সরকারি হাসপাতালের ‘রোগের’ সবই জানেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালের নাজুক পরিস্থিতি তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘জনগণের টাকায় এই সরকারি হাসপাতালগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, তাহলে জনগণের চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি থাকে কীভাবে?
সরকারের পাঠানো যন্ত্র বসিয়ে রাখা, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের ঠিকমতো অফিস না করা, রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘এগুলো মেনে নেয়া যাবে না।’
মন্ত্রী এও জানেন, কেবল ভালো ব্যবহারের অভাব ও নোংরা পরিবেশের কারণে হাজার হাজার মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যায়।
সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
গত দুই মাসে চট্টগ্রামের মেডিক্যাল কলেজ, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করে নানা দুর্বলতার বিষয়টি জেনেছেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অনেক টেস্টিং মেশিন কেনা হয়েছে, কিন্তু মেশিনগুলো হয় নষ্ট হয়েছে, না হয় মেশিন চালানোর লোক নেই।
‘অনেকেই আবার ঠিকমতো অফিস করেন না। হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয় না। হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন নয়। সময়ের কাজ সময় মতো হচ্ছে না। এগুলো তো মেনে নেয়া যাবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কেবল ভালো ব্যবহার ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে দেশ থেকে হাজারো মানুষ ভারত, সিংগাপুর বা থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যালের সভাকক্ষে চট্টগ্রামের সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্সদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। তিনি বিভাগের বিভাগের হাসপাতালগুলোর বিষয়ে নানা তথ্য জানতে চান।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মন্ত্রী নিজেই বলেন, ‘রাঙ্গামাটি মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্যসেবা এখনও সেভাবে কার্যকর হয়নি। এখানে লিডারশিপের অভাব। জমি সংক্রান্ত নানা সমস্যা ছিল সেখানে। তাই বলে সাত বছর তো লাগার কথা না। যে যেখানে আছেন সেখানকার দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের উন্নয়নে আরও কাজ করব। এখানে ইমার্জেন্সি সেন্টারে যথেষ্ট উন্নত যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে।’
গত কয়েক বছরে সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামোর অনেক উন্নতি হয়েছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা উপজেলা পর্যায়ে এটি বাড়াব।’
সভায় উপস্থিত বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সরকারি হাসপাতালগুলোকে ১০ শয্যা থেকে ৩১ শয্যায় উত্তীর্ণ করার ঘোষণাও দেন মন্ত্রী।
গত তিন বছরে দেশে ২০ হাজার নার্স নিয়োগ হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গত ২০ বছরেও তা হয়নি।’
এর আগে মন্ত্রী চট্টগ্রাম বিভাগীয় হাসপাতাল অফিস পরিদর্শন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উদবোধন করেন। এরপর তিনি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।