দেশে স্ট্রোকে মৃত্যু ক্রমাগত বাড়ছে। সঠিক সচেতনতা এবং সমন্বিত চিকিৎসা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে এই মৃত্যুঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি রোগীকে পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক দেশকাল সম্মেলনকক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে ‘স্ট্রোক প্রতিরোধ চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে সমন্বিত কার্যক্রমের গুরুত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
ইমপালা পেইন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কেয়ার, টিএমএসএস, পিএইচএফ ও বাংলাদেশ স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন গোলটেবিলের আয়োজন করে।
চলতি বছর স্ট্রোক সচেতনতায় প্রতিপাদ্য ‘মূল্যবান সময় বাঁচানোর গুরুত্ব'। এটাকে সামনে রেখে ২৯ অক্টোবর পালিত হবে এবারের বিশ্ব স্ট্রোক দিবস।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সাম্প্রতিক দেশকালের সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের ট্রাস্ট্রি কাউসার মাহমুদ।
গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ২০১৯ সালে দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৫ হাজার ৫০২ জন, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৩৬০ জনে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ২০১৮ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রতি হাজারে স্ট্রোক হচ্ছে ১১ দশমিক ৩৯ জনের। প্রায় ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে বাংলাদেশে। স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে ৭ গুণ বেশি। নারীর চেয়ে পুরুষের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। স্ট্রোকের প্রকোপ শহরের চেয়ে গ্রামে কিছুটা বেশি।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
দেশে স্ট্রোকের চিকিৎসার ব্যয় সম্পর্কে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম মোজাহেরুল হক বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য আমরা যে টাকা ব্যয় করি তা যদি ৬৩ শতাংশ নিজের পকেট থেকে দেই বাকি ৩৭ শতাংশ সরকার দেয়। তার মানে হলো এটি আমাদের সবার জন্য বোঝা। নিজেদের আয় থেকে ৬৩ শতাংশ শুধু চিকিৎসার জন্য ব্যয় করার সামর্থ্য সবার নেই।’
তিনি বলেন, ‘স্ট্রোকের চিকিৎসা ব্যয়বহুল বলার কারণ সরকারি যে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, সেটা স্ট্রোকের জন্য যথেষ্ট না। কারণ স্ট্রোক ডায়াগনসিস হওয়ার পর চিকিৎসা সবাই চালিয়ে নিতে পারে না। এই কারণে তাদের অনেকের মৃত্যু হয় অথবা বাকি জীবনের জন্য পরিবার অথবা সমাজের অথবা জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন টিএমএমএসের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে-আরা বেগম, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শিরাজী শাফিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ, বাংলাদেশ স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ট্রাস্টি ওসমান গণি, বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি ও বাংলাদেশ কাউন্সিল ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের পরিচালক ইয়াসমিন আরা ডলি প্রমুখ।