বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশুরোগ ‘হ্যান্ড ফুট মাউথ’ নিয়ে উদ্বেগ

  •    
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৯:০২

ঢাকা শিশু হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রেজওয়ান সরোয়ার নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ শিশু এই রোগ নিয়ে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। এত বেশি রোগী এর আগে তারা পাননি।

গত সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস বন্ধ রেখে জীবাণুমুক্ত করার পর রাজধানীর ইস্কাটনের এজি চার্চ স্কুল প্রাক-প্রাথমিকে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে করোনাকালের মতো আবার অনলাইন ক্লাসে ফিরে গেছে।

এই সিদ্ধান্তের কারণ শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া একটি রোগ, যা সাধারণভাবে জলবসন্ত বলে ধরা হলেও সেটি আসলে সম্পূর্ণ অন্য একটি রোগ। এতে সাধারণত দেড় বছর বয়সী থেকে শুরু করে ছয় বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়।

জলবসন্তের মতোই এই রোগেও শিশুদের হাত-পা থেকে গোটা শরীর ফুসকুড়িতে ভরে যায়। তার ভেতরে থাকে আবার পানি। গায়ে জ্বর আসে, সেই সঙ্গে থাকে ব্যথা।

রোগটির নাম ‘হ্যান্ড ফুট মাউথ’। হাতে, মুখে ও পায়ে ফুসকুড়ি বেশি হয় বলেই এই নাম দেয়া হয়েছে।

কক্সেকিভাইরাস নামের একটি ভাইরাসের আক্রমণে এ রোগ হয়।

বেশ কয়েকজন শিশু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এজি চার্চ স্কুলটি শিশুদের আর শ্রেণিকক্ষে নিয়ে আসতে চাইছে না।

একজন শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়ে আক্রান্ত হয়েছে। তাই কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য আগে।’

ঢাকা শিশু হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রেজওয়ান সরোয়ার নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন শিশু এই রোগ নিয়ে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। এত বেশি রোগী এর আগে তারা পাননি।

অভিভাবকরা এই রোগ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তবে এই চিকিৎসক জানালেন, খুব বেশি উদ্বেগের কিছু নেই। এই রোগে তেমন কোনো জটিলতা হয় না। হাসপাতালে ভর্তিও নেয়া হয়নি কাউকে।

চিকিৎসক রেজওয়ান জানান, এই রোগে সাধারণত হাত, পায় ও মুখে বা মুখের ভেতরে জলবসন্তের মতো ফুসকুড়ি দেখা যায়। আকারে বড় হওয়ায় অভিভাবকরা ভয় পেয়ে যান।

ফুসকুড়ি হওয়ার আগে কারও এক দিন জ্বর থাকে, কারও জ্বর ওঠে না। অনেক বাচ্চা বলে ব্যথা হয়, অনেকে বলে চুলকায়। সে অনুযায়ী ওষুধ দেয়া হয়।

রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা তারিক আজিজ চৌধুরীর দুই বছর দুই মাস বয়সী সন্তান মিরাব মাহ্দী চৌধুরী পাঁচ দিন ভুগেছে।

তারিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাঁতের নিচে মাড়িতে, জিহ্বা, আলা জিহ্বায় ঘাঁ হয়েছিল। হাত, পায় ও কোমরের নিচের অংশেও ঘায়ের মতো হয়েছিল। সে প্রচণ্ড কাঁদত, কিছু খেতে পারত না, যাই খেয়েছে বমি করত। মায়ের দুধও টানতে পারেনি।

‘এ রকম বাচ্চার পাঁচ দিন ছিল। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়েছিল। একটা সিরাপ আর মুখের জ্বালা কমার জন্য একটা জেল দিয়েছিল। পরে ফুসকুড়ি ভালো হয়ে কালো হয়ে চামড়াটা উঠে গেছে।’

এই পাঁচ দিন শিশুটিকে সামলানো খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছিল বলে জানান তার বাবা। বলেন, ‘কারও কোলে থাকতে চায়নি। কেবল কাঁদত। প্রথম তিন দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমিয়েছে। সারাক্ষণ কাঁতরাচ্ছে আর প্রচণ্ড কান্নাকাটি করেছে। পানিও খেতে পারেনি।’

খাওয়াদাওয়ার কী অবস্থা ছিল- জানতে চাইলে তারিক আজিজ বলেন, ‘জোর করে কিছু খাইয়েছি। খাওয়ার পর আবার বমি করে ফেলে দিয়েছে। খুব কঠিন দিন গেছে।’

লক্ষণ কী

ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশুপুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ শফি আহমেদ মুয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, `হ্যান্ড ফুট মাউথের প্রাথমিক লক্ষ্মণ এক দিন বা দুই দিন জ্বর থাকে। ফুসকুড়ি উঠে যার ভেতরে পানি থাকে।’

জলবসন্ত থেকে পার্থক্য কীভাবে বোঝা যাবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জলবসন্তের সঙ্গে এর পার্থক্য হলো জলবসন্ত ছোট ছোট ফুসকুড়ি হয়, সারা শরীরে হতে পারে। আর হ্যান্ড ফুট মাউথ এর ফুসকুড়িগুলো বড় ও শক্ত হয়। আর শরীরের সুনির্দিষ্ট জায়গায় হয়।

এর চিকিৎসা কী- জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘জ্বর হলে মেডিসিন দেয়া হয়। চুলকালে ফুসকুড়ির জন্য লোকাল এন্টিবায়োটিক বা মলম দিয়ে থাকি।’

তিনি জানান, ৫ থেকে ৭ দিনেই রোগটি সেড়ে যায়। এতে কোনো মৃত্যুঝুঁকি বা বড় ধরনের কোনো জটিলতা নেই।

খাবার বা পোশাকের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, এ রকম কোনো বিধিনিষেধ নেই।

রোগটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ এটি ভীষণ ছোঁয়াচে। আর যেহেতু কম বয়সী শিশুরা আক্রান্ত হয় আর মুখের ভেতরে হলে খাবার খেতে সমস্যা হয়, তাই বাবা-মা ভীষণ উদ্বিগ্ন থাকেন।

শিশু বেশি ছোট বয়সী হলে তারা কথাও বলতে পারে না। ফলে তারা তাদের কষ্টের কথা বোঝাতেও পারে না।

প্রতিকার কী

চিকিৎসকরা জানান, আক্রান্ত শিশুর নাক, মুখ ও গলা থেকে নিঃসৃত লালা ও শ্লেষ্মা, আক্রান্তের শরীরে ফোস্কা এবং মল থেকেও এই রোগের ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

চিকিৎসক শফি আহমেদ মুয়াজ জানিয়েছেন, ঘরে একাধিক শিশু থাকলে যে শিশুর রোগটি হয়েছে, তাকে আইসোলেশন বা আলাদা করে ফেলতে হবে।

কোনো স্কুলে রোগটি দেখা দিলে সেই স্কুলে শিশুদের না পাঠানোর পরামর্শও এসেছে চিকিৎসকদের কাছ থেকে।

সেই সঙ্গে আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শ যেমন চুমু দেয়া বা জড়িয়ে ধরায় নিষেধ করছেন তারা। আক্রান্ত শিশুর জিনিসপত্র ধরলে বা ডায়াপার পাল্টে দিলে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয়ার পরামর্শও এসেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, সরাসরি স্পর্শের পাশাপাশি ভাইরাস রয়েছে এমন বস্তু ধরলেও হাতে নাক, মুখ ও চোখে স্পর্শের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়।

বাঁচতে হাঁচি-কাশি দেয়ার পরও সাবান না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পাশাপাশি শিশুদেরও হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

এ বিভাগের আরো খবর