বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাটে ছালা বিছিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি

  •    
  • ২ নভেম্বর, ২০২২ ১৯:৪৩

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, হাটের মধ্যে বস্তা বা কাপড় বিছিয়ে বসে লাইসেন্স ছাড়াই বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করছেন হকাররা। আর এসব ওষুধ সস্তা দামে কিনতে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় খোলা দোকানগুলোতে।

কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাটবাজারে বিক্রি হওয়া ‘সর্বরোগের মহষৌধ’ এখন জেলার প্রান্তিক ও চরাঞ্চলবাসীর চিকিৎসার প্রধান ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব খোলাবাজারের হাটে অ্যান্টিবায়োটিক থেকে শুরু করে ভেষজ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে অনায়াসে।

জেলার সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাট বসে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার। শনিবার হাটে দেখা যায়, তাপস কুমার, সৈয়দ আলী, গোবিন্দ, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, মনির ইসলামসহ ১০-১২ জন ওষুধ ব্যবসায়ী হাটের মাঠে মধ্যে বস্তা বা কাপড় বিছিয়ে বসে লাইসেন্স ছাড়াই বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করছেন। আর এসব ওষুধ সস্তা দামে কিনতে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় খোলা দোকানগুলোতে।

নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের জাকিরের হাট এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী যাত্রাপুর হাটে বস্তায় বসে ওষুধের পসরা সাজিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক, যৌনশক্তি বর্ধক ও ব্যথানাশক ওষুধ বিক্রি করছেন। সেই সঙ্গে তিনি তেলাপকা নিধনের ওষুধও বিক্রি করছেন।

তিনি স্বীকার করেন তার ওষুধ বিক্রির কোনো লাইসেন্স নেই। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও নেই। জানান, পড়ালেখা তেমন করেননি। কুড়িগ্রাম থেকে কিনে এসব ওষুধ বিক্রি করছেন প্রায় ১০ বছর যাবৎ।

আরেক ওষুধ বিক্রেতা ঘোগাদহ ইউনিয়নের গোবিন্দ বলেন, ‘এই ওষুধ বিক্রি করতে কোনো লাইসেন্স লাগে না। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। সর্দি, কাশি, জ্বরে ওষুধ দেই। তবে বেশি হলে ডাক্তারের কাছে যেতে বলি। তবে মাঝে মধ্যে সিপ্রো-এজিথ্রোমাইসিনসহ কিছু ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হয় রোগীদের।’

‘সর্বরোগের মহাষৌধ’ মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রচার করছেন হকার আমিন আলী। বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচে গানে মানুষ জড়ো করে ‘ক্যালসিয়াম’ ট্যাবলেট বিক্রি করছেন। প্রতি এক পাতা ১০টি ট্যাবলেট ২০ টাকা।

পৌর এলাকার চানমারি গ্রামের মনির ইসলাম বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৫ বছর ভারতের আসামে গাছনা ওষুধের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। রসুনের রস, হরতকি, বিষমোরা, বিষলংসহ বিভিন্ন গাছগাছড়া দিয়ে আমি নিজেই আবিষ্কার করছি এই ওষুধ। এই ওষুধ শুধু মানবদেহের ব্যথা ও হার্টের কাজ করে। আমি কুড়িগ্রাম ও ঢাকায় এই ব্যবসা করি।’

একই এলাকার মোজাম আলী বলেন, ‘আমি যৌনশক্তি বৃদ্ধি এবং হাঁপানি রোগসহ ছয় ধরনের রোগের ওষুধ বিক্রি করি। আমার ওষুধের লেবেলে ট্রেড নাম্বার, প্রস্তুতকারক নাটোরের সালাম ভেষজ ঠিকানা, মোবাইল নাম্বারসহ দেয়া আছে।’

নাগেশ্বরী বাজারের আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমি প্রায় ৫০ বছর যাবৎ এই ব্যবসা করে আসছি। কোষ্ঠকাঠিন্য, পায়খানা কষা, এসিড-গ্যাস, পেটের ব্যথা, শরীর দুর্বল, মেহ, ঘন প্রসাব, এলার্জি, বাতের ব্যথা - এই ধরনের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। ইউনানি, ভেষজ, হামদর্দ, সাধনা, সান্তনাসহ বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করি। এছাড়া আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি গাছগাছালির ওষুধ দেই।’

‘দই খাওয়া চরের’ ক্রেতা সৈয়দ্দিন বলেন, ‘হাটের ডাক্তারের কাছে ২০ টাকা দিয়ে এলার্জির ওষুধ নিলাম। হাসপাতাল গেলে ১০০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়। তার চেয়ে হাটে ওষুধ পাই। এই ওষুধ দিয়ে খাইলে কিছু কাজ হয়, কিছু হয় না।’

ভগবতি চরের শুকুর আলী বলেন, ‘আমরা চরের মানুষ, বুঝছেন। অসুখ-বিসুখ হলে যাত্রাপুর হাটেই চিকিৎসা নেই। অসুখ বেশি হলে বাঁচপার ধরে না রোগী, তখন কুড়িগ্রাম নিয়া যাই।’

চর যাত্রাপুরের আবু বক্কর বলেন, ‘রোগী নিয়ে নৌকা, অটো ভাড়া এবং ডাক্তারের ভিজিট, টেস্ট করাতে খরচ হয় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। হাটের খোলা বাজারেই সব ওষুধ পাই কম দামে, সেখান থেকেই নেই। কিছু কাজ হয়, কিছু হয় না। হামার গরিব মানষের এটাই উপকার।’

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘খোলা আকাশের নিচে যেসব ওষুধ বিক্রি করা হয়, তা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাপমাত্রার কারণে এসব ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। কবিরাজি ওষুধ যেগুলো বিক্রি হয়, তার মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় না।

‘এসব ওষুধ খেলে মানুষের পাকস্থলি, ফুঁসফুস, লিভার, কিডনি, ক্যানসারসহ নানান অসুখের সৃষ্টি হয় মানবদেহে। এসব মানহীন ওষুধ বিক্রি বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ওষুধ প্রশাসনের নজরদারি বাড়িয়ে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার।’

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন মনজুর-এ-মুর্শেদ বলেন, ‘এই বিষয়গুলো ওষুধ প্রশাসনের দেখার কথা। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে অভিযান পরিচালনা করব।’

কুড়িগ্রাম ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক বি এম জাহিদ হায়দার বলেন, ‘মানহীন এসব ওষুধের কোনো লাইসেন্স কিংবা সঠিক কাগজপত্র নেই। নকল এবং ভেজাল। কিছুদিন আগে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করা হয়েছে। হাট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, পরবর্তিতে যেন এসব ওষুধ বিক্রি করতে না পারে।

‘কুড়িগ্রামের হাটগুলো সাধারণত বিকেলে বসে। এতে করে অভিযান পরিচালনা করাটাও সমস্যা তৈরি হয়। তারপরও আমরা হাট কর্তৃপক্ষের সাথে বসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’‌

এ বিভাগের আরো খবর