কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। অক্টোবরে রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। এক মাসে ৮৬ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে সারা দেশে। নভেম্বরেও এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা অক্টোবরের মাঝামাঝি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসার কথা বলেছিলেন। কিন্তু নভেম্বরেও এ রোগের প্রকোপ কমার লক্ষণ নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সব সময় ১০ শতাংশের নিচে ছিল। ইতিমধ্যে এই সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে বলে আশা করছি।’
শুরু থেকেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা একটা কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সমস্ত কার্যক্রম মনিটর করি। এটা একটা সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম। এখানে আমাদের মেয়র ফজলে নুর তাপস উপস্থিত থাকেন।
‘প্রতিটি ডেঙ্গু রোগীর বাড়ি ধরে চিরুণি অভিযান চালাচ্ছি। তা ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের যে রিপোর্ট দেয়া হয়, সে অনুযায়ী যে এলাকাগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, গত তিন সপ্তাহে একাধিকবার সেসব এলাকায় চিরুণি অভিযান চালিয়েছি। চিরুণি অভিযান হলো, যে ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়, সেটিকে দশভাগে ভাগ করে প্রতি ভাগে সকালে এডিস মশার লার্ভা মেরে ফেলা এবং ফগিংয়ের মাধ্যমে উড়ন্ত মশা মেরে ফেলা।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইকরামুল হক বলেন, ‘আবহাওয়াজনিত কারণ এবং মানুষের সচেতনতা কম হওয়ায় আমরা এখনও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, আশা করি এই মাসের মাঝামাঝিতে আমরা ডেংগু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘অন্যান্য বছরের মতো এবার হুট করে ডেঙ্গু চলে যাবে না। তবে প্রেডিকশন বলছে, ১৫ দিন পর থেকে কমতে শুরু করবে। পুরোপুরি যাবে না, কিছুটা দুর্বল হবে।
‘এর কয়েকটি কারণ রয়েছে: জলবায়ু পরিবর্তন, শরীরে জীবাণু বাসা বেঁধে যাওয়া, মশা জন্মানোর জন্য কিছু স্থায়ী জায়গা, ওয়াসার মিটারে লিকেজ থাকা, পার্কিংয়ের জায়গাগুলোতে গাড়ি ধোয়া, এডিস প্রজননের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা, অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা, জানা থাকা সত্ত্বেও মশার বংশবৃদ্ধির অনুকুল আচরণ করা।
তিনি বলেন, ‘এসব কারণে এডিস মশার বিস্তার প্রতিরোধ কঠিন হয়ে পড়ছে। আরেকটি কারণ হলো, অনেকেরই ধারণা, এডিস মশা ভোরে আর বিকালে কামড়ায়। কিন্তু এটি ভুল। এডিস সব সময়ই কামড়ায়। মানুষের মতো প্রত্যেক প্রাণীর একটা অ্যাক্টিভ এবং ইনঅ্যাক্টিভ সময় আছে। তখন সে একেবারেই যে কাজ করে না, তা কিন্তু না। এডিস সাধারণত কিছু সময় একটু ইনঅ্যাক্টিভ থাকে। তার মানে এটা না যে একেবারেই কামড়ায় না।
‘এই ধারণা থেকেও অনেকে ভোর এবং বিকেল বাদে অন্য সময় অসতর্ক থাকে। এতেও সে আক্রান্ত হতে পারে।'