বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডেঙ্গুর প্রকোপ ‘অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত’

  •    
  • ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১২:১৭

বর্ষায় পানি জমলে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের সমস্যা এবার হওয়ার কথা ছিল না। কারণ এবার বৃষ্টি ঝরেনি সেভাবে, জল জমাটের সমস্যাও ছিল না এ কারণে যে, যতখানি পানি ছিল, তা তীব্র রোদে শুকিয়ে গেছে অনায়াসে। এমন আবহাওয়াতেও ডেঙ্গুর বিস্তার কিন্তু থেমে নেই। বর্ষা শেষে শরতের দ্বিতীয় মাস আশ্বিনেও প্রতি দিন রোগীর চাপ হাসপাতালে, মৃত্যুও কম নয়।

দুই সপ্তাহ আগে রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জাকিয়া রহমান আক্রান্ত হন ডেঙ্গুতে। হাসপাতালে ছিলেন ছয় দিন। এখন সুস্থ, তবে ধকল রয়ে গেছে গায়ে।

নিউজবাংলাকে এই নারী বলেন, ‘বাসায় ছোট বাচ্চা থাকায় গাছ বা পানি জমে থাকার মতো কিছু ঘরে রাখি না। তবুও কীভাবে আক্রান্ত হলাম জানি না। খুব ভুগিয়েছে এবার। জ্বর, বমি থেকে শুরু করে প্লাটিলেট কমে প্রায় ২০ হাজার হয়ে যায়। অনেক কষ্টের পর সুস্থ হয়েছি।’

জাকিয়া সুস্থ হয়ে ফিরলেও অন্তত ৫০ জনের আর হাসপাতাল থেকে ফেরা হয়নি। প্রায় দিনই মৃত্যুর তথ্য আসছে, এর মধ্যে এক দিনে পাঁচজনের প্রাণও গেছে।

বর্ষায় পানি জমলে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের সমস্যা এবার হওয়ার কথা ছিল না। কারণ এবার বৃষ্টি ঝরেনি সেভাবে, জল জমাটের সমস্যাও ছিল না এ কারণে যে যতখানি পানি ছিল, তা তীব্র রোদে শুকিয়ে গেছে অনায়াসে।

এমন আবহাওয়ায়ও ডেঙ্গুর বিস্তার কিন্তু থেমে নেই। বর্ষা শেষে শরতের দ্বিতীয় মাস আশ্বিনেও প্রতি দিন রোগীর চাপ হাসপাতালে, মৃত্যুও কম নয়।ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করছেন- এমন একজন কীটতত্ত্ববিদ আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি আরও তিন সপ্তাহ থাকতে পারে।

কত রোগী

শনি থেকে রোববার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৪০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩০৯ জন এবং রাজধানীর বাইরের ১৩১ জন।

এই এক দিনে কোনো মৃত্যু না হলেও চলতি বছর প্রাণ হারিয়েছে ৫০ জন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও ভর্তি ১ হাজার ৬৫০ জন। এর মধ্যে ঢাকাতেই সংখ্যাটি ১ হাজার ২৯৬।

চলতি বছর ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮০ জন, এর মধ্যে রাজধানীর ১০ হাজার ৭৪৩ জন।

চলতি বছর কেবল মুগদা জেনারেল হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ১ হাজার ৪৪৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১৮ জন।

দেশের অন্য কোনো হাসপাতালে এত রোগী ভর্তি হয়নি। তবে মুগদা এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগ বা সিটি করপোরেশনের বিশেষ কোনো পদক্ষেপের কথা জানা যায়নি।

বরাবরের মতোই আক্রান্তদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আছে শিশু। রাজধানীর শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক মাহফুজ হাসান আল মামুন জানান, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী আসছে তাদের হাসপাতালে। সবার ভর্তি দরকার পড়ে না।

অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাব বলছে, এবার মোট ৪৫টি জেলায় রোগী পাওয়া গেছে। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ৫৮, তার আগের বছর ৬৪ জেলার প্রতিটিতে ছড়ায় রোগী। সে বছর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।

ঢাকার পর এবার রোগী বেশি কক্সবাজারে। এই পরিস্থিতির জন্য ঘনবসতিপূর্ণ রোহিঙ্গা শিবির ও তাদের অসচেতনতাকে দায়ী করা হচ্ছে।

প্রকোপ আর কত দিন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ে কাজ করছেন গত কয়েক বছর ধরে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, 'আমরা আগেই বলেছিলাম আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এখন মনে হচ্ছে এটি আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত থাকতে পারে।’

তিনি জানান, তাপমাত্রা, লেগরেইন ফল, (১৫ দিনের বৃষ্টি) আর্দ্রতা, ডেঙ্গু রোগীর ঘনত্বসহ কয়েকটি বিষয় বিশ্লেষণ করে একটি মডেলিং করে ডেঙ্গুর বিস্তার সম্পর্কে পূর্বানুমান করেন তারা।

অধ্যাপক কবিরুল বলেন, ‘পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, যদি হটস্পট ম্যানেজমেন্ট চালু করতে না পারি। হটস্পট ম্যানেজমেন্ট বলতে যেসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে সেখান থেকে রোগীর বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের বাড়ির আশপাশে ৫০০ গজের মধ্যে ফগিং করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলা। এতে যারা সুস্থ আছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে।’

বৃষ্টি কম থাকার পরও এবার প্রকোপ কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এডিস মশার জন্য বৃষ্টি বা বর্ষা হতে হবে- এমন কথা নাই। মাত্র দুই সেন্টিমিটার পানি সাত দিন জমে থাকলেই সেখানে লার্ভা জন্মাতে পারে।’

কী করছে নগর কর্তৃপক্ষ

এডিস মশার যে প্রকৃতি, তাতে এগুলোর জন্ম ও বংশবিস্তার প্রধানত মানুষের বাড়িঘর বা কার্নিশ অথবা ছাদে হয়ে থাকে। নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানিও একটি বড় সমস্যা তৈরি করছে এ কারণে যে প্রায়ই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা একটি বড় সময় ধরে কর্মস্থলে থাকে না। এই সময় এডিস মশা জন্ম নেয়।

নগর কর্তৃপক্ষ গত কয়েক বছর ধরে নগরবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি শাস্তির ব্যবস্থাও করছে। শাস্তি হিসেবে প্রধানত জরিমানা করা হচ্ছে, কোথাও কোথাও গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। এর মধ্যে আমরা ড্রোনের মাধ্যমে ছাদবাগানগুলো দেখছি। সেখানে পানি জমে থাকলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

ভবনের বাইরের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ড্রেন ও পানিতে নোভাল নিউরন ট্যাবলেট দিচ্ছি, যেটা তিন মাস পর্যন্ত এডিস লার্ভা জমতে দেয় না। এ ছাড়া গাপ্পি মাছ ছাড়া হচ্ছে, যেগুলো লার্ভা খেয়ে ফেলে। এ ছাড়া জনসচেতনতামূলক প্রচারণার জন্য মাঠে আমাদের লোক রয়েছে।’

এই কর্মকর্তার মূল্যায়ন হচ্ছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ এবার বেশ কম। তিনি বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল ২৮ হাজার। এ বছর সেই সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার।’

‘তবে এবার এই পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। তাই সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ করছি। কেউই বসে নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর