সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান কমিয়ে আনতে অবশেষে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন জানিয়েছেন, তারা ৫০০টি মডেল সেন্টারের আওতায় বছরে ১২ লাখ স্বাভাবিক ডেলিভারি করতে চান।
এসব মডেল সেন্টার ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু হয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা সেবা নিশ্চিতে দেয়া হবে প্রয়োজনীয় লোকবল। যারা ভালো কাজ করবে, তাদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থাও থাকবে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২২’ উপলক্ষে মডেল উন্নয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো উদ্বোধন করে এসব কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দেশে সিজার হচ্ছে প্রচুর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা না। কিন্তু আমাদের দেশে সিজারের মাধ্যমে প্রসব বেশি হচ্ছে।
‘আমরা যেটা করতে চাইছি, সেটা যদি করতে পারি, তাহলে ৯০ শতাংশের বেশি ডেলিভারি প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে যাবে। ঘরে আর ঝুঁকিপূর্ণ ডেলিভারি হবে না। ৫০০টি মডেল সেন্টারের আওতায় বছরে ১২ লাখ স্বাভাবিক ডেলিভারি করা সম্ভব।’
দেশে স্বাভাবিক প্রসবে জোর দিতে ৫০০ মডেল সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: নিউজবাংলা
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে প্রতিটি ইউনিয়নে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। এদের সিংহভাগই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এসব এলাকায় মা, নবজাতক ও শিশুমৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এবং সেবাকেন্দ্র থেকে ২৪ ঘণ্টা স্বাভাবিক প্রসবসেবা দিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন ৩ হাজার ৩৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে ৫০০টি কেন্দ্রকে প্রাথমিক পর্যায়ে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে। পরে সবগুলোকেই মডেল কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে।
প্রসবকালীন সেবাদানকারী হাসপাতালগুলোর করুণদশার চিত্রও উঠে আসে মন্ত্রীর বক্তব্যে। সেসব প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক সেবা না দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রায় চার হাজার ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার রয়েছে। কিন্তু সেখানে আট ঘণ্টা সার্ভিস দেয়া হয়। কিছু আবার জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু গর্ভকালীন এবং প্রসবসেবা ২৪ ঘণ্টাই প্রয়োজন হয়।’
শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আগে মায়েদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘শিশুদের ব্রেস্টফিডিং করাতে হবে। এতে মায়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এতে ব্রেস্ট ক্যানসার থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যায়। আর বুকের দুধ পান করলে শিশু সুষম পুষ্টি পায়।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমার কথা হলো মাতৃমৃত্যু কেন হবে? আমাদের নিশ্চিত করতে হবে একজন মা যেন সুষ্ঠুভাবে সন্তান প্রসব করতে পারেন।’
এই মডেল স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো উদ্বোধন করা হয় বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলের স্মরণে প্রথমবারের মতো পালিত শেখ রাসেল দিবসে।
এই বিষয়টির কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত যে একাধারে দুটি কাজ করতে পারছি। আজ বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন। তবে ওনার জন্মদিন যেমন আমাদের জন্য আনন্দের, তেমনি কষ্টের যে তাকে আমরা যেভাবে হারিয়েছি।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সাইফুল হাসান বাদল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।