বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শয্যা আড়াই শ, রোগী কয়েক গুণ

  •    
  • ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৮:৫৯

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে হঠাৎ কেন রোগীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হচ্ছে, জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতাল হিসেবে অস্থায়ীভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে পাশের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং শেরপুরের রোগীরাও এখানে আসছেন সেবার জন্য।

জেলার ২৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল আড়াইশ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল। এক বছর ধরে প্রায় প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ রোগী ভর্তি থাকায় হাসপাতালটিতে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। হাসপাতালে আসা রোগীরা মেঝেতে ও বারান্দায় থাকছেন।

হঠাৎ কেন রোগীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হচ্ছে, তা জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতাল হিসেবে অস্থায়ীভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে জামালপুরের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং শেরপুরের রোগীরাও এখানে আসছেন সেবার জন্য।

রোগী ও তাদের স্বজনেরা বলছেন, হাসপাতালে কয়েকদিন ভর্তি থাকার পরেও পাওয়া যায় না বেড। শয্যার সংকট থাকায় হাসপাতালের বারান্দা ও মানুষের চলাচলের রাস্তায় থাকতে হয় তাদের। এক বেডে থাকতে হয় একাধিক রোগীকে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রোগী মশিউর রহমান বলেন, ‘আমি এখানে সাত দিন ধইরে ভর্তি। এখানে কোনো বেড নাই। নিচ থেকে পাটি নিয়ে আইসে থাকতে হয়। তাও অনেক সমস্যা। এক পাটির ভিতরে দুই তিন জন আইসে বইসে থাকে। ফ্লোর অনেক শক্ত। আমাদের থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।’

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আরেক রোগী সুজন মিয়া বলেন, ‘এখানে বেডের খুব সমস্যা। এক বিছানার মধ্যে দুই জন বইসে আছি। খুবই কষ্ট হয়ে গেছে। মন চাইলে একটু ভালো মতো শুইতে পারি না, বসতে পারি না। এইভাবে কি থাকা যায়?’

একজন রোগীর স্বজন মানিক মিয়া বলেন, ‘আমরা আসছি আমার নাতি নিয়ে। এই জায়গার পরিবেশ তেমন সুবিধাজনক না। দুর্গন্ধ, জায়গায় জায়গায় ময়লা-টয়লা ফালাই রাখছে। কোনায় কানায় হাবিজাবি রাখছে। সিট নাই। এডা সিটের মধ্যে দুইডা, তিনডা কইরে রোগী। এমন পরিবেশে চলতাছে। এই জায়গায় আইসে রোগী আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে ধীরগতি। অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় হাসপাতালে তৈরি হয়েছে নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশ। এতে আরো বিপাকে পড়েছে রোগীরা।

বকুল মিয়া নামে একজন রোগী বলেন, ‘প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেল আমি আসছি। আমার কোনো তথ্য, কোনো খোঁজখবর কেউ নেই নাই। ডাক্তারের কোনো সাজেশন পাওয়া যাইতাছে না। এদের তত্ত্বাবধান দুর্বলই। কোনো রোগীর তেমন তদারকি নাই। খুব কষ্টের মধ্যেই আছি।’

রোগীর স্বজন হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই জায়গার পরিবেশ অতো সুবিধাজনক হচ্ছে না। আর ডাক্তারও ঠিকঠাক মতো খোঁজখবর নিচ্ছে না। নার্সেরা ঠিকমতো খোঁজ নিচ্ছে না। আবার ডাক্তার রুমে ঠিকঠাক মতো থাকে না। এরকম অবস্থায় আছি আমরা। খুব সমস্যার মধ্যে আছি। আমরা গরীব মানুষ। তাই এই জায়গায় আসছি। টাকা থাকলে তো প্রাইভেট ডাক্তারের কাছেই যাইতাম।’

পেটের ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী শাওন মোল্লা বলেন, ‘এখানে কোনো পরিবেশও নাই। সাইডে কুকুর বইসে আছে, বিড়াল বইসে আছে। একটু যদি সরকার এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে হসপিটালের চিকিৎসার আরো উন্নয়ন হবে।’

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘আড়াইশ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে একশ শয্যার জনবল নিয়োগ দেয়া আছে। এর মধ্যেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই, নার্স নাই, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নাই। সব মিলিয়ে এ হাসপাতাল স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে একটি হযবরল অবস্থা। আমরা শিগগিরই আড়াইশ শয্যার জনবল নিয়োগ চাই।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, ‘আমাদের এই হাসপাতাল এখন অস্থায়ী শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের কারণে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। শুধু আমাদের জামালপুর না, পাশাপাশি কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং শেরপুরের সমস্ত রোগী আমাদের এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবার জন্য আসে। আমরা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী নিয়েও তাদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘রোগীদের ঠিকমতো জায়গা দেওয়াই এখন হাসপাতালের সবচেয়ে বড় সমস্যা। পাশাপাশি ডাক্তার, নার্সদের বসার রুম নেই। আমরা যদি এই আবাসনগত সমস্যার সমাধার করতে পারি, আমাদের হাসপাতালের ভবন যদি আরও সম্প্রসারিত হয়, তাহলে ইনশাল্লাহ আমরা এই রোগীদেরকে ভালো মানের সেবা দিতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর