বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উচ্চ রক্তচাপের মূল বটিকা সচেতনতা

  •    
  • ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২০:৪৬

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। কিন্তু এসব রোগের অন্যতম কারণ যে উচ্চ রক্তচাপ, এদিকেই আমাদের নজর কম। শুধু বড় বড় হাসপাতাল দিয়ে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিস সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রতিরোধই এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকার উপযুক্ত উপায়।

বিশ্বে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। বাংলাদেশও উচ্চ রক্তচাপের নীরব মহামারির মধ্যে রয়েছে। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে শুধু ওষুধই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন নগর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জনসচেতনতা।

রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স কনফারেন্স রুমে বুধবার শেষ হওয়া দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় এমন তথ্য জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর সহায়তায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় আলোচকরা বলেছেন, উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে জনসচেতনতা ও চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধির জন্য দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে রক্তচাপ পরীক্ষা ও উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

উচ্চ রক্তচাপ কীরক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে যায় তাহলেই তা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মি.মি. পারদচাপ। রক্তচাপের মাত্রা দুটি ভিন্ন দিনে ১৪০/৯০ মি.মি. পারদচাপ বা তার বেশি হলে বুঝতে হবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। তবে বয়সভেদে রক্তচাপ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।

নীরব ঘাতকবাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। অথচ তারা জানেন না যে এই নীরব ঘাতক দেহে বাসা বেঁধেছে। উচ্চ রক্তচাপ অগোচরেই শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না। উচ্চ রক্তচাপের কারণে বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইল এবং হার্ট বিট অনিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রোক হতে পারে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স কনফারেন্স রুমে দুই দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

গবেষণা কী বলছেবাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে ২০১৮-এর তথ্য বলছে, দেশে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি পাঁচজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর ২১ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ওষুধ খেয়ে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন প্রতি সাতজনে একজনেরও কম।

গ্লোবাল বারডেন অফ ডিজিজ স্টাডি ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ। এখানে বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত সমস্যায় মারা যান, যার অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়, যার অর্ধেক হৃদরোগজনিত।

সবার আগে চাই সচেতনতাবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি বছর এক কোটির বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়। এই সংখ্যা সব সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি।

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। কিন্তু এসব রোগের অন্যতম কারণ যে উচ্চ রক্তচাপ, এদিকেই আমাদের নজর কম। শুধু বড় বড় হাসপাতাল দিয়ে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিস সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রতিরোধই এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকার উপযুক্ত উপায়।

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বলছেন- অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, তামাক ও মদ না খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

সরকারের পদক্ষেপউচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশ কিছু নীতি ও কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি নেই বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেন, বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করে সরকার দেশে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে ২৫ শতাংশ কমানোর জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সঠিক নিয়মে উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা, চিকিৎসাসেবা গ্রহণ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগ ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

সব হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রদান নিশ্চিত করতে এই খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে বলেও জানান তারা।

কর্মশালায় আলোচক ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনসিডি) ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অফ পাবলিক হেলথের সেন্টার ফর নন কমিউনিক্যাবল ডিজিজ অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা, জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মো. রূহুল কুদ্দুস, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের।

এ বিভাগের আরো খবর