করোনার দাপট কমে গেলেও একেবারে শেষ হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে এখন করোনার পঞ্চম ঢেউ চলছে। দেশে প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। টিকা কার্যক্রম পুরোদমে চালু রেখেছে সরকার। কিন্তু টিকা নেওয়ার লোক তেমন নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনটি ডোজের টিকার দুটি নেয়ার পর অনেকে তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ নিচ্ছেন না। কেননা করোনা ভীতি অনেকটা কেটে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত দেশে ৯৮ শতাংশ লোক করোনার দুটি ডোজ নিয়েছেন। বাকি ২ অংশকে টিকা দেয়ার জন্য কার্যক্রম চালু আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন করোনা পরীক্ষা করতেও কম লোক আসে। এলেও কারও মধ্যে আগের মতো উদ্বেগ দেখা যায় না।’
রাজধানীতে আইসিডিডিআরবির টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় যে টিকার বুথ ছিল সেটি বন্ধ। সেখানে কর্মরত একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে যারা টিকা নেননি তাদের জন্য নিচতলার বুথটি রাখা হয়েছিল। আর দ্বিতীয় তলায় যারা বিদেশে যাবেন তাদের জন্য।’
নিচের বুথ বন্ধ কেন জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, টিকা নিতে তেমন কেউ আসে না, তাই চলতি মাসে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ দিনে ৪-৫ জনের বেশি আসে না। এখন শুধু দ্বিতীয় তলায় দেশের এবং বিদেশগামী উভয়ের জন্যই একটি বুথ চালু আছে।
দ্বিতীয় তলায় গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। রুম প্রায় ফাঁকা। একজন টেকনিশিয়ান ছাড়া কেউ নেই। তিনি বলেন ‘বেশির ভাগই দুই ডোজ নিয়েছে। বুস্টার কিছু বাকি আছে। তাদের মধ্যে টিকা নিতে আসা লোকের সংখ্যা কম।’
শ্যামলীতে টিবি হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় দুই-তিনজনের একটি শীর্ণ লাইন। তাদের মধ্যে দু-একজন বুস্টার ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসেছেন। এত পরে এসেছেন কেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই টিকাগ্রহীতা বলেন, ‘তখন গর্ভবতী ছিলাম। আর বাচ্চা বুকের দুধ পান করায় দেয়া হয়নি।’
আরেকজন দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসেছেন। পরীক্ষার জন্য ব্যস্ততার কারণে টিকা নিতে দেরিতে এসেছেন বলে জানান। এ ছাড়া এনআইডিতে সমস্যা ছিল বলেও জানান তিনি।
এই বুথের সিনিয়র স্টাফ নার্স আতিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার যখন থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে, আমরা তখন থেকেই টিকা দিচ্ছি। শুরুতে সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। ঢাকার মধ্যে বেশির ভাগই নিয়ে নিয়েছে। যারা গ্রামের দিকে বা এখনও সচেতন না, তারাই আসছে না। বুস্টারের ক্ষেত্রেও যারা বিভিন্ন সমস্যার কারণে আগে নিতে পারেনি, তারা আসছে। তবে সংখ্যায় কম। এখন আমরা এসএমএস দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু টিকা নিতে আসছে না। আগের তুলনায় সংখ্যা অনেক কম।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খুরশিদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৯৮ শতাংশ মানুষকে করোনার দুই ডোজ দিয়েছি। ক্যাম্পেইনের সময় অনেকেই টিকা নিয়েছেন। কিন্তু বাকি ২ শতাংশ এবং বুস্টার ডোজের কিছু শতাংশ বাকি আছে। তারা টিকা কেন্দ্রে গিয়ে আগের মতো টিকা নিচ্ছেন না।’
সরকার আরও টিকা কিনবে বা সংগ্রহ করবে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমরা টিকা নিয়ে বসে আছি। এগুলোই শেষ হয়নি। সবাই দেয়ার পরও যদি টিকা আনতে হয়, তাহলে বুস্টার ডোজের জন্য আনতে হবে। সেটি ফাইজার ছাড়া আনব না। সবাই যেন বুস্টার নেয়, এই ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে আরও প্রচারনা দরকার।’
তবে করোনা নিয়ে তেমন উৎকণ্ঠা দেখা যায় না কারও মাঝেই। করোনার নাম এখনও মহামারির খাতায় রয়েছে। তবে মানুষের মাঝে সেই ভীতি নেই। দুটি ডোজ নিলেও বুস্টার নেয়ার আগ্রহ অনেক কম।
২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৮২৪ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৪১৯।
দেশে এখন করোনার পঞ্চম ঢেউ চলছে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে। মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে ওই বছরের ৪ অক্টোবর।
গত ২১ জানুয়ারি দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দেয়। প্রায় তিন মাস পর ১১ মার্চ তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ। চতুর্থ ঢেউ শেষে এখন করোনার পঞ্চম ঢেউ চলমান।