বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রক্তদানে এখনও বড় ঘাটতি, মরণোত্তর চক্ষুদান নাজুক

  •    
  • ২ নভেম্বর, ২০২২ ১০:০৯

দেশে বছরে প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। বিপরীতে সংগৃহ হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ ব্যাগ। অন্যদিকে নাজুক পর্যায়ে রয়েছে মরণোত্তর চক্ষুদান। দেশে বর্তমানে অন্ধত্বের শিকার ব্যক্তির সংখ্যা ৫ লাখ। বিপরীতে প্রতি বছর জোগান মাত্র ২০ থেকে ৩০টি কর্নিয়া।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একজন শিক্ষার্থীর বাবার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনে ১৯৭৭ সালের ২ নভেম্বর স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদেরের সহযোগিতা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানীর উদ্যোগে সে কর্মসূচিতে রক্তদান করেন মেডিক্যাল কলেজের ২৭ শিক্ষার্থী।

সন্ধানীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইদ্রিস আলী মঞ্জু সর্বপ্রথম রক্তদান করেন। আর নারীদের মধ্যে প্রথম রক্ত দেন মেডিক্যালের তৃতীয় বর্ষের হোসনে আরা লাকী। স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির শুরু সেই থেকে; দেশজুড়ে এখন যার বিস্তৃতি।

দিনটি স্মরণে প্রতি বছরের ২ নভেম্বর জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্ত ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস পালন করা হচ্ছে। ১৯৯৬ সাল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে।

স্বেচ্ছায় রক্তদান জোরদার হওয়ার পরও সংকট

দেশে বছরে প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। বিপরীতে সংগৃহীত হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ ব্যাগ। বর্তমানে সন্ধানী, বাঁধনের মতো বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্ত সংগ্রহ কার্যক্রম চালালেও বছরে প্রায় তিন লাখ ব্যাগ রক্তের ঘাটতি থাকে।

সংগৃহীত রক্তের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে। একজন রক্তদাতা রক্ত দেয়ার মাত্র দুই-এক দিনের মধ্যেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। একবার রক্ত দিলে শরীর থেকে যে আয়রনের ঘাটতি হয়, সেটিও পূরণ হয়ে যায় কয়েক দিনের মধ্যে।

সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি হাসিবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিনই আমাদের রক্তদান কর্মসূচি চলছে। আমরা পাঁচটি পরীক্ষা—সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ম্যালেরিয়া এবং এইচআইভি টেস্ট করে সব ঠিক থাকলে সেই রক্ত সংগ্রহ করি। এই টেস্ট ছাড়া কারও রক্ত নেয়া হয় না।’

তিনি জানান, সারা দেশে সন্ধানীর ৩৪টি ইউনিট রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রতিটি ইউনিটে ২০ থেকে ৩০ জন রক্তদান করেন।

হাসিবুল হক বলেন, ‘আমরা যে রক্ত সংগ্রহ করি, চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিটি হাসপাতালে প্রতিদিন সার্জারি হচ্ছে। প্রায় সব সার্জারিতেই রক্ত লাগে। আবার প্রায় সব থ্যালাসেমিয়া রোগীকে প্রতি মাসে রক্ত দিতে হয়। তারা সন্ধানীর দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘বিশেষ করে যে গ্রুপগুলো অর্থাৎ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত কম পাওয়া যায়। রক্তদানে মানুষের আগ্রহ রয়েছে, তবে চাহিদা অনুযায়ী রক্ত পাওয়ার সংখ্যা অনেক কম।’

বাঁধনের সভাপতি মো. নাহিদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ২৫ বছর ধরে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছি। এ পর্যন্ত ১০ লাখ মানুষের স্বেচ্ছায় দেয়া রক্ত সংগ্রহ করেছি এবং ২১ লাখ মানুষকে বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ জানিয়ে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের ৫৩টি জেলায় সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের ১৪২টি ইউনিট আছে। প্রতিটি ইউনিটে গড়ে প্রায় ২০০ জন স্বেচ্ছায় রক্ত দিচ্ছেন, তবে আমরা এখনও পুরোপুরি চাহিদা পূরণ করতে পারিনি।

‘নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত যাদের, তাদের একটি ডেটা আছে আমাদের কাছে। তা ছাড়া আমরা একটি অ্যাপ চালু করতে যাচ্ছি, যেখানে সব গ্রুপের তথ্য পাওয়া যাবে।’

অন্ধত্বের শিকার ৫ লাখ, বছরে কর্নিয়া মেলে ৩০টি

স্বেচ্ছায় রক্তদানে দেশ অনেকটা এগিয়ে গেলেও মরণোত্তর চক্ষুদান পরিস্থিতি নাজুক পর্যায়ে। মরণোত্তর চক্ষুদানকে উৎসাহ দিতে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা হয় সন্ধানী চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী জাতীয় চক্ষু ব্যাংক।

সংগঠনের সাবেক মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথম মরণোত্তর চক্ষুদান কর্মসূচি শুরু করে সন্ধানী। ১৯৮৪ সালের ২৫ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার একজন ডাক্তার হার্সন সিলভা বাংলাদেশে আসেন।

‘তিনি মরণোত্তর চক্ষুদানের বিষয়ে আন্দোলন করেছিলেন। ডা. হার্সনই প্রথম রংপুরের টুনটুনি নামের একটি মেয়ের চোখে কর্নিয়া সংযোজন করেন।’

শুরুর দিকের প্রায় দেড় দশক বেওয়ারিশ মরদেহ থেকেই মূলত কর্নিয়া সংগ্রহ করা হতো জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। ফলে তৈরি হয়েছে তীব্র সংকট।

ডা. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মৃত্যুর ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হয়। শুরুর দিকে বেওয়ারিশ লাশের দাবিদার পাওয়া যেত না। কারণ তখন প্রযুক্তি উন্নত ছিল না। এখন বেওয়ারিশ লাশ পাওয়ার সংখ্যা খুব কম।’

১৯৯৯ সালে প্রণীত ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন’-এ বেওয়ারিশ মৃতদেহ ঘোষণার সময়সীমা বাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টা করায় এ ধরনের মৃতদেহ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ আর সম্ভব হচ্ছে না বলেও তিনি জানান।

এই আইনের ৪ (গ) ধারায় বলা হয়, কোনো ব্যক্তির ব্রেন ডেথ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো দাবিদার না থাকলে ব্রেন ডেথ ঘোষণাকারী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব পালনকারী ব্যক্তি ধারা ৫ এর বিধান সাপেক্ষে দেহ হতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে সংযোজনের উদ্দেশ্যে বিযুক্ত করতে পারবেন।

এ ধরনের অবস্থায় মরণোত্তর চক্ষুদান কার্যক্রমের ওপর জোর দিয়ে ডা. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমাদের মূল যে বিষয়ে নজর দিতে হবে সেটি হলো মরণোত্তর চক্ষুদান করা ব্যক্তির মৃতদেহ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ। এই বিষয়ে আইনে অনুমতি রয়েছে। মৃত ব্যক্তির পরিবারের সহযোগিতায় এটির প্রচলন বাড়ানো সম্ভব।’

দেশে বর্তমানে অন্ধত্বের শিকার ব্যক্তি ৫ লাখ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর নতুন করে ৩০ হাজার এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে। অথচ প্রতি বছর আমরা মাত্র ২০ থেকে ৩০টি কর্নিয়া পাচ্ছি। তাও এর মধ্যে অনেক বিদেশ থেকে আনা হয়।

‘চাহিদার তুলনায় এটি একেবারেই অপ্রতুল। এভাবে চলতে থাকলে দেশে অন্ধত্ব দূর করতে ১০ হাজার বছর লেগে যাবে।’

সন্ধানী ১৯৮৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের মতো কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেছে বলেও জানান তিনি।

চক্ষুদানের পাশাপাশি মরণোত্তর দেহদানের ওপরও জোর দেন ডা. জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে উৎসাহিত করা গেলে একটি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অরগান নিয়ে আটজন মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।’

চোখে কর্নিয়া সংযোজন পরিস্থিতি জানতে চাইলে ধানমন্ডির বাংলাদেশ আই হসপিটালের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের মধ্যে আমাদের হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়। যেমন: আজই পাঁচটি করা হবে, তবে এগুলোর সবই আমেরিকা থেকে আনা।’

একটি কর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনতে প্রায় এক হাজার ডলার বা প্রায় এক লাখ টাকা লাগে বলে জানান ডা. আমিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের খরচসহ প্রায় দেড় লাখ টাকায় পুরো সংযোজন প্রক্রিয়া শেষ করা যায়।’

দেশে মরণোত্তর চক্ষুদান সেভাবে কার্যকর না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই চক্ষুদানের জন্য ফরম পূরণ করে যান, কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর কেউ যোগাযোগ করে না। এখানে পরিবারের একটি আবেগ কাজ করে। আবার অনেক সময় সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করাও সম্ভব হয় না।

‘এ ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হচ্ছে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। যেসব সংস্থা কাজ করছে তাদের প্রচারণা বাড়ানো। মনে রাখতে হবে, একটি মৃতদেহ থেকে আরেকটি প্রাণ বাঁচতে পারে। এটাও কিন্তু একটা আবেগের জায়গা। এটা মানুষকে বোঝাতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর