বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিনা মূল্যে ২২ কোটি টাকার চিকিৎসা পেল রাইয়ান

  •    
  • ৮ নভেম্বর, ২০২২ ০৯:২৪

নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে জিন থেরাপির চিকিৎসা এই প্রথম। তিন বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধটির আবিষ্কার ও সীমিত পরিসরে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি নোভার্টিসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তারা জানায়, লটারির মাধ্যমে প্রতি মাসে তারা দুটি ওষুধ বিনা মূল্যে দেবে। তারই একটি পেয়েছে শিশুটি।’

সাধারণ পরিবারের সন্তান রাইয়ান। বয়স দুই বছরও হয়নি। অথচ শিশুটি এমন এক রোগে আক্রান্ত, যার চিকিৎসা তিন বছর আগেও ছিল না। তবে সৌভাগ্যই বলতে হবে। রাইয়ান এই রোগের চিকিৎসা পেয়েছে বিনা মূল্যে, যে ওষুধটির দাম ২২ কোটি টাকা।

রাইয়ানের এই চিকিৎসার মধ্য দিয়ে দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি মাইলফলকও স্থাপিত হয়েছে। বিরল এক স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় রাজধানীর শ্যামলীর নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ২৩ মাস বয়সী এই শিশুকে দেয়া হয়েছে নব উদ্ভাবিত জিন থেরাপি। দেশের ইতিহাসে এমন চিকিৎসা এই প্রথম।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন সাফল্য নিয়ে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।

তিনি বলেন, “নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে রাইয়ান নামের এক শিশুকে নিয়ে আসা হয়। শিশুটি স্নায়ু রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি’-তে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এই রোগের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরল ঘটনা। কারণ তিন বছর আগেও এই রোগের কোনো চিকিৎসা দেশে ছিল না।”

ডা. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অ্যাক্টিভিটিগুলো ব্রেইন বা মস্তিষ্ক থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে যে স্নায়ু আমাদের হাত-পা ও মাংসপেশির কার্যক্রমের জন্য স্পাইনাল কর্ড থেকে আসে, সেটা জন্মগতভাবে ড্যামেজ থাকে।

‘এই রোগের কয়েকটি ধরন আছে। টাইপ ওয়ান, টাইপ টু, টাইপ থ্রি এবং টাইপ ফোর। টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত দুই বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যায়। টাইপ টু-এর ঝুঁকি তুলনামূলক কম। তবে এই রোগে আক্রান্তরাও বেশিদিন বাঁচে না।’

এই নিউরোলজিস্ট বলেন, ‘রাইয়ানের বয়স যখন সাত মাস তখন ওকে আমাদের কাছে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে আমরা ডায়াগনসিস করি যে শিশুটি স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফিতে আক্রান্ত। পরবর্তী সময়ে সেটাই ধরা পড়ে।

‘আমরা ভাবছিলাম শিশুটির জন্য কী করতে পারি, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রফেসর নারায়ণ সাহা জানতে পারেন জিন থেরাপি সম্পর্কে। আমরাও তখনই প্রথম জানতে পারি যে নোভার্টিজ নামে একটি কোম্পানি এটি আবিষ্কার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ২০১৯ সালে এটি অনুমোদন দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর চিকিৎসাও শুরু হয়েছে।’

ভাগ্যবান রাইয়ান

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি একটি জেনেটিক রোগ। টাইপ অনুযায়ী এই রোগ বিভিন্ন বয়সে হতে পারে। তবে শিশুকালেই সাধারণত এর উপস্থিতি বোঝা যায়। কারণ এই রোগের কারণে শিশুর নড়াচড়া ও স্বাভাবিক ডেভেলপমেন্ট সঠিকভাবে হয় না।

‘স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি রোগের চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে আমাদের মতো দেশে তা সবার ক্ষেত্রে সম্ভব না। তখন আমরা নোভার্টিজের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের জানায়, দরিদ্র রোগীদের জন্য প্রতি মাসে দুজনকে ওষুধটি তারা লটারির মাধ্যমে বিনা মূল্যে দেবে। আমরা নোভার্টিজকে বলি রাইয়ানের নামটা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।’

রাইয়ান সেই ভাগ্যবান যার নাম লটারির মাধ্যমে সিলেক্ট হয়। এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ওষুধটি বাংলাদেশে পৌঁছে। এই জিন থেরাপি দেয়ার পর শিশুটি ভালো আছে। কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া হয়নি।’

ব্যয় কত?

অধ্যাপক আরিফুল জানান, ওষুধটির দাম ২২ কোটি টাকা। এত বেশি দাম কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেকের মেধা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে ওষুধটি আবিষ্কার করা হয়েছে। এ জন্য অনেক রিসার্চ করতে হয়েছে। কয়েকটি ট্রায়ালের মাধ্যমে এই বিরল রোগের ওষুধটি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে।

ওষুধটি এখন‌ও সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না। যেকোনো ওষুধ যেগুলো ব্যাপক গবেষণার মধ্য দিয়ে আবিষ্কার হয় সেসবের দাম প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাভবিকভাবেই বেশি থাকে। তবে শুরুর দিকে এতটা ব্যয়বহুল হলেও ধীরে ধীরে দাম কমে আসবে আশা করা যায়।’

রাইয়ানকে চিকিৎসা দেয়া আরেকজন চিকিৎসক জোবায়দা পারভীন বলেন, ‘ইনজেকশনের মাধ্যমে রাইয়ানকে ২৫ অক্টোবর আমরা এই চিকিৎসা দেই। শিশুটি যে রোগ নিয়ে এসেছে, এ রকম লক্ষ্মণ দেখা দিলে শুরুতেই কোনো স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। অনেকে বুঝতে পারে না বলে দেরি করে ফেলে। এতে অবস্থা আরও জটিল হতে পারে।’

তিনিও জানান, এই জিন থেরাপি দেয়ার পর শিশু রাইয়ান এখন ভালো আছে।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেডে খেলছে রাইয়ান। স্বজনরা পাশে বসে ওকে দেখছেন।

শিশুটি এমন রোগে আক্রান্ত তা কীভাবে বুঝতে পারলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রাইয়ানের দাদি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম থেইকা নড়াচড়া কম কইর তো। ঘাড় শক্ত আছিল না। ডাক্তার যখন কইল চিকিৎসা নাই, তখন আমরা আশা ছাইড়া দিছিলাম। পরে এই লটারির কথা জোবায়দা আপা জানাইল।’

এখন কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি জানালেন, থেরাপি দেয়ার পর শিশুটি আগের চেয়ে ভালো আছে। নড়াচড়াও করছে বেশ ভালোভাবে।

এ বিভাগের আরো খবর