৯১৫ ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে আছেন ১ হাজার ৩৩৩ জন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৬ হাজার ৪৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩০ হাজার ৬৩২ ও ঢাকার বাইরে সারা দেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৫৪ জন।

পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর ডেঙ্গুতে অক্টোবর মাসে রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে। এক মাসে সারা দেশে ৮৬ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। নভেম্বরে প্রথম দশ দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। সে হিসেবে অক্টোবরের রেকর্ড ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

দেশে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয় ১৮৯ জনের। শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ছিল ০.১৮ শতাংশ।

২০২০ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৪০৫ জন, মৃত্যু হয় ৭ জনের। শনাক্তের বিপরীতে মৃত্যুর হার ছিল ০.৪৯ শতাংশ।

২০২১ সালে শনাক্ত বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৪২৯ জনে। মৃত্যু বেড়ে পৌঁছায় ১০৫ জনে। শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহার ছিল ০.৩৭ শতাংশ।

চলতি বছর রোগী শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার বেশি, যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

এত মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস প্রফেসর এ বি এম আব্দুল্লাহর বলেন ‘এবার মানুষ ডেন-থ্রি ধরনটিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুর যে কয়েকটি ধরন তার মধ্যে এটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আরেকটি কারণ হলো এবার যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগ আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। যার ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে।

‘ডেঙ্গুর কয়েকটি টাইপ আছে। একবার যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, পরেরবার অন্য টাইপে আক্রান্ত হলে তার জন্য লড়াই করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। অপরিচিত ধরন শরীরের অরগানকে সহজে দুর্বল করে দেয়।’

ডেঙ্গুতে যেসব শিশু ও নারীর মৃত্যু হয়েছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল বলে মনে করেন এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রধান কারণ রক্তের প্ল্যাটিলেট কমে যাওয়া, যে কারণে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। করোনার মতো এই ভাইরাসে আক্রান্তরাও যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যানসার, কিডনির মতো সমস্যায় ভোগেন, তাহলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইকরামুল হক বলেন, ‘প্রতিকূল আবহাওয়া এবং মানুষের সচেতনতা কম হওয়ায় আমরা এখনও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, আশা করি এই মাসের মাঝামাঝিতে আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘অন্য বছরের মতো এবার খুব দ্রুত ডেঙ্গু চলে যাবে না। তবে প্রেডিকশন বলছে, ১৫ দিন পর থেকে কমতে শুরু করবে। পুরোপুরি যাবে না, কিছুটা দুর্বল হবে।’

ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারে কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করেন এ কীটতত্ত্ববিদ। যার মধ্যে আছে জলবায়ুর পরিবর্তন, মানুষের শরীরে জীবাণুর বাসা, মশা জন্মানোর জন্য কিছু স্থায়ী জায়গা তৈরি হয়ে থাকা, ওয়াসার লাইনে লিকেজ থাকা, বাড়ির পার্কিংয়ে গাড়ি ধোয়াসহ বিভিন্ন বিষয়। অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থার কারণে মশার বংশবৃদ্ধির অনুকুল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

কবিরুল বাশার বলেন, ‘অনেকের ধারণা, এডিস মশা কামড়ানোর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। এডিস সব সময়ই কামড়ায়। প্রত্যেক প্রাণীর একটা অ্যাক্টিভ এবং ইনঅ্যাক্টিভ সময় আছে। তখন সে একেবারেই যে কাজ করে না, তা কিন্তু না। এডিস সাধারণত কিছু সময় একটু ইনঅ্যাক্টিভ থাকে। ভ্রান্ত ধারণায় অনেকে ভোর এবং বিকেল বাদে অন্য সময় অসতর্ক থাকেন। সে সময় এডিসের কামড়ে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারেন।’

এ বিভাগের আরো খবর