বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জীবন যেভাবে বদলে গেল পুলিশ সুপারের

  •    
  • ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৪:১৩

প্রায় অচল হয়ে যাওয়ার অবস্থা থেকে সিআরপিতে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন ঢাকা জেলার সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। বৃহস্পতিবার ওই প্রতিষ্ঠানেই অতিথি হয়ে আসেন তিনি বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবসের অনুষ্ঠানে। শোনান তার জীবনের গল্প।

জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফলের জন্য যখন আশায় বুক বেঁধেছেন, তখনই তরুণ বয়সে আক্রান্ত হন জিবিএস নামে বিরল নিউরোলজিক্যাল রোগে। শরীরসহ হাত-পা নিষ্ক্রিয় হয়ে বিছানাই সম্বল হয় তার।

অনেক ঘুরে রোগ শনাক্তের পর জানতে পারেন সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) চিকিৎসা হয় বিরল এই রোগের। তিন মাস চিকিৎসা নেয়ার পর নিজের পায়ে ভর দিয়ে বিএসএসের ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। চাকরি হয়ে যায় বাংলাদেশ পুলিশ ক্যাডারে। এরপর প্রশিক্ষণের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরির পর যোগদান করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে।

প্রায় অচল হয়ে যাওয়ার অবস্থা থেকে সিআরপিতে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার গল্প শোনাচ্ছিলেন ঢাকা জেলার সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। ওই প্রতিষ্ঠানেই অতিথি হয়ে এসেছেন তিনি বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবসের অনুষ্ঠানে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে মো. আসাদুজ্জামান যখন এ গল্প বলছিলেন, তখনও কেউ বুঝতে পারেননি নিজের জীবনের গল্পই বলছেন তিনি। বক্তব্যের শেষে যখন বললেন, এই গল্প তার নিজের জীবনের, তখন সিআরপির পুরো রেডওয়ে হলরুম আমন্ত্রিতদের করতালিতে মুখর।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গতকাল সিআরপি থেকে আমাকে ফোন করেছিলেন যে আজকে এখানে প্রোগ্রাম আছে। সিআরপির নাম শুনেই আমি এখানে আসার জন্য সম্মত হই। এই সিআরপির সাথে আমার একটা প্রাণের সম্পর্ক আছে। জানতে পারি, ২০০৬ সাল থেকে এই ক্যাম্পাসে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।’

পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের গল্প

আসাদুজ্জামান নিজের নাম না বলে যে গল্প শোনান, সেটি এ রকম:

‘২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে এক ব্যক্তি জিবিএস রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই সময়টিতে তিনি বিসিএস পরীক্ষার রিটেন (লিখিত) কমপ্লিট করতে পেরেছিলেন। রিটেন শেষ হওয়ার পরেই তিনি এই জিবিএস রোগে আক্রান্ত হন।

‘জিবিএস রোগ হলে লোকে ফুল কলাপস হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কথাও বলতে পারে না। অনেকে ভেন্টিলেশনে চলে যায় এই রোগ হলে। যে ব্যক্তির কথা বলছি, তিনি এমনভাবে আক্রান্ত হলেন যে এক দিনের মধ্যেই বিছানায় শুয়ে পড়লেন।

‘দ্বিতীয় দিন বিছানা থেকে তার সমস্ত বডি মুভমেন্ট করতে পারছে না। লোকটি শুধু কথা বলতে পারেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতে শুরু করেন চিকিৎসার জন্য। শুরুতে চিকিৎসকেরা জানান, তার স্ট্রোক হয়েছে। তবে পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন জিবিএস নামে একটা রোগ আছে, আর সেই রোগ হলে পরবর্তীতে এ রকম হয়।

‘এরপর তিন মাস বিভিন্ন জায়গায় তিনি চিকিৎসা নিয়ে জানতে পারেন এইটার একমাত্র চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি। সেই ব্যক্তি চিকিৎসকদের কাছে জানতে চান, কোথায় গেলে এটার সবচেয়ে ভালো ট্রিটমেন্ট পাওয়া যাবে? তারা তখন পরামর্শ দেন পৃথিবীর কোথাও না গিয়ে আপনার দেশেই আছে সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা, আর সেটি সাভারে অবস্থিত। আপনি সেখানে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিন। দেখেন কীভাবে আপনি ট্রিটমেন্ট নিয়ে দ্রুততার সাথে সুস্থতা লাভ করেন।

‘কথামতো তিন মাস ওই ব্যক্তি সিআরপিতে ভর্তি থাকেন। এই তিন মাসের মধ্যে তাকে মোটামুটি হাঁটতে, দাঁড়াতে এবং কিছুটা হলেও দৈনন্দিন কাজকর্ম করানোর অবস্থায় নিয়ে যান সিআরপির চিকিৎসকেরা। ওই ব্যক্তি তখন তার বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নিতে যান। তখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। কাউকে ধরে বা সাপোর্ট নিয়ে উঠতে পারেন বা হাঁটতে পারেন।

‘গল্পটা অনেক বড় তাই আর বলছি না। ২০০৬ সালে ওই ব্যক্তি চাকরিতে যোগ দেন। এর পর থেকে তিনি আর কখনও এই জায়গায় (সিআরপি) আসেননি। কারণ তার মনে একটা আক্ষেপ ছিল। যে তিন মাস তিনি সিআরপিতে ছিলেন, এটি তার জীবন সম্পর্কে ধারণা বদলে দেয় এবং এই পরিস্থিতিতেই তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয় যোগদান করেন।

‘যখন যোগদান করেন তখনও তিনি চিন্তিত ছিলেন যে চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন কি না। সেই অবস্থাতেই তিনি ট্রেনিংয়ে যান। তার বাবা তাকে বলেছিলেন, এই ট্রেনিং তার জীবনে অনেক বড় উপকারী হবে। সেই ব্যক্তিটি আজ আপনাদের সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।'

পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি আসলে স্মৃতিচারণা করে একটু মোটিভেশনাল বক্তব্য দিলাম। আমার সেই তিন মাস সিআরপিতে যা দেখেছি, নতুনভাবে জীবন তৈরির গল্প আমি শিখেছি, অসময়ে মেঘ যখন আপনার জীবনে আসে, তখন সেই মেঘকে কীভাবে আপন করে নিয়ে জীবনের চলার পথ তৈরি করে নিতে হয়, সিআরপি নতুন জীবনের গল্প বা স্বপ্ন আপনাকে দেখাবে। স্যালুট টু ইউ। আমি সত্যিই আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।'

এ বিভাগের আরো খবর