পর্যটন শহর কক্সবাজার ও তার আশপাশের এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে ব্যাপকহারে। এই জেলায় মৃত্যুর সংখ্যাও হচ্ছে দীর্ঘ। জেলায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে।
এরই মধ্যে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলোকে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঢাকার পর ডেঙ্গু রোগীর হাব এখন কক্সবাজার।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১২ লাখ রোহিঙ্গার বসতি ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। গেল ৯ মাসে জেলায় ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৩ জন, যার মধ্যে ২৭ জনই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২২ জন, ক্যাম্পের হাসপাতালে ১০ ও বসতবাড়িতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সিট, মেঝেতে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের ছড়াছড়ি। আক্রান্তরা বলছেন, মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ তারা। জ্বর, মাথাব্যথাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৩০ জন। যেখানে রোহিঙ্গা আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮৬ জন।
বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, কুতুবদিয়া পাড়া, টেকপাড়া, সমিতিপাড়া, নুনিয়াছড়া, টেকনাফ উপজেলার কিছু এলাকা।
এ ছাড়া উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প-৪, ক্যাম্প-৩, ক্যাম্প ১/ইস্ট, ক্যাম্প-২৪, ২৬ ও ১১-কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় মূলত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অতিরিক্ত প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারকে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সমিতিপাড়ার মৎস্য ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুই দিন ধরে। তিনি জানান, প্রথমে জ্বর উঠলে স্বাভাবিক মনে হওয়ায় গুরুত্ব দেননি। যখন কয়েক দিন ধরে জ্বর বেড়েছে তখন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। তারপর ধরা পড়ে ডেঙ্গু।
মুদি দোকানি রহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়িক কাজে তিনি প্রতিদিন রাত করে বাড়ি ফেরেন। মশার কামড়কে তিনি স্বাভাবিকই মনে করেছিলেন। কিছুদিন পর জ্বর, কাশিতে আক্রান্ত হন। গা ব্যথা অতিরিক্তি হলে একপর্যায়ে তিনি বাসায় থাকতে না পেরে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে।
শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মাহিদুর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আমিসহ পরিবারের চারজনই আক্রান্ত। দুই সন্তানসহ এখন সবাই চিকিৎসা নিচ্ছি।’
ডেঙ্গু মশা নিধনে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মাসেই সদর হাসপাতালে ৪৯ জনসহ উপজেলা স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে ৩২৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু মশার উৎস এখন খুব বেশি।’
মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশ এই চিকিৎসক। প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে বাসায় চিকিৎসা না নিয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরে জমানো পানির পরিমাণ বেশি। সেখানকার মানুষজন এডিস মশা নিয়ে সচেতন নয়। তা ছাড়া পরিকল্পিতভাবে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার না হওয়ায় এর বড় কারণ। যার ফলে পানি জমে থাকছে। সেখান থেকেই মূলত ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এতসংখ্যক মানুষের এক সঙ্গে বসবাস, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে অতিরিক্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার। সেগুলো যেখানে সেখানে ফেলায় পানি জমছে। সেখান থেকে মশার উৎপাত বাড়ছে। এ সমস্ত এলাকা চিহ্নিত করে সচেতনতার কাজ চলছে। শিগগিরই এ সমস্যা সমাধানের পথে আসবে।’