বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘জলাতঙ্কে মৃত্যু আর নয়’

  •    
  • ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১০:১০

জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। যদি কোন প্রাণী বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজী, শিয়াল কামড় বা আঁচড় দেয় সঙ্গে সঙ্গে সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ১৫ মিনিট ধুতে হবে। এরপর ঠিক সময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত হচ্ছে আজ। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জলাতঙ্ক: মৃত্যু আর নয়, সবার সঙ্গে সমন্বয়’। এতে জলাতঙ্ক, মৃত্যু ও সমন্বয় এ তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

জলাতঙ্ক প্রাচীনতম সংক্রামক রোগের একটি। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে পানিভীতি, আলোভীতি, বায়ুভীতি হলেও এর শেষ পরিণতি মৃত্যু। তবে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। যদি কোন প্রাণী বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজী, শিয়াল কামড় বা আঁচড় দেয় সঙ্গে সঙ্গে সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ১৫ মিনিট ধুতে হবে। এরপর ঠিক সময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংগঠনের পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে মৃত্যুর হার শূন্যে আনা সম্ভব।

জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কারক বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ১৮৯৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। তার প্রয়াণ দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০৭ সাল থেকে পৃথিবীব্যাপি বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশ সরকারের নানাবিধ স্বাস্থ্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ফলে জলাতঙ্ক রোগের সংক্রমণ কমে এসেছে। জুনোটিক ডিডিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর মাধ্যমে সারাদেশে জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল পর্যায়ে ৩০০টির বেশি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে।

এ ছাড়াও রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও ৫টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে জলাতঙ্কের আধুনিক চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এ সব কেন্দ্রগুলোতে কুকুর বা অন্যান্য প্রাণির কামড়/আঁচড়ের আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি বিনা মূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর প্রায় তিন লাখের বেশি জলাতঙ্ক সংক্রমণকারী প্রাণির কামড়/আঁচড়ের রোগীকে বিনা মূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা অনুসারে বর্তমানে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের পূর্ণ ডোজ (তিনটি ০, ৩ ও ৭ দিনে) এক সপ্তাহে দেয়ার ফলে রোগীদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সকল সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। যা দক্ষিণ এশিয়ায় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

এর পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাণিদেহে জলাতঙ্কের জীবাণু শনাক্তের কাজ করে চলেছে। এতে করে নির্দিষ্ট স্থানে এ রোগের উপস্থিতি ও প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করে মানুষ ও প্রাণিদেহে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর নির্ভর করে জলাতঙ্কের প্রধান উৎস কুকুরের মধ্যে ব্যাপকহারে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। ব্যাপকহারে কুকুরকে টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। সারাদেশে ইতিমধ্যে ৬৪টি জেলায় প্রথম রাউন্ড, ১৭টি জেলায় দ্বিতীয় রাউন্ড এবং ৬টি জেলায় তৃতীয় রাউন্ড ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে কুকুরকে প্রায় ২২ লাখ ৫১ হাজার ডোজ জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়েছে। যা মানুষ ও প্রাণিদেহে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম সামাজিক জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে লিফলেট, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন, ফেস্টুন, বিভিন্ন দিবস পালন, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, স্কুল প্রোগ্রাম, জনবার্তাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস ২০২২ কে সামনে রেখে দেশজুড়ে আলোচনা সভা, র‌্যালি, সেমিনারসহ নানাবিধ কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে।

‘মুজিববর্ষে স্বাস্থ্য খাত, এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ’ শ্লোগানকে সামনে রেখে জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম সব যুগোপযোগী কার্যক্রমের মাধ্যমে জলাতঙ্ক নির্মূলে এগিয়ে যাচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর